চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ১২ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বহাল রেখে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা থেকে শেখ পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। 

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সহকারী প্রক্টরকে শারীরিক লাঞ্ছনার কারণে ১০ শিক্ষার্থী ও ধর্ম অবমাননার ঘটনায় ২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির এক সভায় বিভিন্ন মেয়াদে তাদের বহিষ্কার করা হয়। শনিবার সিন্ডিকেট সভায় তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, দুটি পৃথক ঘটনায় বহিষ্কার হওয়া ১২ জনকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীর সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে বহিষ্কারাদেশ বহাল থাকবে।

বিভিন্ন স্থাপনার নতুন নাম 

সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও স্থাপনার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নবনির্মিত ছাত্রদের আবাসিক ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ হলের নাম পরিবর্তন করে ৪ আগস্ট আন্দোলনে শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ‘মো.

ফরহাদ হোসেন’ হল করা হয়েছে। ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা’ হলের নতুন নাম এখন ‘বিজয় চব্বিশ’ হল। ছাত্রীদের আবাসিক ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ হলের নাম এখন থেকে ‘নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী’ হল। ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যানে’র নতুন নাম ‘জুলাই বিপ্লব উদ্যান’ এবং ‘শেখ কামাল জিমনেসিয়ামে’র নতুন নাম ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়াম’।

এছাড়াও দ্বিতীয় কলা অনুষদ ভবনের আগের নাম ছিল ‘সাবেক আবু ইউসুফ ভবন’। আবু ইউসুফ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ছিলেন। এই ভবনের নাম এখন থেকে আন্দোলনে শহীদ ‘হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবন’। অন্যদিকে পুরোনো শামসুন নাহার হলের জায়গায় ছাত্রদের জন্য নতুন একটি আবাসিক হল তৈরি করা হবে। এই হলের নাম হবে ‘ফজলুল কাদের চৌধুরী’ হল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ পরিবারে নামে থাকা স্থাপনাসহ কয়েকটি স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হল র ন

এছাড়াও পড়ুন:

সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ পেতে ৪০০ আবেদন, রয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরাও

চট্টগ্রাম নগরের সৌন্দর্যবর্ধন করতে আগ্রহী ৪০০ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। নগরের বিভিন্ন এলাকায় সৌন্দর্য বাড়াতে নানা ধরনের কাজ করতে চান তাঁরা। অবশ্য সৌন্দর্যবর্ধনের চেয়ে বাণিজ্যের প্রতি ঝোঁক বেশি তাঁদের। কোন প্রতিষ্ঠান কী ধরনের কাজ করতে চায়, তা জানিয়ে সিটি করপোরেশনের কাছে আবেদন ফরম জমা দিয়েছে। এখন তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।

সৌন্দর্যবর্ধন করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। তাঁদের ২০ থেকে ২৫টি প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আবেদন ফরম জমা দেওয়া যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তাও জানিয়েছেন, সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও দুটি এলাকায় কাজ করতে আবেদন করেছেন নগরের টাইগারপাস এলাকার যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদল করেন, এমন অন্তত ৫০ জন ফরম জমা দিয়েছেন এবার। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২০ জন তাঁর পরিচিত। ফরম জমা দিলেও কাজ পাবেন কি না, তা নিশ্চিত নন তিনি।

সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আছেন নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। তবে তিনি দাবি করেছেন, দলীয় পরিচয় নয়, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ অতীতে পেয়েছিলেন সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র ও প্রশাসকের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। মূলত সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের নামে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছিল। কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোরও নগরের সৌন্দর্য বাড়ানোর চেয়ে বাণিজ্যের দিকে ঝোঁক ছিল বেশি। এবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৬ সাল থেকে নগরের ৪১টি এলাকা সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ইজারা দেওয়া শুরু হয়। কাজ পাওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশ ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে, যুবলীগের নেতা, পরিবহন মালিক সমিতির নেতা ও সাংবাদিকের প্রতিষ্ঠান। এরপর ছয় মাসের জন্য প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের সময় নগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২টি জায়গা ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টিই পেয়েছিলেন প্রশাসকের ঘনিষ্ঠ দলীয় লোকজন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পটপরিবর্তনের পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনেও পরিবর্তন আসে। তৎকালীন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর আদালতের আদেশে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির নেতা শাহাদাত হোসেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য উদ্যোগ নেন।

মেয়রের এই পদক্ষেপের পর গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ওয়ার্ডভিত্তিক সৌন্দর্যবর্ধনের প্রস্তাব চেয়ে স্থানীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেয় সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন সড়কদ্বীপ, ফুটপাত, পদচারী-সেতু (ফুটওভার ব্রিজ), উড়ালসড়ক, পরিত্যক্ত খালি স্থান, উন্মুক্ত স্থান, জলাশয়ে সৌন্দর্যবর্ধন সবুজায়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।

সিটি করপোরেশনের বিজ্ঞপ্তির পর আগ্রহী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আবেদন জমা দিতে শুরু করেন। গত ৩০ জানুয়ারি আবেদনপত্রগুলো উন্মুক্ত করা হয়। এখন সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনা শাখা তা যাচাই-বাছাই করছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সিটি করপোরেশনের গঠিত আট সদস্যের একটি কমিটি।

নিজেরা না করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনীয় জনবল নেই। তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে। তারা নিজেরা সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করবে ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে।

সৌন্দর্যে নয়, লাভে আগ্রহ বেশি

সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রতিটি ওয়ার্ডকে সৌন্দর্যবর্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিলেও শুরুতে তা ভেস্তে যেতে বসেছে। করপোরেশনের নগর পরিকল্পনা শাখার তথ্য অনুযায়ী, নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯টিতেই কোনো আবেদন ফরম জমা পড়েনি। এগুলো হচ্ছে দক্ষিণ পাহাড়তলী, পাঁচলাইশ, পূর্ব বাকলিয়া, দক্ষিণ বাকলিয়া, দেওয়ান বাজার, পশ্চিম মাতারবাড়ী, পূর্ব মাতারবাড়ী, গোসাইলডাঙ্গা ও উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ডের গোসাইলডাঙ্গা ছাড়া অন্যগুলো শহরের প্রান্তিক এলাকায় অবস্থিত। সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনা শাখার এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসব ওয়ার্ডে বাণিজ্য করার সুযোগ কম। তাই বিনিয়োগ করলেও তাতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কম। হয়তো এ কারণে কেউ আবেদন করেননি।

তবে প্রান্তিক ওয়ার্ডগুলো আবেদন জমা না পড়লেও নগরের কেন্দ্রে থাকা ওয়ার্ডগুলোর চিত্র পুরো উল্টো। যেমন নগরের শুলকবহর ওয়ার্ডে আবেদন জমা পড়েছে সর্বোচ্চ ৪৩টি আর বাগমনিরাম ওয়ার্ডে ৩০টি। নগরের মূল সড়কখ্যাত সিডিএ অ্যাভিনিউ, আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক এ দুটি ওয়ার্ডে অবস্থিত। এ ছাড়া নগরের দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে আবেদন জমা পড়েছে ১৪টি। এখানে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত।

নগরের চকবাজার ওয়ার্ডে ১৩টি, জামালখান ওয়ার্ডে ১১টি, আলকরণ ওয়ার্ডে ১১টি, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ১২টি ফরম জমা পড়েছে।
নগরের ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করতে আগ্রহ জানিয়ে ফরম জমা দিয়েছেন মোস্তফা মো. জাবেদ নামের এক ব্যক্তি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাজ করতে চাইলেও অতীতে এ ধরনের কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই তাঁর।
আবেদনকারী ব্যক্তিরা সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নগরের বিভিন্ন এলাকায় আলোকায়ন, বাগান, গ্রন্থাগার, ম্যুরাল করার নকশা জমা দিয়েছেন। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে আয়ের জন্য এসব কাজের পাশাপাশি সেখানে যাত্রীছাউনি, দোকান, ছোট আকারের বিলবোর্ড করার কথা বলেছেন তাঁরা।

সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমর বলেন, সৌন্দর্যবর্ধন কাজে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আবেদন ফরমে সুনির্দিষ্ট ১৪টি তথ্য চেয়েছেন। এখন জমা পড়া ফরমগুলোর সব তথ্য ও নকশা প্রাথমিকভাবে যাচাই করছেন। পরে কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ