মাদারীপুর সদর উপজেলায় এক কৃষকের ৭০০ ফলন্ত পেঁপে গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকের দাবি।
গত শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মাঠ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মাদারীপুর সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী কৃষক 
সবজাল খালাসী।
ভুক্তভোগী কৃষক জানান, আব্দুল মজিদ মাতুব্বরের ছেলে সান মাতুব্বরের কাছ থেকে ২০২১ সালে এক বিঘা জমি সাত বছরের জন্য বর্গা নেন তিনি। জমির মালিক সেই জমি বিক্রি করে দেন। পরে জমির অন্য ওয়ারিশরা জমিটি ক্রেতাকে হস্তান্তর করতে তাঁর (সবজাল) ফলন্ত পেঁপে বাগানের ৭০০ গাছ শুক্রবার সকালে কেটে ফেলে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এতে তাঁর প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। এ ঘটনায় তিনি একই গ্রামের জাহাঙ্গীর মাতুব্বার, সাদ্দাম মাতুব্বর, কোহিনূরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নিজের জমি দাবি করে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর মাতুব্বর বলেন, ৯ জন ওয়ারিশের সম্পত্তি একজনের কাছ থেকে বর্গা নেওয়া হয়েছে। বর্গার বিষয়টিতে জালিয়াতি রয়েছে। এ ছাড়া যে বর্গা দিয়েছে, তিনিও জমিটি বিক্রি করে দিয়েছেন। সেই জমি খালি করার জন্য অনেকবার বলা হলেও জায়গা খালি করে দেননি সবজাল। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি মোকসেদুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম দ র প র সদর ম ত ব বর এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদযাত্রায় বকশিসের নামে ৮৩২ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া আদায়

ঈদযাত্রায় বকশিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বাড়তি ভাড়ায় আদায় করছে গণপরিবহন ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট। শুধু রাজধানী ঢাকা ছাড়তেই দেড় কোটি যাত্রীকে বিশাল অঙ্কের এ টাকা গুনতে হবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (২৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির পক্ষ থেকে এ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

একই সঙ্গে ঈদযাত্রায় বকশিসের নামে এমন লুটপাট বন্ধে যাত্রীদের নিয়ে শক্তিশালী তদারকি টিম গঠনের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটি ৫০ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবেন। তাছাড়া ঈদবাজারসহ নানান প্রয়োজনে বিভিন্ন গণপরিবহনে বাড়তি ট্রিপ সম্পন্ন হবে। এসব যাত্রীর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী তৎপরতার মধ্যেও এবারে ঈদযাত্রায় কেবল ঢাকা ছাড়তেই ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার বাস-লঞ্চ ও বিভিন্ন গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে চালক, সহকারীর বেতন-ভাতা ও দুই ঈদের বোনাস প্রতিদিনের আদায়কৃত ভাড়ায় ধার্য থাকলেও দেশের কোনো পরিবহনে তা কার্যকর নেই। ফলে এবারের ঈদে ৯৮ শতাংশ গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সড়ক ও নৌপথের পরিবহন মালিকদের নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় মনিটরিং ভিজিল্যান্স টিম থাকলেও এসব টিমে যাত্রী প্রতিনিধি না রাখায় যাত্রীর স্বার্থ কেউ দেখছেন না।

সংগঠনের মহাসচিব বলেন, এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি যাত্রী নৌ-পথে পরিবহন হবে। ঢাকার সদরঘাট ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরসহ বিভিন্ন ঘাট দিয়ে ২০০টি ছোট-বড় নৌযানে প্রায় ৪০ লাখ যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। যাত্রীপ্রতি গড়ে ৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত শ্রেণিভেদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গড়ে যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া আদায় হলে ঈদের আগে এসব যাত্রীদের কাছ থেকে ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, প্যাডেলচালিত রিকশা ঈদ বকশিসের নামে যাত্রীপ্রতি গড়ে ২০ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় ৮ লাখ ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, প্যাডেলচালিত রিকশায় ৮ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। এসব যানবাহনে যাত্রীদের ১৬০ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। লেগুনা, দুরস্ত, দিগন্ত নানান নামে পরিচিত রাজধানীতে চলাচলকারী ৭ হাজার হিউম্যান হলারে ঈদের আগে প্রায় ৮০ লাখ ট্রিপ যাত্রীকে ঈদ বকশিসের নামে গড়ে প্রায় ২০ টাকা ভাড়া বাড়তি দিতে হবে। সেই হিসাবে ঢাকার হিউম্যান হলারেই কেবল ১৬ কোটি টাকার বেশি বাড়তি ভাড়া আদায় হবে।

‘‘প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রো বাস ২০ হাজার, যেখানে ৬০ হাজার ট্রিপে গড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সেই হিসাবে এ পরিবহন ব্যবহারকারী যাত্রীদের ২১ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।’’

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার রুটে বাস-মিনিবাসে ৩০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াতে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৩০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সেই হিসাবে দূরপাল্লার রুটে বাস-মিনিবাসের যাত্রীদের ৯০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে।

‘‘প্রতি বছর ঈদে ঢাকা মহানগরীতে চলাচলকারী সিটি বাস সার্ভিসগুলো ঈদের ২ দিন আগে থেকে যে কোনো গন্তব্যে গেলে ঈদ বকশিসের নামে ৫০ টাকা হারে যাত্রীর মাথাপিছু ভাড়া আদায় করে থাকে। এবারও ঈদের আগের দুদিনে ঢাকার ৩ হাজার সিটি বাসে ৪০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর কাছ থেকে গড়ে মাথাপিছু ৩০ টাকা হারে বাড়তি নিলে এ খাতে ১২ কোটি টাকা যাত্রীদের বাড়তি গুনতে হবে।’’

পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ঈদে ট্রেনের ছাদে যাত্রী পরিবহন ঠেকাতে নানান ব্যবস্থা গ্রহণের পরও বিপুলসংখ্যক নিম্নআয়ের লোকজন কম খরচে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে যাত্রী হিসেবে ভ্রমণ করে থাকে। এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ৮০ হাজার যাত্রী ট্রেনের ছাদে করে বাড়ি যাবে। তাদের প্রত্যেককে গড়ে কমপক্ষে ১০০ টাকা হারে ৮০ লাখ টাকা রেলে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হবে। খাবার গাড়ি, ইঞ্জিন, দুই বগির মাঝে, কোচের ভেতরে বিনাটিকিটে যাতায়াত করবে আরও প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী। ট্রেনে কর্মরত টিটিই, গার্ড, সরকারি-বেসরকারি স্টুয়ার্ড, বেসরকারি ক্যান্টিন অপারেটরের লোকজন, ট্রেনে দায়িত্বরত জিআরপি, এনআরবি ও স্টেশনে দায়িত্বরত টিকিট চেকারদের যাত্রী প্রতি গড়ে ৩০০ টাকা হারে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে।

মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আকাশপথে সরকারি-বেসরকারি উড়োজাহাজে ঈদের ১০ দিন আগে থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মহোৎসব চলছে। কোনো কোনো পথে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে। এ ঈদে কমপক্ষে এক লাখ যাত্রী অভ্যন্তরীণ রুটে আকাশপথ ব্যবহারে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নিলে ৩৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ঢাকা শহরে অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ও ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদযাত্রায় কেবল ৮৩২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বেশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে। আন্তঃজেলাসহ সারাদেশে সব মহানগর হিসাবে আনলে তা আরও ১০ গুন বাড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আহমদ, অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, মোহাম্মদ আরিফ প্রমুখ।

ঢাকা/মামুন/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ