চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নাম ভাঙিয়ে দখল করা হচ্ছে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী তুলাতলী সাগর উপকূল। জেলা পরিষদ থেকে মীর্জানগরের ছোঁয়াখালী ঘাট ইজারা নিয়ে অনুমতি ছাড়াই বেড়িবাঁধের পাশে মাটি খনন করা হচ্ছে; কাটা হচ্ছে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর গাছ। দখল ও আধিপত্য নিয়ে ইতোমধ্যে দুই পক্ষে মারামারিও হয়েছে সেখানে।  
খনন করা স্থানে টানানো একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণের ফেরিঘাট’। এটির নাম মীর্জানগর ছোঁয়াখালী ঘাট। বর্তমানে যেখানে মাটি খনন ও ভরাট করা হচ্ছে, সেখানে কখনও খাল ছিল না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ থেকে ঘাট ইজারা নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে খাল খনন করার দাবি করছেন ইজারাদার সাকিল চৌধুরী। জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘাট ইজারা দেওয়া হলেও উপকূলে মাটি খনন-ভরাট বা গাছ কাটার কোনো সুযোগ নেই। অনৈতিক কাজ করলে পার পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন তারা। 
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী পোর্টলিংক থেকে আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সড়ক দিয়ে অর্ধকিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত সন্দ্বীপ যাতায়াতের ছোঁয়াখালী নৌঘাট। প্রায় ১৫ বছর আগে এই নৌঘাট নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সন্দ্বীপের মানুষ বিকল্প পথে যাতায়াত করেন।
মীর্জানগরের ছোঁয়াখালী নৌঘাট এলাকায় ১৫-২০টি দোকান রয়েছে। দুই হাজারের বেশি জেলের বসতি এখানে। জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন নৌঘাটে তাদের মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত নৌযানগুলো রাখেন। দোকান থেকে বাজার-সদায় করেন। সরেজমিন দেখা যায়, উপকূলে ছোঁয়াখালী খালের দক্ষিণে রয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের শিপইয়ার্ড। এতে কিছু স্থাপনাও আছে। তবে ইয়ার্ডটি চালু করতে পারেননি সাবেক সংসদ সদস্য। ওই স্থাপনার দক্ষিণে সাগর উপকূলের বেড়িবাঁধের পশ্চিমে বনবিভাগের সবুজ বেষ্টনীর আওতায় করা কেউড়া ও ঝাউবন। ঘাট তৈরির নামে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন স্থান থেকে কাটা হয়েছে অর্ধশতাধিক গাছ। 
১৩ ফেব্রুয়ারি দেখা যায়, কেউড়া ও ঝাউবন থেকে দুটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। অনেক স্থানে হয়েছে গর্ত। ওই মাটি দিয়ে উপকূলের বেড়িবাঁধের দুই পাশ ভরাট করা হচ্ছে। বনের ভেতর মাটি খননের ফলে বন বিভাগের রোপণ করা অনেক গাছ ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কাটা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি চলছে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের দুই পক্ষ আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা, আরজু, শাখাওয়াত ও মামুন বলেন, ‘বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কিছু লোক বেড়িবাঁধ দখল করছে। উপকূল থেকে মাটি খনন ও ভরাট করছে। পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে পরিবেশ, এলাকার বসতিও পড়ছে হুমকির মুখে।’
ছোঁয়াখালী ফেরিঘাট ইজারাদার সাকিল চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এ নৌঘাট ইজারা নিয়ে লুটপাট করেছে স্বৈরাচারের দোসররা। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ বর্তমানে এ ঘাটটির নাম পরিবর্তন করে ছোঁয়াখালী-শিবেরহাট (আমতলী) রেখে ইজারা দিয়েছে। ঘাটটি ইজারা নেওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে উপকূল থেকে মাটি কেটে খাল খননের কাজ করছি। মাটি কাটতে জেলা পরিষদের কোনো অনুমোদন নেই বলে তিনি স্বীকার করেন।
খালের অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও কেমনে ঘাট ইজারা নিলেন– এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ ঘাটে ইজারা সবসময় চালু ছিল। অনেকে ইজারা না নিয়ে ঘাট ব্যবহার করে অর্থ কামিয়েছে। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আমি ইজারা নিয়ে খাল সংস্কারে হাত দিয়েছি। এটা চলমান থাকবে। বড় করে নিজস্ব অর্থায়নে খাল খনন করা হচ্ছে। ওই খাল দিয়ে মালামাল বোঝাই লঞ্চ সন্দ্বীপসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে।’
 তিনি আরও বলেন, ‘জনকল্যাণ ও জনস্বার্থে মাটি কেটে বেড়িবাঁধ সংস্কার করছি। কিছু লোক দলীয় পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে আসছিলেন।
 আমারা তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় কিছুটা ঝামেলা হয়েছে। নিজস্ব অর্থে কাজ করছি, তাদের টাকা দিব কেন?’
 ভাটিয়ারী ও ছলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লা আল মামুন বলেন, ‘কোন অবস্থাতেই অনুমোদন ছাড়া উপকূলে মাটি খনন-ভরাট বা গাছ কাটার সুযোগ নেই। মাটি খনন ও ভরাটের জন্য ইজাদারের কয়েকজন অনুমতির জন্য এসেছিলনে, তাদের বলে দেওয়া হয়েছে এ কাজ করা কোন সুযোগ নেই। এরপরও যদি তারা উপকূলে মাটি খনন-ভরাট বা গাছ কাটেন তাহলে বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘ঘাটের ইজারা দেওয়া হয়েছে। সাগর উপকূলে স্ক্যাভেটর দিয়ে মাটি খনন-ভরাট বা গাছ কাটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। ইজারাদার জেলা পরিষদে কয়েকবার মাটি খনন ও কাটার অনুমোদনের জন্য এসেছিলেন। বলে দেওয়া হয়েছে নিয়ম বহিভূত কোন কাজ করা যাবে না। কিন্তু তারা তা অমান্য করে উপকূল থেকে মাটি খনন-ভরাট ও গাছ কাটার কথা শুনেছি, যা তা সম্পূর্ণ অবৈধ।’  
চট্টগ্রাম কাট্টলী বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পরিষদ থেকে খাল খনন ও সড়ক নির্মাণের অনুমোতি নিয়ে কাজ করছেন বলে ইজারাদার জানিয়েছেন। তবে তারা কোন প্রমাণপত্র আমাদের দেয়নি। উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর পাশে থাকা যে গাছ  তারা কেটেছে তা অবৈধভাবে কেটেছে।  ইজারাদারের লোকেরা দুইটি স্ক্যাভেটর দিয়ে মাটি কাটছে দেখে তা বন্ধ করতে বলেছি। জনবল সংকটসহ নানা কারণে যথায়থ আইন প্রয়োগ করতে সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিষয়টি বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইজ র দ র ঘ ট ইজ র খ ল খনন ক জ কর উপক ল খনন ও

এছাড়াও পড়ুন:

চুরি-ছিনতাই-খুন প্রতিরোধে তৎপরতা বাড়িয়েছি: র‍্যাব ডিজি

সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, খুন ও ডাকাতি প্রতিরোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত ২টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে র‍্যাবের টহল ও চেকপোস্ট পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন তিনি।

র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে র‌্যাবও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

শহিদুর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস কায়দায় হামলা ও আক্রমণ চালাচ্ছে। এসব অপরাধ দমনে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে র‌্যাব ফোর্সেসও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করছে। এরইমধ্যে র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়ন তাদের নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাস্ট প্যাট্রোলিং পরিচালনা করছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিরতিহীনভাবে অতিরিক্ত টহল মোতায়েনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

র‍্যাব ডিজি বলেন, ব্যাটালিয়নগুলোতে নিজস্ব কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে ঢাকাসহ সারাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। দেশব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশির মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য র‌্যাব বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব মেট্রোপলিটন শহর, জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন, পর্যাপ্ত সংখ্যক টহল মোতায়েন এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের খুন, হত্যাচেষ্টা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারি এবং চাঞ্চল্যকর সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। এসব গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য মোহাম্মদপুরের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী কবজি কাটা গ্রুপের প্রধান আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ার ওরফে কবজি কাটা আনোয়ার, জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ সন্ত্রাসী বুনিয়া সোহেল এবং জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি সেলিম আশরাফি ওরফে চুয়া সেলিমসহ তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‍্যাব ডিজি আরও বলেন, সব মেট্রোপলিটন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরগুলোতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানী থেকে ৪০ জন, ময়মনসিংহে ২৫ জন, রাজশাহী থেকে ২৪ জন, সিলেট থেকে ১৭ জন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১৫ জনসহ মোট ১৮০ জন আসামিকে গ্রেপ্তার এবং অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এ ছাড়া সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ যেকোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

বিএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ