জিম্মিদের একসঙ্গে মুক্তি দিতে ‘রাজি’ হামাস
Published: 22nd, February 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির অধীনে আরও ছয় জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। শর্ত মানলে বাকি সব জিম্মিকে একসঙ্গেই মুক্তি দিতে রাজি আছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি।
আজ শনিবার মুক্তি পাওয়া ছয় জিম্মি হলেন এলিয়া কোহেন, ওমের শেম-তোভ, ওমের ওয়েনকার্ট, তাল শোহাম, আভেরা মেনজিসটু ও হিশাম আল-সাইয়েদ। তাঁদের মধ্যে আভেরা ও হিশাম বেসামরিক নাগরিক। এ দুজন প্রায় এক দশক ধরে গাজায় বন্দী ছিলেন। এই ছয় বন্দীর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ৬২০ ফিলিস্তিনির মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।
গত ১৯ জানুয়ারি এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপের ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিচ্ছে হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার চার ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করে হামাস। তবে ওই দিন শিরি বিবাসের দেহাবশেষের জায়গায় ভুল করে অন্য কারও দেহাবশেষ হস্তান্তর করা হয়েছিল। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ইসরায়েল। অবশ্য পরদিন শিরি বিবাসের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মরদেহটি শিরি বিবাসের বলে নিশ্চিত করেছে তাঁর পরিবার।
এদিকে শর্ত মানলে এক ধাপে বাকি সব ইসরায়েলি জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তি দিতে হামাস প্রস্তুত রয়েছে বলে সংগঠনটির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের সব ধাপ বাস্তবায়নে হামাসের আন্তরিকতার বিষয়টিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেন, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে একসঙ্গে সব বন্দিবিনিময়ের কাজটি সম্পন্ন করতে প্রস্তুত রয়েছে হামাস। বিনিময়ে টেকসই যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার এবং কারাবন্দীদের মুক্তির বিষয়ে দখলদারদের (ইসরায়েল) প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।
তবে বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতিতে যেতে আগ্রহী নন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বেশির ভাগ জীবিত জিম্মি মুক্তি পাওয়ায় গাজায় আবারও যুদ্ধ শুরু করতে সরকারের উগ্রপন্থী শরিকেরা তাঁর ওপর চাপ দিচ্ছে।
আরও পড়ুনআরও ছয় জিম্মিকে ফেরত দেবে গাজা, প্রস্তুত ইসরায়েল৯ ঘণ্টা আগেদুই ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা
গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে বড় ধরনের অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেনারা হেবরন ও জেনিন এলাকায় দুই শিশুকে হত্যা করেছেন বলে গতকাল জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দুই শিশু হলো হেবরনের আয়মান নাসের আল-হায়মোনি (১২) আর জেনিনের রিমাস আল-আমোরি (১৩)।
হেবরনের দক্ষিণে আত্মীয়দের দেখতে যাওয়ার পথে আয়মানকে গুলি করে ইসরায়েলি বাহিনী। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিজেদের বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে থাকা রিমাসের পেটে গুলি করা হয়। তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।
কয়েক সপ্তাহ ধরে পশ্চিম তীরের জেনিন, তুলকারেম ও তুবাস এলাকায় ‘আয়রন ওয়াল’ নামে বড় ধরনের অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা প্রায় ছয় দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বৃহস্পতিবার তেল আবিবের দুটি শহরতলিতে ডিপোতে থাকা তিনটি ফাঁকা বাসে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পরই পশ্চিম তীরে আরও বিস্তৃত আকারে অভিযান চালানোর জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুনইসরায়েলে বাসে বিস্ফোরণের পর পশ্চিম তীরে বড় অভিযানের নির্দেশ নেতানিয়াহুর২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তিন শহীদ বোনের স্মৃতি নিয়ে শুরু শিল্প প্রদর্শনী
মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগ, যাঁরা যুদ্ধের নির্মম বাস্তবতার শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের প্রতীক হিসেবে তিন বোনের করুণ পরিণতির বিস্মৃত গল্পগুলো নিয়ে শুরু হলো শিল্প প্রদর্শনী ‘ত্রিবেণী’। জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালার গ্যালারিতে আজ বুধবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে আসমা, নাজমা ও ফাতেমা নামে তিন বোনের একসঙ্গে মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনা। ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মর্টার শেলের আঘাতে প্রাণ হারান এই তিন বোন। সেই হামলায় তাঁদের সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৬ জন।
বুধবার দুপুরে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আসমা বেগম, নাজমা বেগম ও ফাতেমা বেগম একসঙ্গে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও আহত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের এমন আত্মত্যাগের ঘটনাগুলোও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে জুলাই বিপ্লবের শহীদ আবু সাঈদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করা হবে।
এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ততোধিক নামে একটি সংস্থা। কিউরেট করেছেন তরুণ শিল্পনির্দেশক ওয়ারেসু ফাওমি। তিনি বলেন, এই প্রদর্শনী মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্যাগ স্বীকার করা মানুষের অজানা গল্পের প্রতিফলন। এটি শুধু শিল্পের জন্য নয়, বরং বিস্মৃত স্বপ্ন, সাহস ও স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অনন্য প্রয়াস। ফাওমি জানান, এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ওই তিন বোনের ব্যবহৃত পোশাক।
শহীদ তিন বোনের বড় ভাই বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের (পিএইচএফবিডি) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক এই প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগের প্রজন্মের ত্যাগের কথা কি আমরা মনে রেখেছি? মুক্তিযুদ্ধের সময়ের প্রথম দিকের শহীদ আমার তিন বোন। কিন্তু কোনো দিন তাঁদের কথা কেউ তুলে ধরেনি। এই প্রথমবারের মতো তাঁদের স্মৃতি স্মরণ করা হচ্ছে জনসমক্ষে।’
ত্রিবেণী প্রদর্শনীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের মর্টার শেলের হামলায় একসঙ্গে শহীদ হওয়া তিন বোনের স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে চিত্রকলা, ইনস্টলেশন, ভিজ্যুয়াল মাধ্যম এবং তাদের ব্যবহৃত পোশাকের প্রদর্শনীর মাধ্যমে। স্থান পেয়েছে মোট ৪৫টি শিল্পকর্ম।
বক্তব্য দেন শহীদ তিন বোনের বড় ভাই বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক