Samakal:
2025-02-23@02:31:11 GMT

স্বামীর আয়ে কোটিপতি ২০ স্ত্রী

Published: 22nd, February 2025 GMT

স্বামীর আয়ে কোটিপতি ২০ স্ত্রী

স্বামীর অবৈধ আয় আড়াল করতে গৃহিণী স্ত্রীদের কেউ সাজেন মাছচাষি, কেউ সাজেন ব্যবসায়ী। কূটকৌশলের আশ্রয় নিলেও চট্টগ্রামে স্বামীর ‘অবৈধ’ আয় ২০ স্ত্রীর গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। বৈধ কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও সরকারি চাকরিজীবী স্বামীর স্ত্রীরার বনে গেছেন কোটিপতি। দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা অবৈধ অর্থের খোঁজে তদন্ত করতে গিয়েই দুদকের জালে আটকে পড়েন তারা। কাস্টমস কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, পুলিশ, সাব-রেজিস্ট্রার, বন্ড কমিশনারেট, জুট মিল, রেলওয়ে কর্মকর্তা স্বামীদের কালো টাকা আড়াল করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন।
দুদকের মামলায় রেলওয়ের সাবেক জিএম হাবিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী মালা রহমানের বিরুদ্ধে ৬১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মালা নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও ব্যবসায়িক লেনদেনের কোনো ডকুমেন্ট দুদকে উপস্থাপন করতে পারেননি। ফ্ল্যাট থেকে আয় দেখানো হলেও ওই ফ্ল্যাটটি কীভাবে কিনেছেন তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এভাবে অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। স্বামী-স্ত্রী উভয় আসামিকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। অন্যদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চললেও প্রত্যেক আসামি পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে দুদক।
দুদক পিপি অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় দেখা যায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধ আয়ের অর্থ স্ত্রীর নামে রেখে বৈধ করার চেস্টা করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় অভিযুক্তরা স্ত্রীকে মৎস্যচাষি, কৃষি উদ্যোক্তা, পোলট্রি ফার্মিং ব্যবসাসহ কাগজে-কলমে ব্যবসায়ী বানান। যখনই দুদক তদন্তে নামে তখনই তাদের এ প্রতারণার কৌশল আর টিকে না। স্বামীর অবৈধ সম্পদ আড়াল করতে গিয়ে গৃহিণী স্ত্রীদের দুর্নীতি মামলার আসামি হয়ে জেল খাটতে হচ্ছে।’
যদিও কাস্টমস কর্মকর্তা নিজামুল হকের স্ত্রী নাসিমা আক্তার দাবি করেছেন, তিনি স্বামীর আয়ে নয়, বৈধভাবেই দুই কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদককে সেই ডকুমেন্টও তিনি জমা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
দুদক ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, স্বামীর অবৈধ আয়ের অংশীদার হয়ে ২০২৪ সালে ১২ জন ও ২০২৩ সালে ৮ নারী দুর্নীতি মামলার আসামি হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তা নিজামুল হকের স্ত্রী নাসিমা আক্তার, ব্যবসায়ী এমইইএস আবুল হোসাইনের স্ত্রী ফয়জুন নেছা হোছাইন, সার্ভেয়ার সুনীল কান্তি দেব মহাজনের স্ত্রী স্মৃতি রানী, পুলিশ কনস্টেবল সেলিম হাওলাদারের স্ত্রী জাহানারা বেগম, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী মো.

আলমগীর প্রকাশ লাতুর স্ত্রী হাসিনা বেগম, কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল বারিকের স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিন, পুলিশের এএসপি আবুল হাশেমের স্ত্রী তাহেরিনা বেগম, আমিন জুট মিলের কর্মচারী আবদুল নবী লেদুর স্ত্রী লাকি আক্তার, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সহকারী মাহফুজুর রহমানের স্ত্রী দিলুয়ারা মাহফুজুর রহমান, রেলওয়ের সাবেক জিএম হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মালা রহমান, বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তার। সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় সুপরিনটেনডেন্ট অব কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামে মো. ইদ্রিসের স্ত্রী ফখরে জাহান বেগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা করা হয়।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের স্বামীর সঙ্গে অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনায় দুদকের জালে আটকে পড়েন আট নারী। এরা হলেন– বাঁশখালীর চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল 
হক চৌধুরীর স্ত্রি সাহেদা বেগম নূরী, সীতাকুণ্ড সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সহকারী রফিক আহম্মদের স্ত্রী নুর জাহান বেগম, যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ম্যানেজার (শিপিং) এমদাদুল হকের স্ত্রী পারভীন আক্তার, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আরিফের স্ত্রী সানজিদা চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ বাচ্চুর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা, কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া হাজারীর স্ত্রী সেলিনা আকতার, পুলিশে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবুল কাশেম চৌধুরীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম এবং এএসপি এবিএম শাহাদাত হোসেন মজুমদারের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। এদের সবার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দুর্নীতি মামলা দায়ের করেছে দুদক। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র রহম ন র অব ধ

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ টাকার ফলে শুল্ক–কর দিতে হয় ১৩৬ টাকা

আপেল, আঙুর, নাশপাতি, কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের ওপর শুল্ক-করের ‘অত্যাচার’ যেন বেড়েই চলেছে। বিদেশি ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বসানো হয়েছে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কও। আবার বাড়ানো হয়েছে অগ্রিম কর। বসানো হয়েছে অগ্রিম ভ্যাটও। বিদেশি ফলে শুল্ক–করারোপের সর্বশেষ সংযোজন ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন ১০০ টাকার ফল আমদানি করলে ১৩৬ টাকা শুল্ক-কর দিতে হয়। সম্প্রতি ট্যারিফ কমিশনের এই প্রতিবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়। সেখানে বিদেশি ফল আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, আপেল, আঙুর, নাশপাতি, কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফল বন্দর এলাকা পার হলেই ১০০ টাকার ফলের দাম হয়ে যায় ২৩৬ টাকা। বাজার পর্যন্ত আসতে এই দামের সঙ্গে পরিবহন ভাড়াসহ অন্যান্য খরচও যোগ হয়, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ঘাড়েই চাপে।

রমজানের সময় আপেল, নাশপাতি, আঙুর, কমলা, মাল্টা ইত্যাদির চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু বাড়তি শুল্ক–করের কারণে এবার বিদেশি ফল আমদানি কমে গেছে।

শুল্ক কর কত

বর্তমানে ফল আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১০ শতাংশ অগ্রিম কর, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আছে। মোটামুটি যত ধরনের শুল্ক-কর আছে, সবই আরোপ করা হয়েছে বিদেশি ফল আমদানির ক্ষেত্রে। সব মিলিয়ে শুল্ক-কর ভার ১৩৬ শতাংশ।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রচলিত আমদানি পণ্যের মধ্যে গাড়ি ও মদ-সিগারেটের পর তাজা ফল আমদানিতেই সবচেয়ে বেশি শুল্ক-কর দিতে হয়।

শুল্ক-করের চাপ বেড়ে চলেছে

গত মাসে আপেল, আঙুর, নাশপাতি, কমলা, মাল্টা, বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের আমদানি করা ফলের ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়। এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে ফল আমদানির ওপর ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হয়েছিল। ওই সময় দেশে ডলার–সংকট দেখা দেয়। এ কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসায় সরকার। ফল আমদানিকারকদের দাবি, সাধারণত জরুরি অবস্থা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হয়। এখন দেশে ওই ধরনের পরিস্থিতি নেই। তারপর ফল আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বহাল রয়েছে।

ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি ২০২৩–এ বলা হয়েছে, শুধু জরুরি প্রয়োজনেই নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো যেতে পারে। কিন্তু ফল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করে ট্যারিফ কমিশন।

৪০% মুনাফা কতটা বাস্তবসম্মত

গত বছর ফল আমদানির ওপর অগ্রিম কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এই ১০ শতাংশ অগ্রিম কর সমন্বয় করতে হলে অন্তত ৪০ শতাংশ মুনাফা করতে হবে। কিন্তু এই ধরনের পচনশীল পণ্যে ১৫-২০ শতাংশের বেশি মুনাফা হয় না। ফলে যাঁরা নিয়মকানুন মেনে ফল আমদানি করেন, তাঁরা এত মুনাফা করতে পারেন না। কয়েক বছর ধরে কয়েকটি বড় শিল্পগোষ্ঠী ফল আমদানিতে নেমেছে। অভিযোগ আছে, ১০ শতাংশ অগ্রিম করের সুযোগ নিয়ে অনেকে কালোটাকা সাদা করছেন।

মূল্য সংযোজন নেই, কিন্তু ভ্যাট আছে

বিদেশি ফল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আগাম কর দিতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিদেশি আপেল, আঙুর, নাশপাতি, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি ফল যে কার্টনে আসে, তা শুল্কায়নের পর সেভাবেই বাজারে আসে। ফলে খুব বেশি মূল্য সংযোজনের সুযোগ নেই। অথচ ভ্যাট দিতে হয়।

এ বিষয়ে তাজা ফল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আপেল, কমলা, নাশপাতি, মাল্টা এসব আর বিলাস পণ্য নয়। রোগীর পথ্য হিসেবে যেমন ব্যবহার হয়, তেমনি পুষ্টিমান নিশ্চিত করতেও ফল বেশ চলে। পবিত্র রমজান মাসেও ফলের বেশ চাহিদা থাকে। তাই এসব ফলের ওপর আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর কমানো উচিত।

সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, দেশে আপেল, নাশপাতির মতো বিদেশি ফল উৎপাদন হয় না বললেই চলে। দেশীয় পণ্য সুরক্ষা দেওয়ার কোনো কারণ নেই। তাই এত শুল্ক-কর আরোপ করার যুক্তি নেই। শুল্ক–কর বেশি হওয়ায় চোরাই পথে ফল আমদানি বেড়ে গেছে।

তাজা ফল বিলাস পণ্য নয়

তাজা ফলকে বিলাস পণ্য হিসেবে মনে করে না ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫৬ সালের এসেনশিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্ট অনুযায়ী, খাদ্যপণ্য হিসেবে তাজা ফল ‘অত্যাবশকীয় পণ্য’। ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, আপেল, নাশপাতি, আঙুর, মাল্টা, কমলা এসব এখন আর বিলাস পণ্য নয়। রমজানের সময় এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকে। আবার রোগীর জন্য এসব ফল খাওয়াতে বলেন চিকিৎসকেরা। তাই এসব পণ্যে শুল্ক-কর কমানো উচিত।

সম্প্রতি আমদানি করা ফলের শুল্ক-কর কমাতে এনবিআরকে সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। তাতে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ, অগ্রিম কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও ৫ শতাংশ আগাম কর বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

আমদানি কমেছে

বর্তমানে বিদেশ থেকে ৩৮ ধরনের ফল আমদানি হয়। এনবিআরের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আপেল আমদানি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ, মাল্টা ৭০ শতাংশ, আঙুর ২৯ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে মেন্ডারিন ৫১ শতাংশ, আঙুর ২১ শতাংশ, আপেল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, নাশপাতি ৪৫ শতাংশ, আনার ও ড্রাগনের ৩২ শতাংশ আমদানি কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়।

এনবিআরের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বিদেশি ফল আমদানি হয়েছে। এসব ফল আমদানি থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে ৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ