১৬ বছরে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে পাঁচ দুর্নীতি মামলা
Published: 22nd, February 2025 GMT
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় চট্টগ্রামে ৫ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে দায়ের হয় দুর্নীতি মামলা। এর মধ্যে শুধু আসলাম চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধেই হয়েছে তিনটি মামলা। বাকি দুটির মধ্যে একটি আনোয়ারার সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম ও তাঁর স্ত্রী নাজনিন নিজামের বিরুদ্ধে এবং অপরটি দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা আলী আব্বাসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা। তিনটি মামলায় চার্জশিট হওয়ার পর এখন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে বিচারাধীন। আসলাম চৌধুরীর সম্পদের মামলাটি দুদক ঢাকা থেকে তদন্ত চলমান। সরওয়ার জামাল নিজামের মামলাটি দুদক চট্টগ্রামে তদন্তাধীন রয়েছে। জামায়াতের চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামশুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইআইইউসির অর্থ আত্মসাৎ অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলা করার সুপারিশ ঝুলে গেছে।
কিন্তু ৫ আগস্টের পর সরওয়ার জামান নিজামের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলাটি দুদক ঢাকা থেকে অধিকতর তদন্ত করার জন্য ফেরত পাঠায় চট্টগ্রামে। ২০০৮ সালের ২৮ ফেরুয়ারি দায়ের হওয়া মামলাটি এখন অধিকতর তদন্ত চলছে। যদিও তদন্ত শেষ করে ২০২৪ সালের ৩০ জুন মামলার সাক্ষ্য স্মারক দুদক ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তা গ্রহণ না করে ১২ সেপ্টেম্বর নথি ফেরত পাঠানো হয়। সাক্ষ্য-স্মারকে সরওয়ার জামান নিজাম ও তাঁর স্ত্রী নাজনিন নিজামের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯৩ লাখ ৫১ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পায় দুদক। এর বাইরে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লায়ন আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এ মামলাটি হয়। এতে ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৪১৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের দুর্নীতির অভিযোগে আসলাম চৌধুরী, আমজাদ হোসেন চৌধুরী, জামিলা নাজনিল মাওলা, জসিম উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মেসার্স আব্বাস ট্রেডিংয়ের মালিক আলী আব্বাসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার বিচার চলছে আদালতে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) থেকে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সীতাকুণ্ড থানায় জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলামসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ জমা পড়ে দূদকেও। প্রাথমিক অনুসন্ধানে নেমে প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক। ৫ আগস্টের আগে ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থ লোপাটের ঘটনায় দুর্নীতি মামলা দায়ের করার অনুমতি চেয়ে চট্টগ্রাম থেকে সুপারিশ পাঠানো হয় ঢাকার দূদক কার্যালয়ে। কিন্তু আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দুদক কমিশনে পরিবর্তন আসে। ঢাকার নতুন কমিশন আইইউউউসি’র ঘটনায় পাঠানো মামলার সুপারিশ ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে ফেরত পাঠায় চট্টগ্রাম অফিসে। বিল-ভাউচার আরো ভালো করে যাচাই বাছাই করার পরামর্শ দেয় কমিশন। সেই আলোকে দুদক চট্টগ্রামের অনুসন্ধা নতুন করে ফের করা হচ্ছে।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মো.
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুর আলম বলেন, ‘আসলাম চৌধুরী জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের মামলাটি চট্টগ্রাম কার্যালয়ে রেকর্ড হলেও মামলাটির তদন্ত হচ্ছে ঢাকার কার্যালয় থেকে। তাই এটির সর্বশেষ কী অবস্থায় আছে তা জানা নেই।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আসল ম চ ধ র সরওয় র জ ম তদন ত ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানকে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তুলতে চান মা-বাবা
পহেলা বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালটা যেন শাকিল ও তাকিয়া দম্পতির জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকল। এ দিন তাদের পরিবারে জন্ম নিয়েছে দ্বিতীয় ছেলে সন্তান। নতুন বছরের প্রথম দিন উদযাপনে বিশেষ প্রস্তুতি থাকলেও পান্তা-ইলিশ বাদ দিয়ে মিষ্টি বিতরণ করেই দিনটি উদযাপন করেছেন হাসপাতালের কেবিনে।
কক্সবাজার সি-সাইড হাসপাতালে ১৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টায় তাদের দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেয়। শাকিল সরওয়ার ও তাকিয়া তাবাসসুম দম্পতির প্রথম সন্তানও ছেলে। শাকিল সরওয়ার কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকার বাসিন্দা।
শাকিল সরওয়ার সমকালকে জানান, নববর্ষের শুরুতে তার শিশু জন্ম নেওয়ায় তিনি অনেক খুশি। ভবিষ্যতে তার সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি আদর্শবান সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর শাকিল সরওয়ার ও তাকিয়া তাবাসসুম দম্পতির বিয়ে হয় পারিবারিক ভাবে। তারা দু'জনই মাস্টার্স শেষ করেছেন।
শাকিল সরওয়ার কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুস্কুল মনুপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক কোম্পানির ছেলে। তাকিয়া তাবাসসুম কক্সবাজার পৌরসভার পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিকের মেয়ে। তবে শ্বশুর - শাশুড়িকে নিয়ে শাকিল ও তাকিয়া দম্পতি বর্তমানে বসবাস করেন কক্সবাজার পৌরসভার ঝাউতলা এলাকায়।
বিয়ের প্রায় দুইবছর পর ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট প্রথম ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তবে দুই সন্তানই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে হয়েছে।
শাকিল সরওয়ার ছাত্রজীবনে তুখোড় খেলোয়াড় ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলা ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিয়ের পর থেকে তিনি পুরোপুরি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
শাকিল সরওয়ার জানান, দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারণের পর শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাকিয়াকে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। তাকিয়া তাবাসসুম শুরু থেকেই ডাক্তার খোন্দকার আসাদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিয়ে আসছেন। ডাক্তারের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সন্তান জন্ম নিয়েছে।
শাকিল সরওয়ার আরও জানান, ১৪ এপ্রিল ভোরে তাকিয়ার হঠাৎ ব্যথা শুরু হলে কক্সবাজার শহরের সি-সাইড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বিষয়টি ডাক্তার খোন্দকার আসাদুজ্জামানকে জানালে তিনি সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। এরমধ্যে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তার। সকাল ৯টায় অপারেশন সফলভাবে শেষ হয়। এরমধ্যে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান।
পহেলা বৈশাখ সন্তানের জন্ম, তাই অন্যরকম আনন্দ লাগছে জানিয়ে শাকিল সরওয়ার বলেন, বিয়ের পর প্রতিবছর আমরা পরিবারের সবাই মিলে জাকজমকপূর্ণ ভাবে পহেলা বৈশাখ পালন করে থাকি। এ বছর অন্যান্য বারের মতো পালন করতে না পারলেও নতুন বছরে আরেকটা ছেলে সন্তান পাওয়ায় অন্যরকম খুশি পরিবারের সবাই।
ডাক্তার খোন্দকার আসাদুজ্জামান (গাইনি এন্ড অবস) বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়াটাই আসলে অনেক কঠিন কাজ। আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া যা কখনো সম্ভব নয়। তাকিয়া শারীরিক ভাবে একটু দুর্বল হওয়ায় গর্ভকালীন পুরো সময়টাতে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হয়েছে। সাধারণ ডেলিভারি করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও প্রথম সন্তান সিজারিয়ান অপারেশনে হওয়ার কারণে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে চায়নি কেউ। তাই অপারেশন করতে হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মা- সন্তান সুস্থ থাকায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
তাকিয়া তাবাসসুমের বাবা মোহাম্মদ রফিক বলেন, সন্তান মা-বাবার কাছে সবসময় ছোট। সে হিসেবে তাকিয়া এভাবে সাংসারিক হবে তা আমি কখনো ভাবিনি। শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের মা-বাবার মতো করে সেবা করে পুরো পরিবারকে আগলে রেখে যেভাবে সংসার করছে তা এককথায় প্রশংসনীয়।
শাকিল সরওয়ার ও তাকিয়া তাবাসসুমের উদ্ধৃতি দিয়ে মোহাম্মদ রফিক বলেন, তারা চায়, দুই ছেলে সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।
সি-সাইড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মোহাম্মদ আবদুল মালেক বলেন, পহেলা বৈশাখে হাসপাতালে কোনো সন্তান প্রসব করলে তাদেরকে মিষ্টিমুখ করানোর নির্দেশনা আগে থেকেই দেওয়া ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তারই প্রেক্ষিতে পহেলা বৈশাখে হাসপাতালে জন্ম নেওয়া চারটি পরিবারকে মিষ্টিমুখ করানো হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া প্রত্যেক রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হয় বলেও জানান হাসপাতালের এমডি মীর মোহাম্মদ আবদুল মালেক।