Samakal:
2025-02-23@02:47:16 GMT

সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকুক দুদক

Published: 22nd, February 2025 GMT

সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকুক দুদক

সমকাল: ২০২৪ সালে চট্টগ্রামে দুদকের দায়ের করা দুর্নীতি মামলার ৭৩ শতাংশ আসামিই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। যাদের অধিকাংশই বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন।

ড. মু. সিকান্দার খান: সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির জন্য আমরা সাধারণ জনগণও অনেক ক্ষেত্রে দায়ী। কারণ, আমাদের সমাজের অনেক মানুষ আছেন যারা ঘুষ দিয়ে অন্যায়ভাবে বিশেষ সুবিধা আদায় করে নেন। এ কাজ করতে গিয়ে ডকুমেন্ট জালিয়াতি, প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে থাকেন। দিনদিন এ প্রবণতা বেড়েই চলছে। সমাজে আগে যারা দুর্নীতি করতেন না তারাও এসব দেখে এতে জড়িয়ে পড়ছেন। যেমন– ভুমি ও ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিসগুলোতে ঘুষ দিতে হবে, এটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। না হলে আপনার সব ডকুমেন্ট সঠিক হলেও বছরের পর বছর ঘুরতে হবে। এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ উভয়ের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।  

সমকাল: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকাংশ স্ত্রীই বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। স্ত্রীদের সম্পদশালী হওয়া নিয়ে কিছু বলুন। 

ড.

মু. সিকান্দার খান: সমাজ যখন পচে, তখন সর্বত্র এর ক্ষত দেখা যায়। স্বামীর ঘুষ ও দুর্নীতির অর্থে যেসব স্ত্রী সম্পদশালী হয়েছেন, তারা জেনেশুনেই হয়েছেন। সম্পদ গড়ার নেশা থেকে তারা সাইকো হয়েই এসব করেছেন। স্ত্রী ভালো হলে স্বামীর দুর্নীতির অংশীদার হতেন না, উল্টো স্বামীকে দুর্নীতির পথ থেকে ফেরাতেন। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। 

সমকাল: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ ও দুর্নীতি ঠেকাতে দুদকের কাজ সম্পর্কে আপনি কতটা আশাবাদী। 

ড. মু. সিকান্দার খান: দুদকের কর্মকর্তারা আমাদের সমাজেরই একটি অংশ। তারা স্বাধীন হলেও স্বাধীনভাবে অনেক ক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন না। কারণ সরকারের হাত অনেক লম্বা। সরকার যদি দুদকের কাজে হস্তক্ষেপ না করে তাহলে তাদেরর ভালো কাজ করার সুযোগ রয়েছে।   

সমকাল: সরকার পরিবর্তন হলে দুদকের কাজেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে কেমন দুদক হওয়া উচিত। 

ড. মু. সিকান্দার খান: নতুন পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের একটি সুযোগ এসেছে সমাজ পরিবর্তনের। সর্বক্ষেত্রে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। দুর্নীতি করলে কোন না কোন সময় বিপদে পড়তে হবে- রাষ্ট্র ও সমাজে যদি এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে শুধু সরকারি কর্মকর্তা নয়, সমাজের যে কেউ দুর্নীতি করতে সাহস করবেন না। তখন সমাজ ধীরে ধীরে দুর্নীতিমুক্ত হবে বলে মনে করি। এ জন্য দীর্ঘকাল ধরে একটি ভাল সরকারের ক্ষমতায় থাকা দরকার।’ 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমক ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কেবল ক্রিকেট বাণিজ্যেই ভারত-পাকিস্তান লড়াই!

ইনস্টাগ্রামের সেই পেইজটার নাম ঠিক মনে নেই। তবে বাবর ও রিজওয়ানদের ছবি পোস্ট করে যে ক্যাপশন দিয়েছে তার ভাষা ছিল এরকম, ‘‘অর্থের শক্তি দেখাল ভারত!’’ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিজেদের মাটিতে আয়োজন করেও পাকিস্তান দুবাই গেছে ভারতের বিপক্ষে খেলতে। বিমানবন্দরে রিজওয়ান ও বাবরের সেই ছবি।

ক্রিকেট এবং ক্রিকেট বাণিজ্য এখন এমন অবস্থানে এসে দাঁড়িয়ে, ভারত পূর্ব দিকে থাকলে বাকি সবাই পশ্চিমে। দুই মেরুতে অবস্থান। ২৯ বছর পর ঘরের মাঠে আইসিসির ইভেন্ট আয়োজন করেছে পাকিস্তান। লাহোর, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। প্রতিবেশী দেশ ভারত অংশগ্রহণের জন্য সরকার থেকে পায়নি সবুজ সংকেত।

আইসিসির যেকোনো ইভেন্টের সূচি যেখানে তিন মাস আগে ঠিক হয়ে যায় সেখানে ভারতের কারণে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচি আটকে থাকে দিনের পর দিন।

এর আগে, এশিয়া কাপ পাকিস্তান বিনা শর্তে মেনে নিলেও এবার তারাও একটু বেঁকে বসে। ভারতকে আসতেই হবে তাদের দেশে নয় তো তারা বাদ! ভাবনা ছিল এরকমই। কিন্তু এই কথা যে, কেবল নিজেদের আলোচনার টেবিলেই ছিল বলাবাহুল‌্য। আইসিসির মিটিংয়েও এমন কথা বলা মানে নিজেদের অবস্থানকেই ছোট করে ফেলা। বাধ্য হয়ে ভারতের হাইব্রিড মডেলেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।

ভারত নিজেদের সব ম্যাচ খেলবে দুবাইয়ে। বাকি সব ম্যাচ পাকিস্তান। আয়োজক পাকিস্তান এক্ষেত্রে কৌশলী হতে পারত। ভারতের গ্রুপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারত। তাহলে তাদের ঘরের মাঠেই খেলতে হতো অন্তত গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ। এরপর সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে উঠলে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত।

কিন্তু ওই যে ক্রিকেট বাণিজ্য এমন অবস্থানে যেখানে পাকিস্তান চাইলেও কৌশলী হতে পারবে না। আইসিসি এবং এসিসি বাড়তি লাভের আশায় এখন গ্রুপ পর্বেই ভারত ও পাকিস্তানকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে সুবিধা হলো যদি দুই দল ফাইনাল খেলে তাহলে এর আগ পর্যন্ত নক আউটে মুখোমুখি হতে হবে না। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিই যার বড় প্রমাণ। গ্রুপ পর্বে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। এরপর আবার তারা ফাইনাল খেলেছিল।

গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তারা একসঙ্গে খেলেছিল। এরপর ভারত নক আউট পর্বে গেলেও পাকিস্তান যেতে পারেনি। ফলে তাদের ম্যাচ খেলাও আর সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ এশিয়া কাপেও একই কাণ্ড। গ্রুপ পর্বের পর দুই দল আবার সেরা চারে মুখোমুখি। ভারত ফাইনাল খেলতে পারলেও পাকিস্তান পারেনি। এবারও বাণিজ্যিক দিক থেকেই বিবেচনা করে আইসিসি দুই জায়ান্টকে একই গ্রুপে রেখেছে।

সুবিধা হলো একটাই, ক্রিকেট বাণিজ্য। দুই দলের মুখোমুখি লড়াই এখন কেবল মুখে মুখেই সীমাবদ্ধ। পুরোনো সেই জৌলুস নেই। নেই লড়াইয়ের তীব্র জেদ। খেলোয়াড়রাও সেই উত্তাপ টের পান না। গণমাধ্যম, ব্রডকাস্ট আর দর্শকই সেই উত্তেজনা টিকিয়ে রেখেছেন। সব মিলেই কিন্তু বাণিজ্য। তাইতো দুই দলের ম্যাচের টিকিট দুই ঘণ্টাও অনলাইনে থাকে না। স্টেডিয়ামের বাইরে কালোবাজারিতে বিক্রি হয় চড়া দামে। সেটা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন।

স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার। বাকিদের ভরসা টিভি সেট, অনলাইন স্ট্রিমিং। এজন্য ব্রডকাস্টরাও চওড়া দামে বিক্রি করেছে বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, প্রতি ১০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন বিক্রি হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ২০ লাখ রুপিতে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ওয়াচ টাইম ছিল ৩০.৪ বিলিয়ন মিনিট। টি-টোয়েন্টিতেও ওয়াচ টাইম রেকর্ডে শীর্ষে এই দুই দলের ম্যাচ। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের ওয়াচ টাইম ছিল ২২ বিলিয়ন মিনিটের মতো।

ধারণা করা হচ্ছে, এবার ভেঙে যাবে অতীতের সব রেকর্ডই। এ ম্যাচের দিকে তাই অপেক্ষা নিয়ে তাকিয়ে বিজ্ঞাপনদাতা ও প্রচারস্বত্ত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। তাইতো ‘মওকা-মওকা’ গান প্রচার করে বাড়তি নজর কাড়ার চেষ্টাতে পুরো সফল হয়ে যান তারা।

গ্রুপ পর্বে দুই দলের প্রথম ম্যাচটি ছাড়া যদি ফাইনালে তাদের আবার দেখা হয় তাহলে তো কথাই নেই। বাণিজ্যের অঙ্কটা তখন কোথায় গিয়ে থামে, সেটি অনুমানেরও বাইরে। মাঠের ক্রিকেটের সৌন্দর্যের থেকে অর্থের ঝনঝনানি নিশ্চিত বেড়ে যাবে। আয়োজকরা সেই অপেক্ষাতেই।

সেজন্যই ক্রিকেট বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করা ভারতের জেদের কাছে একপ্রকার নত হতে হয়েছে পাকিস্তানকে! বাবর-রিজওয়ানকে তাই স্বাগতিক হয়েও লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দর পাড়ি দিতে হয়। মাঠের ক্রিকেটে সেই জবাবটা তারা আজ দিতে পারলে কিছুটা মুখরক্ষা হলেও হতে পারে।

ঢাকা/ইয়াসিন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ