চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া আরেক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ শনিবার বিকেল পৌনে চারটা থেকে রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরিন করিম দুই আসামির জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। একই আদালত অন্য আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালত পুলিশের পরিদর্শক লুৎফর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া দুই আসামি হলেন মো.

সবুজ ও শরীফুজ্জামান। আর রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামির নাম শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মুহিত। সবুজ শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইসমাইল মোল্লার ছেলে, শরীফুজ্জামান ঢাকার সাভারের টানগেন্ডা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে এবং শহিদুল ইসলাম মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের বদর উদ্দিন শেখের ছেলে।

গতকাল শুক্রবার সাভারের ডেন্ডা এলাকা থেকে এই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ। পরে আজ বিকেলে তাঁদের আদালতে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. আহসানুজ্জামান।

আরও পড়ুনঢাকা-রাজশাহী রুটে চলন্ত বাসে ডাকাতির যে বর্ণনা দিলেন যাত্রীরা২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পুলিশ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, বেলা ৩টা ৪০ মিনিট থেকে রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত আসামি সবুজ ও শরীফুজ্জামানের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। অন্যদিকে আসামি শহিদুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

আদালত সূত্র জানায়, আসামি সবুজ ও শরীফুজ্জামান জবানবন্দিতে গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে বাসে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে তাঁরা জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, নারী যাত্রীদের কাছ থেকে গয়না ও টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় তাঁদের গায়ে হাত দিয়েছেন। তবে কোনো ধর্ষণ করেননি।

আরও পড়ুনচলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিন দিন পর মামলা২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এর আগে গত সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে ইউনিক রোড রয়েলসের (আমরি ট্রাভেলস) একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নেন ডাকাতেরা। তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে যাত্রীদের টাকাপয়সা, মালামাল লুণ্ঠন করেন। এ সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানিও করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওমর আলী নামের এক যাত্রী মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ডাকাতির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আন্তজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও পুলিশ চিহ্নিত করতে পেরেছে বলে তিনি দাবি করেন।

আরও পড়ুনচলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি: টাঙ্গাইলে চারজনকে গ্রেপ্তার১০ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনচলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন স্বীকারোক্তি দেবেন: পুলিশ৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুন‘অভিযুক্ত’ চালক-সুপারভাইজারকে আসামি না করায় প্রশ্ন বাদীর২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

শখের কলের গান ও একজন আব্দুল আলী

নিমাই দাঁড়ারে, তীর ভাঙা টেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়, কালা আমায় পাগল করলি রে, কাওয়ায় কমলা খাইতে জানে না, মেরা জুতা হে জাপানি, ঠাকুর জামাই এলো বাড়িতে– কালের সাক্ষী হয়ে থাকা জনপ্রিয় এসব গান সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে অহরহ শুনতে পেতাম অথবা দূরের কোনো গ্রাম থেকে গানের আওয়াজ বাতাসে ভেসে আসত কানে। সেসব দিন কেবল আমাদের জীবন থেকেই হারিয়ে যায়নি; বরং হারিয়ে যেতে বসেছে এ গল্পগুলো। ইন্টারনেটের সাহায্যে ইউটিউব কিংবা গুগলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে গান শোনা অতি সহজ হয়েছে। অথচ কয়েক দশক আগেও গান শোনার প্রধান মাধ্যম ছিল মাইক। ছিল কলের গান নামক আরও একটি যন্ত্র; যা রেকর্ডের মাধ্যমে গান শোনা যেত। কলের গান এ দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে অনেক আগেই। তবে কেউ কেউ সেই স্মৃতি ধারণ করে আছেন এখনও। এমন একজন ব্যক্তি যার নাম আব্দুল আলী। তিনি ঢাকা জেলার দোহারের ঘাটা গ্রামের কুটি ব্যাপারীর ছেলে। পেশায় একজন মাইক ব্যবসায়ী। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি নিজেই আটকে গেছেন এক অন্ধপ্রেমে। অসংখ্য কলের গানের সংগ্রাহক তিনি। অন্তত ৭০টি রেকর্ডে ৫ শতাধিক গান রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। কলের গানের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেলেও ৬০ দশকের অনেক গান তিনি যত্নে রেখেছেন তাঁর শখের তালিকায়। এটি এখন তাঁর সুখস্মৃতি। মন চাইলেই তিনি এখনও কলের গান শোনেন। অন্যকে শোনান। কেউ কেউ কলের গান দেখতে আসেন তাঁর বাড়িতে। আব্দুল আলীর বয়স এখন ৭৮ বছর। অনেক স্মৃতি মনে করতে পারেন না; আবার যেগুলো মনে আছে, সে কথা ঠিকঠাক গুছিয়ে বলতে পারেন না। তবে জীবনের অধিকাংশ সময় যে পেশায় কাটিয়েছেন সে কথা বলতে তিনি উদগ্রীব! জীবন সায়াহ্নে এসে ফেলে আসা দিনগুলো মনে পড়তেই মুহূর্তেই জীবন রঙিন হয়ে ওঠে।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম আব্দুল আলীর। যখন বাবা মারা যান তখন তাঁর বয়স ১৫। মা, দুই ভাই, দুই বোনের সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। 
ওই বয়সে উপার্জনের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। উপজেলার মধুরচর এলাকার পূর্ব পরিচিত আলেপ সরদারের সঙ্গে ধান কাটার আগের দিন বিকেলে তাদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, ওই বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানের জন্য মাইক ভাড়া করে আনা হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও মাইক বাজাতে পারছেন না মাইকম্যান। তখন তিনি মাইক বাজানোর চেষ্টা করেন এবং হাতের স্পর্শে বেজে ওঠে! তখন আনন্দে ভরে যায় পুরো বাড়ি। ওইদিন খুশি হয়ে দুই পয়সা দিয়ে পুরস্কৃত করা হয় তাঁকে। পরেরদিন ভোরে আলেপ সরদারের সঙ্গে ধান কাটার জন্য চলে যান ফরিদপুরে। দুই মাস ধান কাটার পর ফের বাড়িতে চলে আসেন। কিছুদিন অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজও করেন। নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় উপজেলার জয়পাড়া বাজারে বাদলের মাইকের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। এভাবে কেটে যায় কয়েক বছর। একটা সময় নিজ বাড়িতে মাইকের দোকান দেন। একটি মাইক দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। নাম দেন বুলেট মাইক সার্ভিস। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ব্যবসা। আব্দুল আলীর শাশুড়ি জমি বিক্রি করে কিছু টাকা দিলে ১৬০ টাকা দিয়ে কলের গান কেনেন। মাইক এবং কলের গান ভাড়ায় দিয়ে আয় থেকে ভালোই চলছিল। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে এর ব্যবহার। একদিকে সংসারে ব্যয় বাড়তে থাকে এবং অন্যদিকে আয় কমতে থাকে। দুই মেয়েকে বিয়েও দেন। এক সময় মাইক ভাড়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন তিনি। হারানো বিজ্ঞপ্তি ও ঘোষণা ছাড়া অন্য কোনো কাজে মাইকের ব্যবহার উঠে যাওয়ায় সীমিত আয় দিয়েই চলে আব্দুল আলীর সংসার।  
আব্দুল আলী বলেন, ‘দোহার উপজেলায় সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করেছি। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আমার বাড়িতে আসত মাইক ভাড়ার জন্য। এখন তা কেবলই স্মৃতি। মাইকের দিন শেষ হওয়ায় ঘরেই পড়ে রয়েছে এসব। শখের কলের গানের সেটটি আছে। অনেকে কিনতে চেয়েছেন। বিক্রি করিনি। স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি। জীবিত থাকাকালে বিক্রি করব না। আমার মৃত্যুর পর কেউ যদি বিক্রি করে দেয় তখন আফসোস থাকবে না।’ v
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে বাস-অটোরিশার সংঘর্ষে একজন নিহত
  • একজন আরেকজনের প্রতিপক্ষ হলে ক্ষতি সবার : সারজিস
  • গাইবান্ধায় ট্রাক্টর-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১
  • শ্রীনগরে অটোরিকশা ‘ছিনতাই চক্রের’ তিন সদস্যকে স্থানীয়দের পিটুনি, একজনের মৃত্যু
  • মুন্সীগঞ্জে অটোরিকশা ছিনতাই, ‘গণপিটুনিতে’ নিহত ১
  • ড. ইউনূসকে এক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই: সারজিস
  • বিএমডিএর আরো ২ প্রকৌশলী সাময়িক বরখাস্ত, ব্যাখ্যা তলব
  • লুঙ্গি পরার কারণ ব্যাখ্যা করলেন বুবলী
  • হলান্ড, এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস—কার বেতন বেশি
  • শখের কলের গান ও একজন আব্দুল আলী