স্বামীর অবৈধ আয় আড়াল করতে গৃহিণী স্ত্রীদের কেউ সাজেন মাছচাষি, কেউ সাজেন ব্যবসায়ী। কূটকৌশলের আশ্রয় নিলেও চট্টগ্রামে স্বামীর ‘অবৈধ’ আয় ২০ স্ত্রীর গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। বৈধ কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও সরকারি চাকরিজীবী স্বামীর স্ত্রীরার বনে গেছেন কোটিপতি। দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা অবৈধ অর্থের খোঁজে তদন্ত করতে গিয়েই দুদকের জালে আটকে পড়েন তারা। কাস্টমস কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, পুলিশ, সাব-রেজিস্ট্রার, বন্ড কমিশনারেট, জুট মিল, রেলওয়ে কর্মকর্তা স্বামীদের কালো টাকা আড়াল করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন।
দুদকের মামলায় রেলওয়ের সাবেক জিএম হাবিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী মালা রহমানের বিরুদ্ধে ৬১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মালা নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও ব্যবসায়িক লেনদেনের কোনো ডকুমেন্ট দুদকে উপস্থাপন করতে পারেননি। ফ্ল্যাট থেকে আয় দেখানো হলেও ওই ফ্ল্যাটটি কীভাবে কিনেছেন তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এভাবে অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। স্বামী-স্ত্রী উভয় আসামিকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। অন্যদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চললেও প্রত্যেক আসামি পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে দুদক।
দুদক পিপি অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় দেখা যায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধ আয়ের অর্থ স্ত্রীর নামে রেখে বৈধ করার চেস্টা করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় অভিযুক্তরা স্ত্রীকে মৎস্যচাষি, কৃষি উদ্যোক্তা, পোলট্রি ফার্মিং ব্যবসাসহ কাগজে-কলমে ব্যবসায়ী বানান। যখনই দুদক তদন্তে নামে তখনই তাদের এ প্রতারণার কৌশল আর টিকে না। স্বামীর অবৈধ সম্পদ আড়াল করতে গিয়ে গৃহিণী স্ত্রীদের দুর্নীতি মামলার আসামি হয়ে জেল খাটতে হচ্ছে।’
যদিও কাস্টমস কর্মকর্তা নিজামুল হকের স্ত্রী নাসিমা আক্তার দাবি করেছেন, তিনি স্বামীর আয়ে নয়, বৈধভাবেই দুই কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদককে সেই ডকুমেন্টও তিনি জমা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
দুদক ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, স্বামীর অবৈধ আয়ের অংশীদার হয়ে ২০২৪ সালে ১২ জন ও ২০২৩ সালে ৮ নারী দুর্নীতি মামলার আসামি হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তা নিজামুল হকের স্ত্রী নাসিমা আক্তার, ব্যবসায়ী এমইইএস আবুল হোসাইনের স্ত্রী ফয়জুন নেছা হোছাইন, সার্ভেয়ার সুনীল কান্তি দেব মহাজনের স্ত্রী স্মৃতি রানী, পুলিশ কনস্টেবল সেলিম হাওলাদারের স্ত্রী জাহানারা বেগম, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী মো.
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের স্বামীর সঙ্গে অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনায় দুদকের জালে আটকে পড়েন আট নারী। এরা হলেন– বাঁশখালীর চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল
হক চৌধুরীর স্ত্রি সাহেদা বেগম নূরী, সীতাকুণ্ড সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সহকারী রফিক আহম্মদের স্ত্রী নুর জাহান বেগম, যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ম্যানেজার (শিপিং) এমদাদুল হকের স্ত্রী পারভীন আক্তার, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আরিফের স্ত্রী সানজিদা চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ বাচ্চুর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা, কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া হাজারীর স্ত্রী সেলিনা আকতার, পুলিশে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবুল কাশেম চৌধুরীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম এবং এএসপি এবিএম শাহাদাত হোসেন মজুমদারের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। এদের সবার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দুর্নীতি মামলা দায়ের করেছে দুদক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র রহম ন র অব ধ
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ, মুক্তিপণ নেওয়ার সময় পুলিশ সদস্যসহ চারজন আটক
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে আটক করে পিটুনি দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। পরে তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ডামুড্যা বাসস্টান্ড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার গারফা এলাকার কৌশিক আহমেদ (৩০), শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার কাউসার তালুকদার (২৯), মাগুরা জেলার বাসিন্দা রুবায়েত মীর (২৭) ও কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার আমৌদা এলাকার শরীফ হোসেন (৩৫)। রুবায়েত মীর চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, কৌশিক ও কাউসার পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি চক্র দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছিল। মুক্তিপণ আদায় করার সময় জনতার হাতে ওই চক্রের চারজন ধরা পড়েন। তখন পুলিশ তাঁদের আটক করে। ওই চারজনের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। আর পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা এখানে কীভাবে এসেছিলেন, কোথায় কর্মরত আছেন, তা–ও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ হেফাজতে তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।’
পুলিশ ও ডামুড্যা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি এলাকার জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার ডামুড্যা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী। গতকাল রাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ওই দুজন বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডামুড্যার দারুল আমান বাজার এলাকায় কয়েকজন ওই দুই ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। অপহরণকারী দুই ব্যবসায়ীর কাছে সারা দিনে কাপড় বিক্রির টাকা চান। তবে ওই দুজনের কাছে কোনো টাকা ছিল না। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা চান। দুই ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা ওই দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের লেকের পাড়ে যান। সেখানে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারী ব্যক্তিরা চার লাখ টাকা আদায় করেন।
বাকি ছয় লাখ টাকা আদায় করার জন্য দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁরা ওই দুজনকে নিয়ে ডামুড্যা বাসস্টান্ড এলাকায় যান। সেখানে দুই ব্যবসায়ী গাড়ির ভেতর থেকে চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। তখন স্থানীয় লোকজন ডাকাত বলে চিৎকার দেন। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। স্থানীয় লোকজন অপহরণকারী চারজনকে আটক করে পিটুনি দেন। পরে ডামুড্যা থানার পুলিশ সদস্যরা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। ওই গাড়িতে থাকা আরও চারজন পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে জয় পোদ্দার নামে আরেক পুলিশ সদস্য ছিলেন।
আটক হওয়ার পর অপহরণকারী দলের সদস্য রুবায়েত মীর বলেন, ‘কাউসার তালুকদার আমাদের এখানে এনেছেন। তিনি এই মিশনে আমাদের বস। অপহরণের সময় যেই টাকা পেয়েছিলাম, তা কাউসারের কাছে। আমি আর কিছু জানি না।’