ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ছয় জিম্মিকে ইসরায়েলের হাতে ফেরত দিয়েছে। আজ শনিবার নুসিরাত এবং রাফাহ থেকে পাঁচজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে, আর একজনকে গাজার অন্য এলাকা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ৬০২ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন। খবর আল জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসির
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, আজ শনিবার ছয় জিম্মিকে রেড ক্রসের হাতে তুলে দিয়েছে হামাস। তারা এখন ইসরায়েলের পথে রয়েছে।
এদিকে এক বিবৃতিতে শিরি বিবাসের মরদেহ পেয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। বলেছে, ‘আমাদের শিরিকে জিম্মি থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এবার তার মরদেহ বাসায় ফিরেছে।’ তবে এখনও ইসরায়েলের ফরেনসিক বিভাগ এ বিষয়ে কিছুই বলেনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদন বলছে, হামাস এ পর্যন্ত ১৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। এখনও হস্তান্তর করা হয়নি ১৪ জনকে। ইসরায়েলের দাবি, ১৪ জনের মধ্যে আটজন মারা গেছেন। অর্থাৎ, প্রথম দফায় ছয়জন ইসরায়েলিকে ফিরিয়ে দেবে হামাস।
এর আগে ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। বিনিময়ে ইসরায়েলও তাদের জেলে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপে মুক্তি দেওয়া এই ছয়জনই শেষ জিম্মি।
এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীতে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাও ছাড়তে হবে, আর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা পাবে বাড়ি ফেরার অনুমতি। এই সময়ে প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী লরিকে গাজায় ঢোকারও সুযোগ দেবে তেল আবিব।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে। এই ধাপেই মুক্তি পাবে পুরুষ ইসরায়েলি সেনারা। তৃতীয় ও শেষ ধাপে হবে গাজার পুনর্গঠন, যা শেষ হতে লাগবে কয়েক বছর।
চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, প্রথম ধাপে যে জিম্মিরা মুক্তি পাচ্ছেন তাদের মধ্যে বেসামরিক নারী, শিশু, নারী সেনা, বয়স্ক ব্যক্তি, অসুস্থ ও আঘাতপ্রাপ্ত বেসামরিকরা রয়েছেন।
এদিকে গাজায় হামাসের হাতে এখনও ৫৯ জিম্মি রয়ে গেছে, যাদের অর্ধেক সংখ্যকই মারা গেছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের সময়সীমা আগামী ২ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। দ্বিতীয় ধাপের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনায় বসতে ও সব জিম্মি এবং মৃতদেহ মুক্তি দিতে প্রস্তুত।
দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে মিসরের রাজধানী কায়রোতে যাবে দু’পক্ষের প্রতিনিধি দল। নেতানিয়াহু প্রতিনিধি পাঠাতে অস্বীকৃতি জানানোর পর প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ২৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৭৩৩ জন। গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
এএফপির তথ্যমতে, আজ শুক্রবার আরব নেতারা গাজা পুনর্গঠনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সম্মেলনে বসছেন। সৌদি পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ উমর করিম বলেন, ফিলিস্তিনি ইস্যুতে এই সম্মেলনটি গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা ছিল, গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দাকে জর্দান ও সৌদি আরবে পুনর্বাসন করে তবেই গাজা পুনর্গঠন করা হবে। তার এই পরিকল্পনা তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করেন আরব নেতারা। এমনকি মার্কিন সিনেটরদের কেউ কেউ ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়ে তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ফিলিস্তিনি বাড়িঘর।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল প রথম ধ প ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
তিন মাসের সুমাইয়ার পৃথিবীজুড়ে শূন্যতা
তিন মাসের সুমাইয়ার পৃথিবীজুড়ে শূন্যতা, একরাশ হাহাকার। মা-বাবা বেঁচে নেই তার। আদর-স্নেহ বুঝে ওঠার আগেই পৃথিবী ছাড়লেন তারা। বছর চারেকের বড় ভাই সোয়ায়েদও আগুনে দগ্ধ। ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছে ছোট্ট শিশুটি।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার বাসায় গ্যাসের চুলার আগুন হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে সারা বাসায়। আতঙ্কে প্রাণে বাঁচতে অন্যদের মতো ছোটাছুটি করছিল পোশাককর্মী সুমন মিয়ার পরিবারও। তিন মাসের সুমাইয়া তখনও ঘুমে। সুমন তাঁর দুই সন্তান নিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যান। এই ঘটনায় ১১ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে তিনজন মারা যান। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন আটজন। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের সবার বাড়ি শরীয়তপুরে।
আগুনে সুমাইয়ার শরীরের ৭ শতাংশ ঝলসে গেছে। রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সে এখনও শঙ্কামুক্ত নয়।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমাইয়ার মা শারমিন মারা যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলেন, ৪২ শতাংশ পোড়া নিয়ে শারমিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর অবস্থা আগে থেকেই জটিল হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। বুধবার সকালেও অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
এর আগে গত রোববার ভোরে সুমাইয়ার চাচি শিউলি আক্তার এবং দুপুরে তার বাবা সুমন মারা যান।
এই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে সুমাইয়ার। বার্ন ইনস্টিটিউটের পাঁচতলার ৫২০ নম্বর শয্যায় ভর্তি রয়েছে সে। ক্ষুধা পেলেই কাঁদছে শিশুটি। নিরুপায় স্বজন শিশুটির কান্না থামাতে সুমনের সহকর্মী রাশেদের স্ত্রী শারমিন সুলতানার বুকের দুধ দিচ্ছেন। শুধু সুমাইয়াকে দুধ খাওয়ানোর জন্য তার পাশের শয্যায় শুরু থেকেই আছেন তিনি।
শারমিন সুলতানা সমকালকে বলেন, আমার নিজেরও একটা আট মাসের সন্তান রয়েছে। সন্তানের কষ্ট আমি বুঝি। বুকের দুধের অভাবে শিশুটি কষ্ট পাবে– এটি মেনে নিতে পারছিলাম না। স্বামীর সহকর্মী দগ্ধ হওয়ার খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে এসেছি।
বার্ন ইনস্টিটিউটে এখনও আটজনের চিকিৎসা চলছে। তারা হলেন– জহুরা বেগম (৭০), মনির হোসেন (৪৫), সূর্য বানু (৫০), সোহেল মিয়া (৩৮), শামিম (১৫), মাহাদী (৭) ও সোয়ায়েদ (৪)।