প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল
Published: 22nd, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর দায়ের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এতে করে সরকারের নিয়োগ দেওয়া প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল পরিচালিত হবে।
আজ শনিবার এ তথ্য জানান হাইকোর্টের আইনজীবী ইফতেখার আহমেদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সরকারি অনুদান আত্মসাৎ এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগের ব্যাপারে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদপ্তর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই ব্যাপারে গঠিত তদন্ত কমিটি বিস্তারিত অনুসন্ধান শেষে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। যাতে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়।
তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ সালে হাসপাতালের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেয় সমাজসেবা। সংস্থার পরিচালক মোহাম্মদ সাব্বির ইমাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মোস্তফা মোস্তাকুর রহিম খানকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
অধ্যাপক জাহাঙ্গীর প্রশাসক নিয়োগের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। শুনানির পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ জাহাঙ্গীর চৌধুরীর করা রিটটি খারিজ করে দেন। এতে করে প্রশাসক নিয়োগের আদেশ বহাল থাকে। ফলে এখন থেকে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আর কোনো বৈধতা থাকল না। প্রশাসকই এই হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে জানান আইনজীবী।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সভাপতির পদত্যাগসহ ১৪ দফা দাবিতে টানা আন্দোলনের জেরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। এতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক ও সমাজসেবা অধদিপ্তরের উপ-পরচিালককে সদস্যসচিব করা হয়েছিল।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
১৮ বছর আগে চাকরিচ্যুত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা পদে ফিরতে পারবেন কি না, জানা যাবে ২৫ মার্চ
১৮ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত ৮৫ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন কি না, তা আগামী ২৫ মার্চ জানা যেতে পারে।
এ-সংক্রান্ত আপিল ও পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের ওপর আগামী ২৫ মার্চ রায়ের জন্য তারিখ ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ রায়ের এই তারিখ ধার্য করেন।
প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের দেওয়া রায়কে কেন্দ্র করে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা একটি আপিল ও চারটি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন, যার ওপর আজ শুনানি শেষ হলো। এর আগে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল ৮৫ কর্মকর্তার আপিল মঞ্জুর করে চাকরিতে পুনর্বহালের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন।
আদালতে আপিলকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। পুনর্বিবেচনার আবেদনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও মো. রুহুল কুদ্দুস শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন প্রথম আলোকে বলেন, আপিল ও রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আগামী ২৫ মার্চ রায়ের জন্য তারিখ ধার্য করেছেন। চাকরিচ্যুত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন কি না, তা সেদিন জানা যাবে।
মামলার পূর্বাপরআইনজীবীদের তথ্যমতে, ২০০৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে ৩২৭ জনকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে অস্থায়ীভাবে নির্বাচিত করা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের এই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ওঠে। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৩২৭ জনের মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ৮৫ জনকে একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর চাকরিচ্যুত করা হয়। এর বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত প্রার্থীরা মামলা করলে ২০০৯ সালের ২৩ মার্চ তা খারিজ করে রায় দেন প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল। এর বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল করেন। ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল ৮৫ কর্মকর্তার আপিল মঞ্জুর করে চাকরিতে পুনর্বহালের পক্ষে রায় দেন।
প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক চারটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ২০১০ সালের ২৯ এপ্রিল আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন, বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে সরকারপক্ষ পৃথক আপিল করে। সরকারপক্ষের করা আপিলগুলো মঞ্জুর করে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর রায় দেন আপিল বিভাগ। এই রায়ে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল দেওয়া রায় (৮৫ কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের পক্ষে) বাতিল করা হয়।
আপিল বিভাগের ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ২০২৩ সালে পৃথক পাঁচটি আবেদন করেন চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা। শুনানি নিয়ে একটি রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ গত বছরের ৬ নভেম্বর লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে আদেশ দেন। একই সঙ্গে এই আপিলের (রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত) সারসংক্ষেপ চার সপ্তাহের মধ্যে দায়ের করতে আবেদনকারীপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আপিলের সঙ্গে অপর চারটি রিভিউ আবেদন শুনানিতে থাকবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি হয়।