রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদ ফকির। সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালান। চোখের সমস্যার কারণে ভালোভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। অর্থাভাবে যেতে পারছিলেন না চিকিৎসকের কাছেও। সম্প্রতি জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের কথা জানতে পারেন। সেখানে গিয়ে খুব কম খরচে চিকিৎসা করিয়ে এখন তিনি ঠিকঠাক চোখে দেখতে পারছেন।
এভাবেই নদীতীরবর্তী আর দুর্গম এলাকার মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছে ‘ইমপ্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতাল’। হাসপাতালটি এখন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর মৌলভীঘাটে অবস্থান করছে। এ হাসপাতালে অত্যন্ত কম খরচে চিকিৎসাসেবা পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ।
মাহমুদ ফকির জানান, তাঁর চোখের সমস্যার কারণে অনেক দিন ধরে ঠিকমতো কাজ করতে পারছিলেন না। তাঁর ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। মাথাব্যথার কারণে তাঁর ছেলের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছিল। বাবা-ছেলে দু’জনই জীবনতরী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক দেখিয়েছেন। টিকিট, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব মিলিয়ে দু’জনের খরচ হয়েছে মাত্র তিনশ টাকা। এত কম খরচে ভালো চিকিৎসা পেয়ে খুশি তিনি।
জীবনতরী হাসপাতাল সূত্র জানায়, ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে জীবনতরী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ২৫ বছরে দেশের প্রায় ৫০টি জেলা ভ্রমণ করেছে হাসপতালটি। মূলত প্রান্তিক বা পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর সেবা দেওয়াই এর মূল লক্ষ্য। মাত্র ৫০ টাকা টিকিট কেটে যে কেউ চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন। হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা ও ছানি অপারেশন, রোগীর চাহিদা অনুযায়ী লেন্স সংযোজন ও ফ্যাকো সার্জারি, নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসা ও অপারেশন করা হয়। এছাড়া জন্মগত বাঁকা-পা, ঠোঁট কাটা ও তালুকাটা রোগের অপারেশন, অর্থপেডিক সমস্যাজনিত শারীরিক ব্যথা, মাজাব্যথা, মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়। তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চারজন নার্সসহ মোট ৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী হাসপাতালটিতে কর্মরত। শুক্রবার বাদে সপ্তাহের ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেওয়া হয় চিকিৎসাসেবা। গত ১ জানুয়ারি থেকে রাজবাড়ীতে অবস্থান করছে হাসপাতালটি। মার্চ মাসজুড়ে বা এর চেয়ে বেশি দিন এটি এখানে থাকছে বলে জানা গেছে।
গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সোনাকান্দর মৌলভীঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, নোঙর করে রাখা হয়েছে আকাশি-সাদা রঙের তিনতলা হাসপাতালটি। নদীতীর থেকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বালুর বস্তা ও বাঁশের মাচা দিয়ে রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। রোগীরা যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। নদীর পারে রয়েছে টিকিট কাউন্টার। এ সময় কথা হয় ধুঞ্চি গ্রামের বাসিন্দা শাহেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছেন। চোখে কম দেখেন। কোরআন তেলাওয়াত করতে অসুবিধা হয়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। এখানে কমমূল্যে চিকিৎসার কথা শুনে এসেছেন। ৫০ টাকা টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখিয়েছেন। খুব যত্ন নিয়ে তাঁর চোখ দেখেছেন তারা। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছেন। এখানে চিকিৎসা পেয়ে সন্তুষ্ট তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম, রাকিবুল হোসেনসহ অনেকেই জানান, দুর্গম চরের মানুষ সব সময় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। জীবনতরী হাসপাতাল তাদের এলাকাতে আসায় মানুষের অনেক উপকার হয়েছে। যতদিন থাকবে ততদিন তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের কাছে শুনেছেন হাসপাতালটিতে ভালো চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।
জীবনতরী হাসপাতালের প্রশাসক চিকিৎসক একেএম সহিদুল হক বলেন, হাসপাতালটিতে দিনে গড়ে ৭০–৮০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। মূলত মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্যই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে অত্যন্ত কম মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়ে থাকে। মাত্র চার হাজার টাকায় জটিল সব অপারেশন করা হচ্ছে। নদ-নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ বেশির ভাগই তুলনামূলক দরিদ্র হয়। তাদের পক্ষে বেশি টাকা খরচ করে শহরে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা নেওয়া কঠিন। তাই তাদের সুবিধার্থে ২৫ বছর ধরে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। যে এলাকায় যান সেখানে সাধারণত দুই থেকে ছয় মাস অবস্থান করে তারা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন। রাজবাড়ীতে তিন মাস বা তারও বেশি সময় অবস্থান করতে পারেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গরিবের ভরসা ইমপ্যাক্ট জীবনতরী
রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদ ফকির। সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালান। চোখের সমস্যার কারণে ভালোভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। অর্থাভাবে যেতে পারছিলেন না চিকিৎসকের কাছেও। সম্প্রতি জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের কথা জানতে পারেন। সেখানে গিয়ে খুব কম খরচে চিকিৎসা করিয়ে এখন তিনি ঠিকঠাক চোখে দেখতে পারছেন।
এভাবেই নদীতীরবর্তী আর দুর্গম এলাকার মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছে ‘ইমপ্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতাল’। হাসপাতালটি এখন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর মৌলভীঘাটে অবস্থান করছে। এ হাসপাতালে অত্যন্ত কম খরচে চিকিৎসাসেবা পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ।
মাহমুদ ফকির জানান, তাঁর চোখের সমস্যার কারণে অনেক দিন ধরে ঠিকমতো কাজ করতে পারছিলেন না। তাঁর ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। মাথাব্যথার কারণে তাঁর ছেলের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছিল। বাবা-ছেলে দু’জনই জীবনতরী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক দেখিয়েছেন। টিকিট, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব মিলিয়ে দু’জনের খরচ হয়েছে মাত্র তিনশ টাকা। এত কম খরচে ভালো চিকিৎসা পেয়ে খুশি তিনি।
জীবনতরী হাসপাতাল সূত্র জানায়, ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে জীবনতরী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ২৫ বছরে দেশের প্রায় ৫০টি জেলা ভ্রমণ করেছে হাসপতালটি। মূলত প্রান্তিক বা পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর সেবা দেওয়াই এর মূল লক্ষ্য। মাত্র ৫০ টাকা টিকিট কেটে যে কেউ চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন। হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা ও ছানি অপারেশন, রোগীর চাহিদা অনুযায়ী লেন্স সংযোজন ও ফ্যাকো সার্জারি, নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসা ও অপারেশন করা হয়। এছাড়া জন্মগত বাঁকা-পা, ঠোঁট কাটা ও তালুকাটা রোগের অপারেশন, অর্থপেডিক সমস্যাজনিত শারীরিক ব্যথা, মাজাব্যথা, মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়। তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চারজন নার্সসহ মোট ৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী হাসপাতালটিতে কর্মরত। শুক্রবার বাদে সপ্তাহের ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেওয়া হয় চিকিৎসাসেবা। গত ১ জানুয়ারি থেকে রাজবাড়ীতে অবস্থান করছে হাসপাতালটি। মার্চ মাসজুড়ে বা এর চেয়ে বেশি দিন এটি এখানে থাকছে বলে জানা গেছে।
গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সোনাকান্দর মৌলভীঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, নোঙর করে রাখা হয়েছে আকাশি-সাদা রঙের তিনতলা হাসপাতালটি। নদীতীর থেকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বালুর বস্তা ও বাঁশের মাচা দিয়ে রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। রোগীরা যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। নদীর পারে রয়েছে টিকিট কাউন্টার। এ সময় কথা হয় ধুঞ্চি গ্রামের বাসিন্দা শাহেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছেন। চোখে কম দেখেন। কোরআন তেলাওয়াত করতে অসুবিধা হয়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। এখানে কমমূল্যে চিকিৎসার কথা শুনে এসেছেন। ৫০ টাকা টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখিয়েছেন। খুব যত্ন নিয়ে তাঁর চোখ দেখেছেন তারা। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছেন। এখানে চিকিৎসা পেয়ে সন্তুষ্ট তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম, রাকিবুল হোসেনসহ অনেকেই জানান, দুর্গম চরের মানুষ সব সময় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। জীবনতরী হাসপাতাল তাদের এলাকাতে আসায় মানুষের অনেক উপকার হয়েছে। যতদিন থাকবে ততদিন তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের কাছে শুনেছেন হাসপাতালটিতে ভালো চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।
জীবনতরী হাসপাতালের প্রশাসক চিকিৎসক একেএম সহিদুল হক বলেন, হাসপাতালটিতে দিনে গড়ে ৭০–৮০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। মূলত মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্যই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে অত্যন্ত কম মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়ে থাকে। মাত্র চার হাজার টাকায় জটিল সব অপারেশন করা হচ্ছে। নদ-নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ বেশির ভাগই তুলনামূলক দরিদ্র হয়। তাদের পক্ষে বেশি টাকা খরচ করে শহরে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা নেওয়া কঠিন। তাই তাদের সুবিধার্থে ২৫ বছর ধরে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। যে এলাকায় যান সেখানে সাধারণত দুই থেকে ছয় মাস অবস্থান করে তারা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন। রাজবাড়ীতে তিন মাস বা তারও বেশি সময় অবস্থান করতে পারেন।