লিবিয়ায় দালাল চক্রের নির্যাতনে মৃত্যু, ইতালি যাওয়া হলো না রাসেলের
Published: 22nd, February 2025 GMT
পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ভিটেমাটি বিক্রি করে প্রবাসে পাড়ি জমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার তরুণ মো. রাসেল মিয়া (২৫)। অবৈধপথে দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে তাঁর ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই দালাল চক্রের নির্যাতনে লিবিয়ায় গতকাল শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন।
আজ শনিবার দুপুরে এক প্রবাসীর মাধ্যমে রাসেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারে পরিবার। নিহত রাসেল নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল ইউনিয়নের ধরমণ্ডল গ্রামের লাউস মিয়া ও আউলিয়া বেগমের বড় ছেলে।
রাসেলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ ভাই–বোনের মধ্যে রাসেল ছিল সবার বড়। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ইতালি যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। পরিবারের শেষ সম্বল পৈতৃক ভিটা বিক্রি করে ও স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মোট ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একই গ্রামের দালাল লিলু মিয়ার মাধ্যমে তিনি লিবিয়ায় যান। কথা ছিল লিবিয়া থেকে তাঁকে ইতালিতে পাঠানো হবে। কিন্তু লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর তাঁকে স্থানীয় দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় নির্যাতন। দালাল চক্র রাসেলকে নির্যাতন করে ভিডিও বাংলাদেশে পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় আরও ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি; কিন্তু টাকা দিতে না পারায় দালাল চক্রের সদস্যরা তাঁকে নির্যাতন করা শুরু করেন। এতে গতকাল শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়। আজ দুপুরে এক প্রবাসীর মাধ্যমে স্বজনেরা তাঁর মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারেন।
রাসেলের বাবা আউয়াল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জীবনের শেষ সম্বল বসতভিটা ও ফসলি জমি বিক্রি কইরা কয়েক ধাপে ৫০ লাখ টাকা দিছি। আরও টাকা চাইত। দিতে না পারায় আমার ছেলেরে হত্যা করছে দালাল লিলু মিয়া ও মাফিয়া চক্র।’ তিনি বলেন, ‘লিবিয়ায় যাওয়ার পর ছেলের কপালে জোটে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। মাফিয়া চক্র রাসেলকে নির্যাতন করে একাধিকবার ভিডিও পাঠিয়ে তাঁদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আরও ১০ লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা না দেওয়ায় বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে ছেলেকে হত্যা করেছে।’
রাসেলের মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানির পর গণমাধ্যমকর্মীরা ধরমণ্ডল গ্রামের দালাল লিলু মিয়ার বাড়িতে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে পরিবার নিয়ে তিনি পলাতক। একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় লিলু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ধরমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে ওই তরুণের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছেন। ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের দুই দফায় সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ও গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের কামালদিঘী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় একটি পক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজনের দাবি, মাদকের পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে পুলিশের ভাষ্য, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে এই সংঘর্ষ হয়েছে। একটি পক্ষ ঘটনাটিকে ইয়াবা বড়ি বিক্রির ঘটনা সাজানোর চেষ্টা করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফান্দাউক ইউনিয়নের ফান্দাউক গ্রামের রুবেল শাহ একজন মাদক ব্যবসায়ী। কয়েক দিন আগে রুবেলের কাছ থেকে একই গ্রামের শাফায়েত মিয়া কিছু ইয়াবা বড়ি কেনেন। পাওনা টাকা চাওয়ায় কিছুদিন পরপর তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। মাদক বিক্রির পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে গতকাল রাত ১০টার দিকে রুবেল শাহ ও শাফায়েতের এক স্বজন পারভেজ মিয়ার মধ্যে ফান্দাউক গ্রামের কামালদিঘী পাড়ে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়েন। সে সময় উভয় পক্ষের নারী-পুরুষসহ ৩০ জন আহত হন। সেই সংঘর্ষের জেরে আজ বেলা ১১টার দিকে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় শাফায়েতের পক্ষের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
সংঘর্ষের পর দুই পক্ষের আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
সংঘর্ষের বিষয়ে রুবেল শাহ অভিযোগ করেন, ‘আমার বড় ভাই নাইম শাহ পাশের বাড়ির শাফায়েত ও পারভেজের কাছে ৭০ হাজার টাকা পাওনা আছেন। টাকা ফেরত চাওয়ায় শাফায়েতের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালান। দুই দফায় হামলায় আমাদের ৭০ থেকে ৮০ জন আহত হয়েছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে শাফায়েত মিয়া ও পারভেজ মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে পাওনা টাকা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে আজ আবার দুই পক্ষের লোকজন জমায়েত হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতির কারণে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। ২০ জনের মতো আহত হয়েছেন। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। একটি পক্ষ এটিকে ইয়াবার ঘটনা বলে প্রচার করছে।