হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) তখন প্রতিষ্ঠা হয়নি। দিনাজপুরের বাঁশের হাট নামক স্থানে যখন কৃষি কলেজ ছিল, তখন ভাতের হোটেল দেন মো. আজাহার আলী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রায় ৪০ বছর ধরে হোটেল ব্যবসা করা আজাহার আলী আস্তে আস্তে শিক্ষার্থীদের বন্ধু হয়ে ওঠেন।

শিক্ষার্থীরা তাকে বন্ধু বলেই ডাকেন, তিনিও তেমন। বর্তমানে তার হোটেলটি হাবিপ্রবি সংলগ্ন মহাবলীপুর মোড়ে।

সকাল হয়েছে, খাবার খেতে হবে। আবাসিক হল ও মেসের শিক্ষার্থীরা চলে যান বন্ধু আজাহার আলীর হোটেলে। সেখানে তারা ভাত, ডাল, আলু ভর্তা, সবজি, ডিমের তরকারি আর রুটি খেতে পারেন সাশ্রয়ী মূল্যে।

দুপুরের জন্য তিনি রান্না করেন নিজ হাতে কেনা টাটকা রুই, কাতল, টাকি, শোল আর নদী থেকে ধরা নানা পদের ছোট মাছের তরকারি। তবে প্রতিদিনই সব মাছ পাওয়া যায় না। একেকদিন রান্না করেন একেক রকম মাছ। যাতে শিক্ষার্থীরা একই মাছ খেতে খেতে বিরক্ত না হন। মাছের সঙ্গে থাকে ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, ডিম ডালের তরকারি, ভর্তা ও সবজি।

তার হোটেলে ৫০ টাকা প্লেটে পাওয়া যায় ছোট মাছ। তবে কেউ যদি বলেন, বন্ধু ৩০ টাকার ছোট মাছ দিও। তিনি দিয়ে দেন নির্দ্বিধায়। রুই, কাতলা ৫০ টাকা করে হলেও আকারে একটু ছোট মাছগুলো বিক্রি হয় ৪০ টাকা দরে। গরুর মাংস ১০০ টাকায় তিন টুকরা এবং পরে অতিরিক্ত ঝোলের সঙ্গে তিনি দেন আরো একটি ছোট টুকরা। মুরগী বিক্রি করেন ৫০ টাকা বাটি। আর ২৫ টাকায় বিক্রি করেন ডিমের তরকারি, সঙ্গে ডাল ফ্রি। রাতের খাবারে জন্য তার হোটেলে থাকে ভাত, মাছ, মুরগি, সবজি আর ভর্তা।

ভাত খেয়েছেন, হঠাৎ পকেটে দেখেন মানিব্যাগ নেই কিংবা মানিব্যাগ থাকলেও তাতে টাকা নেই। সমস্যা নেই, শিক্ষার্থীরা ‘বন্ধু পরে দিচ্ছি’ বলে চলে যান। তার স্বভাবসুলভ উত্তর, ‘ঠিক আছে বন্ধু, পরে মনে করে দিয়ে যেও।’

শিক্ষার্থীরা তাকে কেনই বা বন্ধু বলবেন না। আজহার আলী তাদের কোন শর্ত ছাড়াই নিয়মিত বাকি খাওয়ান। তবে বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই আবার টাকা দেন না।

রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যারা টাকা দেয় না, তাদের থেকে টাকা আদায় করতে কখনো কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? বন্ধু জবাবে বলেন, “দেখো বন্ধু, কিসের পদক্ষেপ নেব। টাকা নেই, দেয়নি। টাকা থাকলে তো অবশ্যই দিত।”

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমার টাকা মারি খাবে না। ওই বহুতদিন পরে হলেও টাকা দেয়। অনেকেই আছে, খোঁজ নিয়ে আমার বিকাশ নাম্বার সংগ্রহ করে টাকা পাঠায় দেয়। কারো কাছে আবার টাকা পাব না, সেও আমাকে খরচ করার জন্য ১-২ হাজার টাকা পাঠায় দেয়।”

একগাল হেসে “সবই খোদাতায়ালার হুকুম বন্ধু, তুমি আমি কিছু না,” যুক্ত করেন আজহার।

বন্ধুর হোটেলটির বেড়া দেওয়া হয়েছে বাঁশ দিয়ে, উপরে টিনের চালা। হোটেলের একপাশে অন্য মালিকের ঘরের ইটের দেয়াল থাকায় সেদিকে বেড়া নেই। শীতের বাতাস ঠেকাতে টানিয়েছেন সিমেন্টের বস্তা। বাঁশের বেড়া দেওয়া এ হোটেলে শুধু শিক্ষার্থীরা না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মককর্তারাও খেতে আসেন।

হাবিপ্রবির মার্কেটিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী মিনহাজ রাইজিংবিডিকে বলেন, “বন্ধুর হোটেলে শুধু খাবার খেতে যায় না। সেখানে তার হাসিমাখা মুখও দেখতে যায়। বন্ধু যেমন ভালো মানের খাবার পরিবেশন করেন, তেমনি সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহারও করেন। তার হোটেলে বিভিন্ন রকমের খাবার পাওয়া যায়। আমরা বন্ধুরা মিলে ক্ষুধাতুর পেটে তার হোটেলে এসে নিজেদের তৃপ্ত করি। তিনি এভাবেই আমাদের বন্ধু হয়ে থাকুক। তার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।”

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র তরক র হ র আল বন ধ র আজ হ র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ৭১ এর শহীদ বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার সকাল ৬টার দিকে তিনি ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধান উপদেষ্টা।

এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

এর আগে ভোর ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে ৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধান উপদেষ্টার পর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর একে একে বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক–সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ