যে সংস্থার নাম কেউ শোনেনি, তারাই পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ মিলিয়ন ডলার: ট্রাম্প
Published: 22nd, February 2025 GMT
বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে এমন এক সংস্থা ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে, যে সংস্থার নাম আগে কেউ শোনেনি বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সংস্থায় মাত্র দুজন কাজ করেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ট্রাম্প স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এ কথা বলেন। সেখানে তিনি গভর্নরদের এক ওয়ার্কিং সেশনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। একই অনুষ্ঠানে ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশকে অর্থ দেওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের ইউটিউব চ্যানেলে সেই বক্তৃতার ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতাবিষয়ক বিভাগ (ডিওজিই) জানিয়েছিল বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ডিওজিই ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্প ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’-এ ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের (২৯ মিলিয়ন) অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে।
ডিওজিইর ওই বক্তব্যের পর গতকাল ট্রাম্প আবার ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক রাজনীতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার এমন এক সংস্থার কাছে গেছে, যে সংস্থার নাম আগে কেউ শোনেনি। তিনি বলেন, ছোট একটি সংস্থা, এখান থেকে ১০ হাজার ডলার, সেখান থেকে ১০ হাজার ডলার পায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ২৯ মিলিয়ন ডলার।
সেই সংস্থায় মাত্র দুজন কাজ করেন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, তারা (দুই কর্মী) দারুণ খুশি। তারা খুব ধনী। শিগগিরই ভালো বিজনেস সাময়িকীতে তারা স্থান পাবে।’
ভারতের প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘২১ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হচ্ছে আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতকে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য। আমাদের কি হবে! আমিও চাই ভোটার উপস্থিতি বাড়ুক।’
ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে নেপাল দুটি প্রকল্পের জন্য ৩৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এর মধ্যে জীববৈচিত্র্যের জন্য নেপাল পেয়েছে ১৯ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া সার্বিয়া, মলদোভাসহ আরও কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থ পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে কী কারণে এত শক্তিশালী ভূমিকম্প হলো
মিয়ানমারে গতকাল শুক্রবার দুপুরে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছিল প্রতিবেশী থাইল্যান্ডেও। ভূমিকম্পের কাঁপুনি বাংলাদেশ, ভারত, কম্বোডিয়া ও চীন পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পে বেশির ভাগ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মিয়ানমারের প্রাচীন রাজধানী মান্দালয়ে। সেখানে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে এবং অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। মান্দালয়ের অবস্থান ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল সাগাইংয়ের কাছাকাছি ছিল বলেই সেখানে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মতে, এ ভূমিকম্পে দেশটিতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের ভূমিকম্প ঝুঁকি মূল্যায়ন অনুসারে, ১৯৩০ সালে মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বাগো ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার হয়েছিল। ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ৫৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পর থেকে দেশটিতে বেশ কয়েকবার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
প্রায় চার বছরের গৃহযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি ভূমিকম্পের জন্য এত ঝুঁকিপূর্ণ কেন? আর সর্বশেষ ভূমিকম্পটি কতটা তীব্র মাত্রার ছিল?
মিয়ানমারের মান্দালয় ভবন ধসে পড়ে, রাজপ্রাসাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ইরাবতী নদীর ওপর প্রায় শতবর্ষের পুরোনো আভা সেতু ধসে পড়ে। মিয়ানমারের বর্তমান রাজধানী নেপিডো এবং সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনেও ক্ষতি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সারা দেশে কমপক্ষে ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন।কী কারণে ভূমিকম্প হয়
প্রথমে ভূমিকম্প আসলে কী, তার একটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া যাক। পৃথিবী তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো কোর, ম্যান্টল ও ক্রাস্ট। পৃথিবীর কেন্দ্রকে কোর বলা হয়। গলিত এই অংশের বেশির ভাগই ধাতব দিয়ে তৈরি। কোরের ওপরের উত্তপ্ত প্রায় কঠিন শিলার স্তর দিয়ে তৈরি ম্যান্টল। আর এর বাইরের বিশেষ আকৃতির ভূত্বককে বলা হয় ক্রাস্ট। এটি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল টেকটোনিক প্লেট দিয়ে গঠিত।
পিচ্ছিল আবরণের ওপর বিভিন্ন গতিতে এবং বিভিন্ন দিকে এসব টেকটোনিক প্লেটের চলাচলের কারণে শক্তি তৈরি করে। টেকটোনিক প্লেটগুলো একটির ওপর থেকে আরেকটি সরে গেলে পুঞ্জীভূত শক্তি নির্গত হয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠে কম্পন অনুভূত হয়, যাকে আমরা ভূমিকম্প বলি। যখন এই শক্তি সমুদ্রের নিচে নির্গত হয়, তখন এটি একের পর এক দৈত্যাকার তরঙ্গ তৈরি করে, যাকে আমরা সুনামি বলে জানি।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের (ইউএসজিএস) ভূকম্পনবিদ উইল ইয়েকের মতে, ভূমিকম্পের মূল ধাক্কার কারণে পৃথিবীর চাপের যে পরিবর্তন হয়, তার কারণে আফটার শক বা পরাঘাত হয়।
মিয়ানমারের ভূপৃষ্ঠের নিচে কী আছে
দুটি টেকটোনিক প্লেট—ভারত ও ইউরেশিয়া প্লেটের মধ্যে মিয়ানমারের অবস্থান, যা দেশটিকে ভূমিকম্পের বিশেষ ঝুঁকিতে ফেলেছে।
এ দুটি প্লেটের মধ্যবর্তী সীমানাকে সাইগং ফল্ট বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা এটিকে মিয়ানমারের মান্দালয় ও ইয়াঙ্গুনের মতো শহরগুলোর মধ্য দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার (৭৪৫ মাইল) দীর্ঘ একটি সরলরেখা হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা লাখো মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
ইউএসজিএসের মতে, ভারত ও ইউরেশিয়া প্লেটের মধ্যে ঘর্ষণের কারণে মিয়ানমারে ভূমিকম্প হয়েছিল, যাকে ‘স্ট্রাইক-স্লিপ ফল্টিং’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক সায়েন্স মিডিয়া সেন্টারের উদ্ধৃতি দিয়ে ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের টেকটোনিকস বিশেষজ্ঞ ড. রেবেকা বেল দুটি প্লেটের মধ্যবর্তী সীমানাকে ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত সান আন্দ্রেয়াস ফল্টের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই সান আন্দ্রেয়াস ফল্টের কারণে ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের নর্থরিজে মারাত্মক ভূমিকম্প হয়েছিল।
ড. রেবেকা বেল বলেন, লম্বা ও সোজা প্রকৃতির ফল্টের অর্থ হলো ভূমিকম্প বৃহৎ এলাকাজুড়ে ফাটল তৈরি করতে পারে। আর ফল্টের ক্ষেত্র যত বড় হবে, ভূমিকম্পও তত বড় হবে।
সর্বশেষ ভূমিকম্পের তীব্রতা কত ছিল
মোমেন্ট ম্যাগনিটিউড স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপ করা হয়। ১৯৭০-এর দশকের বিখ্যাত রিখটার স্কেলের পরিবর্তে এ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।
গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারে অনুভূত ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার ভূমিকম্পকে শক্তিশালী ভূমিকম্প বলে ধরা হচ্ছে। মিয়ানমারের পাশাপাশি থাইল্যান্ডেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন একটি ৩৩ তলা উঁচু ভবন ধসে গেছে। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে আটজন। ধ্বংসস্তূপের নিচে কয়েক ডজন নির্মাণশ্রমিক আটকা পড়েছেন।
মিয়ানমারের মান্দালয়ে ভবন ধসে পড়ে, রাজপ্রাসাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ইরাবতী নদীর ওপর প্রায় শতবর্ষের পুরোনো আভা সেতু ধসে পড়ে। মিয়ানমারের বর্তমান রাজধানী নেপিডো এবং সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনেও ক্ষতি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সারা দেশে কমপক্ষে ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন।
ইউএসজিএস অনুমান করেছে, মিয়ানমারে প্রায় আট লাখ মানুষ ভয়াবহ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বসবাস করছেন। ফলে আগামী দিনগুলোতে মৃতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কতটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে
ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল তুলনামূলক কম, মাত্র ১০ কিলোমিটার (ছয় মাইল) গভীরতায়।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়্যাল হলোওয়ের আর্থ সায়েন্সেস বিভাগের ড. ইয়ান ওয়াটকিনসনকে উদ্ধৃত করে সায়েন্স মিডিয়া সেন্টার জানিয়েছে, অগভীর ভূমিকম্প অনেক বেশি ক্ষতি করতে পারে। কারণ, ‘গভীরতা থেকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানো পর্যন্ত ভূমিকম্পের শক্তি খুব বেশি নষ্ট হয় না।’
ক্যালিফোর্নিয়া, জাপানসহ বিশ্বের সক্রিয় ফল্টলাইন বরাবর কিছু অঞ্চলে ভূমিকম্প সহনীয় বিল্ডিং কোড তৈরি করা হলেও শুক্রবারের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের অবকাঠামো অপেক্ষাকৃত কম ভূমিকম্প সহনীয় ছিল।
ওয়াটকিনসন বলেছেন, শুক্রবারের ভূমিকম্প ২০২৩ সালে দক্ষিণ তুরস্কে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের মতো ক্ষয়ক্ষতি করতে পারত। বছরের পর বছর অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণের কারণে ওই ভূমিকম্পে অনেক ভবন ভেঙে পড়েছিল।