প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ঘিরে আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর স্মৃতিচারণায় দিনভর মুখর ছিল বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পিঙ্গলাকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন পর পুরোনো সহপাঠীদের দেখে পুলকিত ও রোমাঞ্চিত হন অনেকে। গল্প, আড্ডায় মজেন। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ফিরে যান সেই কৈশোর-তারুণ্যে বিদ্যালয়জীবনে।

আজ শনিবার দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ও এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোশাররফ করিমকে নিয়ে পুনর্মিলনীর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন। অভিনেতা মোশাররফ করিমের গ্রামের বাড়ি ও জন্ম এই পিঙ্গলাকাঠি গ্রামে।

অনুষ্ঠানে জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, একটি মেধাবী প্রজন্ম ও সৃষ্টিশীল নেতৃত্ব কোনো জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এ জন্য শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে নিমগ্ন না রেখে তাদের সৃজনশীলতা ও চিন্তাশক্তি বিকাশের উদ্যোগ নিতে হবে। এটা না করতে পারলে মেধাবী ও সৃষ্টিশীল প্রজন্ম গড়ে উঠতে পারে না। পিঙ্গলাকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী শুধু একটি মিলনমেলা নয়, এটি নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার বিকাশের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে অনুপ্রাণিত করবে।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অভিনেতা মোশাররফ করিম শৈশবের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমি আজ যে জায়গায় পৌঁছেছি, তার ভিত্তি রচিত হয়েছে এই পাঠশালায়। এখানকার নাটক ও যাত্রাপালায় অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়েই আমার অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছিল।’ পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষার পাশাপাশি আনন্দময় জীবন গঠনের জন্য শিল্প-সংস্কৃতির চর্চারও আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পিঙ্গলাকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শুরু থেকেই শিক্ষার মানোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু বরিশাল নয়, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্র সুনামের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও অভিভাবকেরাও উপস্থিত ছিলেন। দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল স্মৃতিচারণা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠানে ৭ দেশের কবি

তারা ভিন দেশের নাগরিক। কবিতা পাঠ করলেন নিজ নিজ ভাষায়। জানালেন তাদের অনুভূতিও। আবার সেই কবিতা আর অনুভূতির মর্মার্থ ইংরেজিতে বুঝিয়েও দিলেন সবাই। 

শুক্রবার কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ‘সার্ধশততে একুশের দ্রোহ’ শিরোনামে ভিন্নধর্মী এ অনুষ্ঠান হয়। এর আয়োজন করে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (কসউবি) প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ।  

কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সকাল ১০টায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন জাপান, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, কাজাখিস্তান ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। যারা কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।

বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে জাপানি নাগরিক মাছিকো ফুকোমারা বলেন, নিজের ভাষায় কথা বলতে পারাটা অনেক আনন্দের। স্কুল দেখে আমি আমার নিজের দেশ, বাড়ি, শৈশব ও নিজের ভাষাকে মনে পড়ছে। তিনি জানান, এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছেন। 

নাইজেরিয়ান নাগরিক হাওয়া হাসান কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এখানে আমরা অনেক ভাষাভাষী মানুষ একসঙ্গে হয়েছি, এটা খুব ভালো লাগছে।

ফিলিপাইনের নাগরিক হেলেন বেশ কয়েক বছর ধরেই আছেন বাংলাদেশে। তিনি বলেন, কথা বলতে পারার স্বাধীনতা অনেক বড় বিষয়। অনেক আনন্দের।

ইসাবেল সুয়োরাজ কলম্বিয়ান নাগরিক। এই আয়োজনে এসে তিনি শিশু বয়সে ফিরে যাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, স্কুলের বাচ্চাদের দেখে আমার স্কুলের সময়ের কথা মনে পড়ছে। 

কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এম এম সিরাজুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের গৌরবময় ১৫০ বছর পূর্তির ধারাবাহিকতায় এ আয়োজন মাতৃভাষার বৈচিত্র্য ও ঐক্যের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে। 

তিনি বলেন, বিদেশিদের উপস্থিতি মাতৃভাষার গুরুত্বকে বিশ্বজনীন পরিসরে তুলে ধরার প্রয়াস থেকেই এমন আয়োজন।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কবি জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত শহীদ মিনারটি কক্সবাজার জেলার প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে স্বীকৃত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষকদের অবদান গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে খালেদ মোশাররফ, যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তার নেতৃত্বে কক্সবাজার হাইস্কুলের ছাত্ররা ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়। 

বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা আয়োজনের অংশ হিসেবে ভিন্নধর্মী এ আয়োজনের কথা জানিয়ে ছাত্র পরিষদের সংগঠক ইয়াসির আরাফাত জানান, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ দিবসেই তাদের কর্মসূচি থাকবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ