কুমিল্লার সেই নিহত কর্মীর বাড়িতে জামায়াতের আমির, পরিবারের দায়িত্ব নিল সংগঠন
Published: 22nd, February 2025 GMT
যানজটে আটকে থাকা জামায়াতে ইসলামীর আমিরের গাড়িবহরকে পার হওয়ার জায়গা করে দিতে গিয়ে বাসচাপায় নিহত কুমিল্লার লালমাই উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা ও জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দীনের পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় নিহত কর্মীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারকে এই আশ্বাস দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। এ সময় জামায়াতের আমির নিহত কর্মীর বড় ছেলে আবু বকর ছিদ্দিক (১৫) ও মেজ ছেলে আলী আহসানের (১৩) হাতে প্রাথমিক অনুদানের একটি খাম তুলে দেন।
এ সময় নিহত কর্মীর তিন বছরের শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে শফিকুর রহমান ঘোষণা করেন, ‘এখন থেকে এই শিশুসন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে কর্মক্ষম না হওয়া পর্যন্ত পরিবারটির সকল সদস্যের পুরো দায়িত্ব নিল জামায়াতে ইসলামী, ইনশা আল্লাহ।’ নিহতের স্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি মন খারাপ করবেন না। এই পৃথিবী থেকে আমরাও একদিন চলে যাব। তিনি ভালো কাজের ওপরে থেকে বিদায় নিয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে শহীদ হিসেবে কবুল করুক।’
পরে গ্রামবাসীর উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আজকে অল্প কিছু টাকা হাতে তুলে দিয়েছি। প্রতি মাসের ১ তারিখে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের হাতে তুলে দেব, ইনশা আল্লাহ। তবে এইটা ঠিক আমরা তাদের বাবাকে ফিরিয়ে দিতে পারব না। নিশ্চয়ই তাদের নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। আল্লাহ প্রিয় ভাইটির স্বপ্নগুলো পূরণ করে দিক।’
এর আগে আজ বিকেলে শফিকুর রহমান নিহত জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দীনের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাসুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুবারক হোসাইন, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ইয়াছিন আরাফাত, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির মুহাম্মদ শাহজাহান, সেক্রেটারি সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী প্রমুখ।
আরও পড়ুনকুমিল্লায় জামায়াত আমিরের গাড়িবহর যানজটে, নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বাসচাপায় কর্মীর মৃত্যু২২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত র আম র আল ল হ পর ব র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
রাজস্ব আদায়ে পদক্ষেপ নিন
স্টেশন বন্ধ। কিন্তু ট্রেন আসে, ট্রেন যায়। যাত্রীরাও ওঠানামা করেন। তবে টিকিট ছাড়া। কারণ, স্টেশন বন্ধ থাকায় কোনো টিকিট বিক্রি হয় না। কুমিল্লার লাকসাম থেকে রেলপথে নোয়াখালী পর্যন্ত প্রায় ৫২ কিলোমিটারের দূরত্বে এ রকম ছয়টি স্টেশন আছে। প্রায় দুই দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে স্টেশনগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতগুলো স্টেশন থেকে বিনা টিকিটে যাত্রী ওঠানামা করেন। ফলে প্রতিনিয়ত রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দীর্ঘ রেলপথটিতে মোট ১২টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে লাকসামের দৌলতগঞ্জ, মনোহরগঞ্জের খিলা ও বিপুলাসার, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর বজরা, নোয়াখালী সদরের মাইজদী ও হরিনারায়ণপুর স্টেশনের কার্যক্রম ২০০৩ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে লাকসাম পৌর শহরের দৌলতগঞ্জ স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আগে এই রেলপথে প্রতিদিন আন্তনগর, এক্সপ্রেস, লোকাল, ডেমুসহ অন্তত ১২টি ট্রেন চলাচল করত। এ রেলপথে এখন আন্তনগর উপকূল এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন চলাচল করে। আর তিনটি ভিন্ন নামে আরেকটি এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে, যেটি স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে লোকাল ট্রেন হিসেবে পরিচিত।
পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, জনবলসংকটসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে এসব স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তবে মানুষের কথা চিন্তা করে এখনো ট্রেনসেবা চালু রাখা হয়েছে। এসব স্টেশনে বিনা টিকিটে যাত্রী ওঠার পাশাপাশি বুকিং ছাড়াই মালামালও পারাপার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও প্রতিনিয়ত রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয় যে মানুষের কথা চিন্তা করে ট্রেনসেবাটি তারা বন্ধ করেনি। তবে স্টেশনগুলো আবার চালু করাও সময়ের দাবি। কারণ, স্থানীয় লোকজনই বলছেন স্টেশনগুলো দিয়ে বিপুল মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। এক ব্যক্তি বলছেন, ‘খিলা ও বিপুলসার স্টেশন আমাদের গ্রামের দুই দিকে কাছাকাছি। একসময় এই স্টেশনগুলো জমজমাট ছিল। দিনরাত ট্রেনের হুইসেল বাজত। কিন্তু এখন জৌলুশ নেই। স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় রাতে সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডাসহ অসামাজিক কার্যক্রমও চলে। আমরা চাই, রেলের সোনালি দিনগুলো ফিরে আসুক।’
দৌলতগঞ্জ স্টেশনটি দেড় দশক আগেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্টেশনটি ডাকাতিয়া নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় নদীপথে আসা মালামাল ট্রেনে আনা-নেওয়ার জন্য এটিকে ব্যবহার করা হতো। এখন টিকিট বেচা ও মালামাল পরিবহনে বুকিং কার্যক্রম বন্ধ। কিছু জায়গা এখন দখল হয়ে কয়েক শ অস্থায়ী দোকান বসে গেছে, যার মধ্যে গড়ে উঠেছে লাকসামের বৃহৎ কাঁচাবাজার।
আমরা আশা করব, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করে স্টেশনগুলো আবারও চালু করা হবে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারছি। এখন কবে নাগাদ পরিবর্তন দেখতে পাব আমরা, সেটিরই অপেক্ষা।