অস্ট্রেলিয়ার কাছে রেকর্ড রানও নিরাপদ নয়!
Published: 22nd, February 2025 GMT
ওয়ানডে ক্রিকেটে তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কেন তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারই আরেকটি প্রমাণ মিলল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মঞ্চে। ইংল্যান্ডকে স্রেফ নাকানিচুবানি খাইয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির যাত্রা শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া।
লাহোরে দুই দলই ইতিহাসের পাতায় নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছে। ইংল্যান্ড আগে ব্যাটিং করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় রান ৩৫১ জমা করে। এই রানও অস্ট্রেলিয়ার কাছে নিরাপদ নয়। পাল্টা জবাব দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতেছে ৫ উইকেটে, ১৫ বল হাতে রেখে।
ইংলিশ ওপেনার বেন ডাকেট চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান করেছিলেন প্রথম ইনিংসে। ১৬৫ রানের ইনিংস খেলেন। তার দেড়শ’র জবাব সেঞ্চুরিতে দিয়েছেন জশ ইংলিস। তাতেই অস্ট্রেলিয়ার বিজয়ের রূপকথা লিখা হয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
সাকিবসহ ১০৪ ক্রিকেটারের দলবদল সম্পন্ন, আগামীকাল করবেন তামিম
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের কোনো উত্তাপ টের পাচ্ছে না ভারত!
অজি দলে নিয়মিত একাধিক ক্রিকেটার নেই। কামিন্স, স্টার্ক, মার্শ, হ্যাজেলউড, স্টয়নিসকে ছাড়া অস্ট্রেলিয়া দলটি কেমন হবে তা নিয়ে চিন্তায় ছিল সমর্থকরা। কিন্তু স্কোয়াডের গভীরতা যে এতোটা বেশি তা কেউ ভাবতে পেরেছিল?
তার ওপরে ট্র্যাভিস হেড (৬), অধিনায়ক স্মিথ (৫) ও মার্নাস লাবুসানে (৪৭) ফেরার পর সাড়ে তিনশর বেশি রান তাড়া করা যাবে এমন ভাবনার লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিল। কিন্তু পাঁচে নামা জশ ইংলিস সব হিসেব পাল্টে দিলেন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন অ্যালেক্স ক্যারি। দুজন মিলে পঞ্চম উইকেটে ১১৬ বলে ১৪৬ রানের জুটি গড়েন।
ক্যারি ফিফটি ছুঁয়ে ৬৯ রানে ফিরে গেলে ইংলিস তুলে নেন ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরি। তাতে লিখা হয়ে অনবদ্য এক বিজয়ের গল্প। ৮৬ বলে ৮ চার ও ৬ ছক্কায় ইংলিস তার ইনিংসটি সাজান। এছাড়া ম্যাক্সওয়েল ১৫ বলে ৩২ রান করেন ৪ চার ও ২ ছক্কায়।
এর আগে বেন ডাকেটের একক ব্যাটিং প্রদর্শনীতে রানের পাহাড়ে চড়ে ইংল্যান্ড। ওপেনিংয়ে নেমে ৪৮তম ওভার পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন। প্রায় পৌনে চার ঘণ্টার ইনিংসে ১৭ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৬৫ রানের ইনিংস খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন জো রুট। ১৫৫ বলে ১৫৮ রান যোগ করেন দুজন। রুট ৭৮ বলে ৬৮ রান করে ফিরে গেলেও ডাকেট তুলে নেন ওয়ানডে ক্রিকেটের তৃতীয় সেঞ্চুরি।
এই দুই ব্যাটসম্যান বাদে বিশের ঘর পেরিয়েছেন কেবল জস বাটলার ও জোফরা আর্চার। বাটলার ২১ বলে ২৩ ও আর্চার ১০ বলে ২১ রান করেন। শেষ দিকে আর্চারের অতি গুরুত্বপূর্ণ রানের সুবাদে ইংল্যান্ডের রান সাড়ে তিনশ পেরিয়ে যায়।
ইনিংসের শুরুতে অ্যালেক্স ক্যারি দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে আলো কেড়ে নেন। বেন ডোয়ার্শুইসের বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। সেখানে ক্যারি ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে অসাধারণ দক্ষতায় বল তালুবন্দি করেন।
অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ে তেমন ঝাঁজ ছিল না। ডোয়ার্শুইস ৬৬ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া ২টি করে উইকেট নেন অ্যাডাম জাম্পা ও মার্নাস লাবুসানে।
প্রথমে রেকর্ড রান গড়া। সেই রান তাড়া করে জয়। দুই ইনিংসে দুটি অনবদ্য সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে বলা যায় ওয়ানডে ক্রিকেট দারুণ একটি দিন কাটাল। আর ক্রিকেটপ্রেমীরাও সেটা মনভরে উপভোগ করলো।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি
গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।
গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।
ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’
তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।