চার্লি চ্যাপলিন। কিংবদন্তি অভিনেতা ও ফিল্মমেকার। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই কমেডিয়ানের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক

আমার প্রথম শর্ট ফিল্ম ‘কিড অটো রেস অ্যাট ভেনিস’। ১৯১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই শর্ট ফিল্মে অভিনয়ের আগ মুহূর্তে আমার মনে হলো, পরনে ব্যাগি প্যান্ট, পায়ে বড় আকারের জুতা পরে, মাথায় একটা ডার্ভি হ্যাট আর হাতে একটা ছড়ি নিয়ে দাঁড়ালে মন্দ হয় না! ব্যাগি প্যান্ট, কোট-টাই, ছোট হ্যাট আর ইয়া বড় জুতা– একেকটা জিনিস একেকটার সঙ্গে বড়ই বেখাপ্পা! যেই ভাবা সেই কাজ। দাঁড়িয়ে গেলাম ক্যামেরার সামনে। ব্যাস, এভাবেই জন্ম আজকের ‘লিটল ট্র্যাম্প’-এর। 
প্রথম অভিনয়
আমি প্রথম অভিনয় শুরু করি সেই এই টুকুন বয়সে। তখন কত ছিল বয়স? এই ধরুন ১৪ বছর। তখন শার্লক হোমস নাটকের একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে গেলাম। শো শেষ হতেই আমার ভাই সিডনি, যে কিনা তখন সস্তা দরের মিউজিক হলগুলোয় কমেডিয়ান হিসেবে কাজ করত, সে আমার সঙ্গে যোগ দেয়। ‘রিপেয়ার্স’ নামের একটি কমেডি শোতে জনৈক প্লামবারের সহকারীর চরিত্রে অভিনয় করি আমি। তা করতে গিয়ে মায়ের পুতুলনাচের অঙ্গভঙ্গিমা আর বাবার মদ্যপ অবস্থার আচার-আচরণকে মনে করার চেষ্টা করি। এমনি করে নিজস্ব একটা ক্লাউনিং টেকনিক আবিষ্কার করে ফেলি আমি। 
১৮ বছর বয়সে প্রধান চরিত্রে ডাক.

..
আমার বয়স যখন ১৮ বছর, তখন আমাকে ফ্রেড কার্নো ট্রুপের একটি কমেডির প্রধান চরিত্রটি করতে দেওয়া হয়। সেটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে, মঞ্চটি আচমকা ভয়ংকরভাবে কেঁপে ওঠে। ঠিক আমার মায়ের মতোই, আমিও কণ্ঠস্বর হারিয়ে ফেলি। সব অভিনেতাকেই সব চরিত্রে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। ফলে সিডনি আমাকে পরামর্শ দিল পুতুলনাচের মাতালটির চরিত্রে অভিনয় করতে। ‘অ্যা নাইট ইন অ্যান ইংলিশ মিউজিক হল’ নামের সেই একাঙ্কিকায় আমার অভিনয় দর্শকরা মুহূর্তেই ভীষণ পছন্দ করল।
যুক্তরাষ্ট্র সফর ও ১৫০ ডলারের চুক্তি
১৯১০ সালে আমরা জার্সি সিটি, ক্লিভল্যান্ড, সেন্ট লুইস, মেনেপোলিস, ক্যানসাস সিটি, বাট, বিলিংস ও ডেনভার- আমেরিকান জনবহুল এ অঞ্চলগুলোয় পারফর্ম করি। যুক্তরাষ্ট্রে আমার দ্বিতীয় ট্যুরটি হয়েছিল ১৯১২ সালে। এটিতে বেশ লাভবান হলাম আমি। মাতাল চরিত্রে আমার কমেডি অভিনয় ইতোমধ্যে দেখেছিলেন কিস্টন স্টুডিওর প্রধান ম্যাক সিনেট। তিনি আমাকে সপ্তাহে ১৫০ ডলার বেতনে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব দিলেন। তখনকার দিনে এটি বেশ বড় ধরনেরই বেতন ছিল। কার্নোর সঙ্গে ১৯১৩ সালে আমার চুক্তি শেষ হলে, ম্যাকের দলে লস অ্যাঞ্জেলেসে যোগ দিলাম। 
মায়ের পথ ধরে
আমার বাবা চার্লস চ্যাপলিন সিনিয়র। তিনি ছিলেন বিচিত্রানুষ্ঠানের একজন দক্ষ অভিনেতা। মদ্যপানের বদঅভ্যাস ছিল তাঁর। আমার বয়স যখন তিন বছর, বাবা তখন আমাদের ছেড়ে চলে যান। কেননা আমার মা প্রেমে পড়েছিলেন আরেক অভিনেতার। সে সূত্রে একটি পুত্র হয়েছিল মায়ের। আমাদের তিনজনের খরচ বহন করতে মা তখনও মঞ্চে গান গাওয়া অব্যাহত রেখেছিলেন। মা হান্নাহ চ্যাপলিন মিউজিক হলে গান গাইতেন। অভিনয়ও করতেন। আমাদের সঙ্গে আমার চার বছর বয়সী সৎ ভাই সিডনিও ছিল তখন। প্রতি রাতে নিজের সঙ্গে আমাদের দুই ভাইকেও মিউজিক হলে নিয়ে যেতেন মা। কেননা তখনও ডে-কেয়ার ব্যবস্থা চালু হয়নি। ১৯৮৪ সালের মাঝামাঝিতে, পারফর্ম করার সময় আচমকাই গানের কণ্ঠটি হারিয়ে ফেলেন মা। মুহূর্তেই রাগী দর্শকরা তাঁর দিকে এটা-ওটা ছুড়তে শুরু করে দেয়। বয়স আমার তখন পাঁচ বছর। এ ঘটনায় আমি এতটাই মুষড়ে পড়েছিলাম যে, আনমনেই দৌড়ে মঞ্চে উঠে পড়ি এবং মায়ের অসম্পন্ন গানটি গেয়ে দিই। দর্শকরা আমাকে পছন্দ করলেও, আমার মায়ের চাকরিটা চলে গেল। এভাবেই শেষ হয়ে গেল তাঁর মঞ্চ-ক্যারিয়ার। আমি সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, মায়ের ক্যারিয়ার শেষ হওয়া পথেই আমি ক্যারিয়ার গড়ব! 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ বন আম দ র আম র ম র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীদের প্রার্থনা

ময়মনসিংহের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা বন্ধের জন্য প্রার্থনা করেছে। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে নগরীর আবুল মনসুর সড়কে রোভার ভবনে জেলা তথ্য অফিস আয়োজিত ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায়’ অংশ নেওয়া অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আয়োজক ও অতিথিবর্গের সাথে এ দোয়ায় অংশ নেয়।

এ সময় একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার শিকার ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও পৃথিবীতে চলমান সকল যুদ্ধ, গণহত্যা বন্ধ ও বিশ্বশান্তি কামনা করে তারা।

ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল নিয়ে গঠিত মুক্তিযুদ্ধকালীন ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের অধীনে লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল একাত্তরের গণহত্যা ও ময়মনসিংহে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কবির হোসেন সরদার এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে জেলা পরিষদে এ ধরনের আয়োজন করতে তথ্য অফিসকে স্বাগত জানান।

ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অভ ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়ার নির্বাহী পরিচালক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার ছোট ভাই বিবেশ চন্দ্র রায় তার একাডেমির পক্ষ থেকে সভায় জহির রায়হানের বিখ্যাত প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ প্রদর্শন করেন।

তথ্য অফিসের পরিচালক মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদের সঞ্চালনায় সিনিয়র তথ্য অফিসার শেখ মো. শহীদুল ইসলাম, ফুলবাড়িয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও জেলা রোভার স্কাউটের সহকারী কমিশনার লিয়া আফরোজ, তথ্য অফিসের সহকারী পরিচালক আফসানা ফেরদৌস মিষ্টি আলোচনা সভায় অংশ নেন।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ