নিজের ভাষায় নিজের মুক্তির কথা বলতে চাই
Published: 22nd, February 2025 GMT
ভাষা আসলে মুক্তি। আর মুক্তির কোনো বাঁধাধরা নিয়ম হয় না। নিজের ভাষায় নিজের আর্তনাদের কথা, মুক্তির কথা আমরা বারবার বলতে চাই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সব জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষালাভের অধিকারসহ সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে ‘বহু ভাষার লহরী’ নামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বেশ কটি জাতিসত্তার সংগঠন যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর জন্য ইংরেজি তো বটেই, বাংলাও একটা ঔপনিবেশিক ভাষা। তিনি আরও বলেন, ‘ভাষাচর্চা সেই লোকটার জন্য সহজ নয়, যিনি নিজেই জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর জন্য আমরা একটা আরামদায়ক, নিষ্পত্তিমূলক এবং সহযোগিতাপূর্ণ সমাজ যাতে গড়ে তুলতে পারি, সেই আশা রাখি।’
সভায় সমতল জাতিসত্তার প্রতিনিধি সোমা ডুমরি বলেন, ‘ভাষা আমার কাছে আসলে মুক্তি। মুক্তির কোনো বাঁধাধরা নিয়ম হয় না। নিজের ভাষায় নিজের আর্তনাদের কথা, নিজের মুক্তির কথা আমরা বারবার বলতে চাই। কিন্তু প্রত্যেকটা নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর মতোই আমরা আমাদের আর্তনাদটা প্রকাশ করতে পারি না। যখন আমাদের আর্তনাদ প্রকাশ করতে চাই, বরাবরই আমাদের কিছু কটূক্তির মধ্যে পড়তে হয়।’
চা–বাগানের জাতিসত্তাগুলোর প্রতিনিধি মিখা পিরেগু বলেন, ‘আমরা নতুন রাষ্ট্রে শুনছি যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন বন্দোবস্ত নাকি হবে। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, চা–শ্রমিকেরা সেখানে থাকবেন কি না, অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষ সেখানে থাকবেন কি না। নাকি শুধু বাঙালিদের নিয়েই সেই নতুন বন্দোবস্ত হবে, তা আমরা জানতে চাই।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অঙ্কন চাকমা। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সাঁওতাল লিপিতে কি–বোর্ড নির্মাতা সমর সরণ, চাকমা ভাষার গবেষক পুলক জীবন খীসা।
পরে রাতে বিভিন্ন জাতিসত্তার গানের দল এবং নৃত্যের দলের নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিল। এর মধ্যে রয়েছে রে রে (গারো ব্যান্ড), হুল (সাঁওতাল ব্যান্ড), সংজোগার (পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহ—ত্রিপুরা, মারমা, বম খিয়াং সদস্যদের ব্যান্ড), তাগোল (চাকমা ব্যান্ড), মুন্ডা গানের দল। এ ছাড়া মাহালি ভাষার একক সংগীত ও মণিপুরি নৃত্যও পরিবেশন করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলের পর দুই আ.লীগ নেতার বাসায় হামলা
সিলেটে সকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করার পর বিকাল ও সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার এবং ছাত্রলীগের এক নেতারা বাসায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।
বুধবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিলেটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় বিকালে হামলা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায়ও হামলা চালানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীতে বিনোদনকেন্দ্রে হামলা, পুলিশসহ আহত ৭
রাঙ্গুনিয়ায় আহত আ.লীগ নেতার মৃত্যু
হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।
সিলেট নগরীর শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর (নাদেল) বাসভবনের ‘ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের কার্যালয়ে’ হামলা চালায় একদল মানুষ। তারা মিছিল নিয়ে তার বাসায় ঢুকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক তরুণ-যুবক গিয়ে এ হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালান। বাসাটিতে আনোয়ারুজ্জামানের পরিবারের কেউ থাকেন না। দুজন তত্ত্বাবধায়ক বাসার দেখাশোনা করেন।
মেজরটিলা এলাকায় অবস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তদের একটি দল। সন্ধ্যা সাতটায় রুহেলের বাসায় হামলার সময় তাঁর মা ও বোন বাসায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অবশ্য এসব হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বুধবার সকাল থেকে সিলেট নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাঠে নামে। তারা ভিডিওতে দেখা যাওয়া চার-পাঁচজন মিছিলকারীকে ধরে পুলিশে হাতে তুলে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। এতে ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।
এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাদেলের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, মিছিলকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।