জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থক রিয়াজুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় রিয়াজুলের প্রতিবেশি ফুপু ফেরদৌসী বেগম (৫০) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুর্গাপুর উপজেলার তিওরকুড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ফেরদৌসি বেগম তিওরকুড়ি গ্রামের আবদুল জব্বারের স্ত্রী। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলামের প্রতিবেশি ফুফু। সংঘর্ষে নিহত ফেরদৌসি বেগমের স্বামী আবদুল জব্বারসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- রজুফা (৩২), মামুনুর রশীদ (৩৫), আবুল কালাম (৪৮), সাইদুর রহমান (৩৫), মো.

সাইনুল (৪৫), রাজিয়া (৫০), জিন্নাত আলী (৫০), জব্বার (৫৫), জেসমিন (৩৫) ও আলম (৪৮)। এদের মধ্যে জিন্নাত আলীর অবস্থা গুরুতর। গুরুতর আহত জিন্নাত আলীসহ ছয়জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সমর্থক। প্রতিবেশি মামুনুর রশিদ বিএনপির সমর্থক। তাদের দু’পক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রিয়াজুলের দখলে থাকা বিরোধপূর্ণ জমি কয়েক দফা দখলের চেষ্টা করেন বিএনপির সমর্থক মামুনুর রশীদ। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা মারামারির ঘটনা ঘটে।

আজ শনিবার সকালে মামুনুর রশিদ তার লোকজন নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলামের বাড়িতে হামলা করেন। রিয়াজুল ওই সময় বাড়িতে ছিলেন না। দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিশোঁটা নিয়ে রিয়াজুলের বাড়িতে হামলা হলে প্রতিবেশি আত্মীয়-স্বজনরা তা প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুরুল হুদা জানান, হামলায় ফেরদৌসি বেগম গুরুতর আহত হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীয়রা। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অন্যরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।

ওসি আরও জানান, এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ৫-৭ জনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র য় জ ল ইসল ম এ ঘটন উপজ ল ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠানে ৭ দেশের কবি

তারা ভিন দেশের নাগরিক। কবিতা পাঠ করলেন নিজ নিজ ভাষায়। জানালেন তাদের অনুভূতিও। আবার সেই কবিতা আর অনুভূতির মর্মার্থ ইংরেজিতে বুঝিয়েও দিলেন সবাই। 

শুক্রবার কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ‘সার্ধশততে একুশের দ্রোহ’ শিরোনামে ভিন্নধর্মী এ অনুষ্ঠান হয়। এর আয়োজন করে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (কসউবি) প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ।  

কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সকাল ১০টায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন জাপান, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, কাজাখিস্তান ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। যারা কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।

বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে জাপানি নাগরিক মাছিকো ফুকোমারা বলেন, নিজের ভাষায় কথা বলতে পারাটা অনেক আনন্দের। স্কুল দেখে আমি আমার নিজের দেশ, বাড়ি, শৈশব ও নিজের ভাষাকে মনে পড়ছে। তিনি জানান, এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছেন। 

নাইজেরিয়ান নাগরিক হাওয়া হাসান কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এখানে আমরা অনেক ভাষাভাষী মানুষ একসঙ্গে হয়েছি, এটা খুব ভালো লাগছে।

ফিলিপাইনের নাগরিক হেলেন বেশ কয়েক বছর ধরেই আছেন বাংলাদেশে। তিনি বলেন, কথা বলতে পারার স্বাধীনতা অনেক বড় বিষয়। অনেক আনন্দের।

ইসাবেল সুয়োরাজ কলম্বিয়ান নাগরিক। এই আয়োজনে এসে তিনি শিশু বয়সে ফিরে যাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, স্কুলের বাচ্চাদের দেখে আমার স্কুলের সময়ের কথা মনে পড়ছে। 

কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এম এম সিরাজুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের গৌরবময় ১৫০ বছর পূর্তির ধারাবাহিকতায় এ আয়োজন মাতৃভাষার বৈচিত্র্য ও ঐক্যের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে। 

তিনি বলেন, বিদেশিদের উপস্থিতি মাতৃভাষার গুরুত্বকে বিশ্বজনীন পরিসরে তুলে ধরার প্রয়াস থেকেই এমন আয়োজন।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কবি জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত শহীদ মিনারটি কক্সবাজার জেলার প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে স্বীকৃত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষকদের অবদান গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে খালেদ মোশাররফ, যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তার নেতৃত্বে কক্সবাজার হাইস্কুলের ছাত্ররা ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়। 

বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা আয়োজনের অংশ হিসেবে ভিন্নধর্মী এ আয়োজনের কথা জানিয়ে ছাত্র পরিষদের সংগঠক ইয়াসির আরাফাত জানান, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ দিবসেই তাদের কর্মসূচি থাকবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ