ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার দুটি ডিলার পয়েন্টে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ওএমএসের চাল কিনছেন ক্রেতারা। তারা দীর্ঘদিন ধরে আটার দাবি জানিয়েও না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভার বাঁকাইলে ও দুপুরে মিঠাপুর এলাকায় ডিলার পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতারা চাল কেনার আশায় জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বরাদ্দের থেকে চাহিদা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন ডিলাররা। চালের পাশাপাশি আটা না থাকায় স্থানীয়রা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তারা আটা বরাদ্দর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
চাল কিনতে আসা বাঁকাইল গ্রামের রাজমিস্ত্রি কামরুল ইসলাম বলেন, তিনি বেশ কিছু দিন ধরে এখান থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি করে চাল কেনেন। চালের মান বেশি ভালো না। ভাত খেতে অনেক কষ্ট হয়। তবু তারা নিরুপায়। কেননা মোটা চাল বাজারে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি।
একই গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক মনির হোসেনের স্ত্রী রিনিয়া বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর আগের মতো উপার্জন নেই। স্থানীয় এনজিওর ঋণের কিস্তি প্রতি সপ্তাহে পরিশোধ করতে হয়। বেশি টাকায় চাল কিনতে গেলে সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়ে। গত বছর আটা পেয়েছিলেন। আটার মান খারাপ হলেও খেতে সমস্যা হয় না। মোটা চালের ভাত খেতে কষ্ট হয়। তিনি সরকারের কাছে চালের পাশাপাশি আটা বরাদ্দের দাবি জানান।
মিঠাপুর গ্রামের দিনমজুর মহব্বত আলী দুপুর পৌনে ২টার দিকে ডিলার পয়েন্টে আসায় খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। তিনি আসার আগেই চাল শেষ হয়ে যায়। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিন চাল দেওয়া হয় না। তাই তাঁকে (আজ) রোববার আসতে বলা হয়েছে।
পৌরসভার বাসিন্দা নাছির মিয়া, বাশার শেখসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বাকি ৬টি ইউনিয়নে ওএমএসের চাল বিক্রি না করায় বাইরের লোকও এসব ডিলার পয়েন্ট থেকে চাল সংগ্রহ করেন। ফলে এসব পয়েন্টে অনেককেই চাল না পেয়ে ফিরে যেতে হয়। এসব ডিলার পয়েন্টে একসময় আটা বিক্রি হতো। এক বছর হলো কোনো আটা বরাদ্দ নেই। সব ক’টি ইউনিয়নে ওএমএসের ন্যায্যমূল্যে চাল ও আটা বিক্রয় কার্যক্রম চালুর দাবি জানান তারা।
প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ওএমএসের পাশাপাশি টিসিবির কার্যক্রমের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান স্থানীয়রা।
বাঁকাইল এলাকার ডিলার আনন্দ কুমার কুণ্ডু জানান, সরকার থেকে প্রতিদিন দেড় টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। অল্প সময়ের মধ্যে সেই চাল শেষ হয়ে যায়। অনেকেই খালি হাতে ফিরে যান। প্রায় সবাই আটা চান। বরাদ্দ না থাকায় আটা দিতে পারেন না বলে জানান তিনি।
আলফাডাঙ্গা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানাউল্লাহ সানি জানান, পৌরসভার তিনটি ডিলার পয়েন্ট থাকার কথা থাকলেও একটি বন্ধ রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে বাকি ডিলার পয়েন্ট চালু করা হবে। এখন ডিলারদের প্রতিদিন দেড় টন চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব চাল সরবরাহ করা হয় বছরে পাঁচ মাস। মার্চ-এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এর কার্যক্রম চলে। আলফাডাঙ্গা পৌরসভায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কার্ডধারী উপকারাভোগী রয়েছে। আটা বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ এলে সব ডিলার পয়েন্টে আটা সরবরাহ করা হবে বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ওএমএস র চ ল আলফ ড ঙ গ ওএমএস র প রসভ র বর দ দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইলিশ: দাম স্বাভাবিক, ক্রেতা কম
বাংলা নববর্ষ উদযাপনে পান্তা ইলিশের একটি রেওয়াজ আছে। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ এলে বাজারে ইলিশের চাহিদা ও দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এবার বাজারে বড় সাইজের ইলিশের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক থাকলেও ক্রেতা কম বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক কেজি বা একটু বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সুইটি রানী রাইজিংবিডিকে বলেন, “পয়লা বৈশাখে পান্তা ইলিশ না খেলে নববর্ষ উদযাপন হবে কী করে? তাই স্বামীকে নিয়ে ইলিশ নিতে এসেছি। এখানে ভালো মানের ইলিশ পাওয়া যায়। আমি এক কেজি ওজনের দুটি ইলিশ নিয়েছি। আমার কাছ থেকে চার হাজার টাকা রেখেছে। গত সপ্তাহেও এই দামে নিয়েছি।”
আরো পড়ুন:
কড়া নাড়ছে ঈদ, চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা
শেষ মুহূর্তে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা
সাজ্জাদুল ইসলাম নামের আরেকজন ক্রেতা রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের অফিসের জন্য ১৫ কেজি ইলিশ নিয়েছি। অফিসের সবাই ইলিশ দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করব। ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম রেখেছে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে। অন্য সময় হয়তো ১ হাজার ৫০০ তে পেতাম। তবে এখানকার মাছগুলো টাটকা।”
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছ কিনতে আসা কাইয়ুম মজুমদার রাইজিংবিডিকে বলেন, “এবার বাজারে অন্য বছরের তুলনায় ইলিশের দাম কম দেখলাম। বড় ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মধ্যে। কিন্তু যারা মধ্যবিত্ত রয়েছে তাদের পক্ষে এই দামেও ইলিশ কেনা সম্ভব না।”
কারওয়ান বাজারে সুজন মৎস্য আড়ৎ এর স্বত্বাধিকারী মো. সুজন সিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, “বাজারে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ সরবরাহ থাকার কারণে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশের দাম বাড়েনি। আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। নদীর ইলিশের চাহিদা বেশি। এখন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তবে আগে যেমন পয়লা বৈশাখে বাজারে ভিড় থাকত। এ বছর ভিড় দেখছি না, বিক্রিও কম।”
বাবুল মৎস্য আড়ৎ এর ইলিশ বিক্রেতা বাবুল মোল্লা রাইজিংবিডিকে বলেন, “এবার বাজারে ইলিশের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। এর অন্যতম কারণ বড় ইলিশ মাছের সরবরাহ ঠিক আছে।”
ঢাকা/রায়হান/সাইফ