ওসমানী ছিলেন সব মুক্তিযোদ্ধার আস্থার প্রতীক: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা
Published: 22nd, February 2025 GMT
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বলেছেন, বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তার দৃঢ়তা, কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, গণতন্ত্রে অবিচলতা, নিপুণ সমর কুশীলতার মাধ্যমে তিনি ১৯৭১ এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামরিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সব মুক্তিযোদ্ধার আস্থার প্রতীক।
শনিবার ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এম.
উপদেষ্টা বলেন, জেনারেল ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী সর্বাধিনায়ক যার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতিহাসে বিজয়ী সমর নায়ক হতে পারা একটি বিরল সম্মান এবং সৌভাগ্যের বিষয়। সৃষ্টিকর্তা জেনারেল ওসমানীকে সেই সম্মানে সম্মানিত করেছেন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, জাতি তাঁকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।
ফারুক ই আজম বলেন, সম্মান ও গৌরবের অধিকারী এরকম ক্ষণজন্মা দেশপ্রেমিক মানুষকে আমরা যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করতে পেরেছি কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা ও প্রচলিত যুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অগ্রনায়ক এবং বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান ও প্রথম জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ইতিহাসের সঠিক মূল্যায়ন করা খুবই জরুরি। জেনারেল ওসমানীকে তার যথাযথ সম্মান প্রদান করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তার অবদান তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। একটি জাতি যদি নিজেদের ইতিহাস সঠিকভাবে না জানে, তবে তারা সত্যিকার অর্থে উন্নতির পথে এগোতে পারে না।
ওসমানী স্মৃতি পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) এম আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম, সাবেক উপদেষ্টা ইফতেখার আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন, সাবেক সচিব এহছানে এলাহী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ র ক ই আজম ক উপদ ষ ট ওসম ন
এছাড়াও পড়ুন:
চব্বিশের চেতনা নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে: হাবিপ্রবি উপাচার্য
চব্বিশের চেতনা নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখতে সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যা।
তিনি বলেন, “বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। ফলে পঁচাত্তর সালে বিপ্লব হয়েছিল, যা জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস নামে পরিচিত। একই চেষ্টা গত ১৭ বছর করা হয়েছিল, যারই ফসল চব্বিশের বিপ্লব। চব্বিশের চেতনা নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখতে সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় হাবিপ্রবির অডিটোরিয়াম-২ তে ‘অমর একুশের ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মহান শহীদ দিবস ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এ সভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, “একুশের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ এ আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। সেই সময়ও বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল আমাদের তরুণ সমাজ। চব্বিশ সালে এসেও আমাদের তরুণ সমাজকে আবার রাজপথে রক্ত দিতে হয়েছে। তারা ছিল সম্মুখ সারিতে, আর পেছনে কৃষক, শ্রমিক, জনতাসহ সাধারণ মানুষ।”
তিনি আরো বলেন, “অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু দেখা গেল স্বাধীনতার পরপরই একটা সরকার জনগণের স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করে, গণতন্ত্র ধ্বংস করে বাকশাল কায়েম করে জাতিকে একটা দুর্ভিক্ষ উপহার দেয়। আমাদের মনে আছে, বাসন্তীরা গায়ে জাল জড়িয়ে কিভাবে লজ্জা নিবারণ করেছিল।”
এ অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির।
ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. এস. এম. এমদাদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবুল কালামের সঞ্চালনায় সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান, হল সুপার, প্রক্টর, বিভিন্ন শাখার পরিচালকসহ অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান আলোচক অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী তার বক্তব্যে বলেন, “পাকিস্তানি শোষকরা মাতৃভাষায় কথা বলতে দিতে চায়নি, আমাদের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছিল। সেই সময় ছাত্ররা বুক পেতে দিয়েছিল, রক্তে রাজপথ লাল হয়ে গিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় চব্বিশের আন্দোলনেও একজন ছাত্রের টুটি চেপে ধরে এক পুলিশ অফিসার বলেছিল, ‘কথা বলবি না।’ বায়ান্ন তে বলেছিল উর্দুতে কথা বলতে হবে, বাংলায় না। এখানেই স্বৈরশাসক তথা ফ্যাসিস্টদের চমৎকার একটি মিল। তারা কথা বলতে দিতে চায়না।”
তিনি বলেন, “একুশের চেতনা ছিল আমরা স্বাধীনভাবে মায়ের ভাষায় কথা বলবো, সেটা বলতে দিতে চায়নি পাকিস্তান। একাত্তর আসলো, আমরা স্বাধীন হলাম। ভেবেছিলাম স্বাধীনভাবে কথা বলবো, শোষিত হব না। কিন্তু ১৭ বছর এদেশে জন্মগ্রহণ করা কিছু মানুষই আমাদের শোষণ করেছে, বঞ্চিত করেছে; পাকিস্তানী বা অন্যরা না। আমাদের সন্তানদের হলে থাকতে দেয়নি, তাদের ছাত্র সংগঠন বাকশালি কায়দায় চাঁদাবাজি করেছে, সিট বাণিজ্য করেছে, মেধাবীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।”
“আন্দোলনকে দমাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে। নিজের বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে বাংলাদেশে ভয়াবহ ম্যাসাকার করলেন। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে এটা কল্পনা করা যায় না। চব্বিশ এর চেতনা ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সব শক্তিকে এক থাকতে হবে, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি করা যাবে না।”
ঢাকা/সংগ্রাম/মেহেদী