সিটি গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ট্রিপল ‘এ’ রেটিং পাওয়া সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তহবিল সংগ্রহের জন্য ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ফেস ভ্যালুর তীর ১০০% মর্টগেজ-ব্যাকড জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করতে ব্র্যাক ব্যাংককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন সাপেক্ষে এ বন্ড ইস্যু করা হবে। 

তিন বছর মেয়াদি এ বন্ড সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং আকর্ষণীয় রিটার্ন দেওয়ার জন্য স্ট্রাকচার্ড, যা প্রথমবারের মতো ইস্যু করা হচ্ছে। এ বন্ড বাংলাদেশজুড়ে ব্যক্তি ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এই মধ্য মেয়াদি বন্ড প্রাতিষ্ঠানিক ও রিটেইল বিনিয়োগকারীদের পরিবর্তনশীল ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের মূলধন বাজারের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এই বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিল সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তাদের বাণিজ্য কার্যক্রম সম্প্রসারণ, নগদ প্রবাহ ব্যবস্থাপনা উন্নতকরণ এবং অর্থায়নের পথ বহুমুখী করতে ব্যবহার করবে, যা ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমাতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, এটি একটি নিরাপদ ও উদ্ভাবনী বিনিয়োগের সুযোগ খোঁজা বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ নিয়ে আসবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেলে এ গুরুত্বপূর্ণ বন্ডটি বাজার উদ্ভাবনের প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিশ্রুতি আরো দৃঢ় করবে এবং বাংলাদেশের কর্পোরেট বন্ড বাজারের উন্নয়ন, বিকল্প বিনিয়োগ সুযোগ প্রসার ও আর্থিক পণ্য সমৃদ্ধকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব কর্পোরেট অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং তারেক রেফাত উল্লাহ খান এবং সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক (ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্শিয়াল) মোহাম্মদ তানভীর হায়দার পাভেল নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম আর এফ হোসেন এবং সিটি গ্রুপের ম্যানজিং ডিরেক্টর মো.

হাসান। 

ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ থেকে আরো উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি ম্যানজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক শেখ মোহাম্মদ আশফাক, ডেপুটি ম্যানজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব রিটেইল ব্যাংকিং মো. মাহীয়ুল ইসলাম এবং হেড অব স্ট্রাকচার্ড ফাইন্যান্স ইউনিট তানভীর কামাল। সিটি গ্রুপের ডিরেক্টর (ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস) রেজা উদ্দিন আহমেদ এবং ডিরেক্টর (ইমপোর্ট) খিজির হায়াত খান অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

এই বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং ব্যাংকিং খাতে তাদের স্ট্রাকচার্ড ফাইন্যান্স বিজনেস আরো শক্তিশালী করবে।

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি:
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ১৮৯টি শাখা, ৭৪টি উপশাখা, ৩৩০টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১ হাজার ১১৪টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৮ হাজারের বেশি মানুষের বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। ১৮ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২৩ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।  

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন ড স ট র ফ ইন য ন স হ ড অব র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আ’লীগ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবেছে কালুহাটি পাদুকাপল্লি

কয়েক দিন পরই ঈদুল ফিতর। এ সময়ে আগে দম ফেলানোর ফুরসত থাকত না কারখানা মালিক ও কারিগরদের। হাজারো শ্রমিক, ক্রেতা ও বিক্রেতায় মুখর বড়াল পারের এ পল্লিতে এখন সুনসান নীরবতা। প্রতিমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবতে বসেছে চারঘাটের ঐতিহ্যবাহী কালুহাটি পাদুকাপল্লি। 
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত পাদুকাপল্লিতে পর্যায়ক্রমে ৮২টি কারখানা গড়ে ওঠে। বর্তমানে চালু আছে মাত্র ১১টি কারখানা। ১০ হাজার শ্রমিক যুক্ত ছিলেন এ পেশায়। যার মধ্যে ২ হাজার নারী। ঈদের মৌসুমে ৬০-৬৫ কোটি টাকার জুতা-স্যান্ডেল বিক্রি হতো। বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যেতেন। কালুহাটি পল্লির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে।
কারখানা মালিকরা বলছেন, শাহরিয়ার আলম পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর পাদুকাপল্লির আলো ফিকে হতে শুরু করে। বিভিন্ন কোম্পানির মেশিনে তৈরি জুতা-স্যান্ডেল বাজারে নিয়ে আসেন। এতে কালুহাটির হাতে তৈরি জুতা-স্যান্ডেলের চাহিদা কমতে থাকে। প্রতিযোগিতায় টিকতে মালিকরা ছোটখাটো মেশিন কিনতে ঋণের আবেদন করেন। এ সুযোগে প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন ইউপি সদস্য জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক কামাল হোসেন ও তাঁর ভাগিনা সোহেল রানা কোনো কারখানার না থাকলেও পাদুকা সমবায় সমিতি গঠন করেন।
প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে কারখানা মালিকদের নামে এসএমই ফাউন্ডেশন ও সমবায় অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তাতে দুই মামা-ভাগিনার পকেট ভারী হলেও মালিকদের কোনো উপকারে আসেনি। করোনাকালে সমিতির নামে বিভিন্ন সুবিধা এনে নিজেরা ভোগ করেছেন। করোনাকালে ৬০-৬৫ কোটি টাকার ব্যবসা নেমে আসে ১৫-২০ কোটিতে।
পাদুকাশিল্প বাঁচাতে এসএমই ফাউন্ডেশন ২০২৩ সালে ৬৩ লাখ টাকায় ১৩টি অত্যাধুনিক মেশিনসহ দেশের প্রথম পাদুকা কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপন করে। প্রকৃত কারখানা মালিকদের না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন ও তাঁর ভাগিনাকে সিএফসি স্থাপনের জমি নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়। কামাল হোসেন কালুহাটি বাজারে বিএনপির সমর্থক মফিজ উদ্দিনের জমি দখল করে সিএফসি স্থাপনে এসএমই ফাউন্ডেশনকে চুক্তিবদ্ধ করে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার দাপটে সেখানে সিএফসি স্থাপন করা হয়। সিএফসিকে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন কামাল হোসেন।
এদিকে ভুয়া কারখানা দেখিয়ে কামাল হোসেন ও সোহেল রানা নামে-বেনামে এসএমই ফাউন্ডেশন ও সমবায় থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেনি। তাদের কারণে প্রকৃত কারখানা মালিকরা সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করেও পাঁচ বছরে ঋণ সহায়তা পাননি। পুঁজির অভাবে কারখানা বন্ধের উপক্রম হয়। গত জুন মাসে বিসিক কর্তৃপক্ষ পাদুকাপল্লি পরিদর্শন করে প্রতিটি কারখানাকে পাঁচ লাখ টাকা হারে ঋণের অনুমোদন দেয়। আগস্ট মাসে সেই ঋণ ছাড় করার কথা ছিল। কিন্তু পাঁচ আগস্টের সেই ঋণও বন্ধ হয়ে যায়। শাহরিয়ার আলম, যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন ও সোহেল রানা আত্মগোপনে চলে যান। সিএফসি দখলে নেন মফিজ উদ্দিন ও তাঁর ছেলে শাহ আলম। বিএনপি সমর্থকরা সিএফসির সেন্টারের ভেতরেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বর্তমানে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। 
মণ্ডল শুজ কারখানার মালিক জাকারিয়া হোসেন বলেন, ছয় মাস বন্ধ রাখার পর ঈদকে কেন্দ্র করে কারখানা চালু করেছি। আগে রোজার এক মাসে ১৫-২০ লাখ টাকার ব্যবসা করতাম। কিন্তু এ বছর পাঁচ লাখ টাকার ব্যবসাও হবে না। বাইরের জেলার ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
স্মার্ট শুজ কারখানার মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, টাকা পরিশোধ করেও নতুন ঋণ পাচ্ছি না। সিএফসিও বন্ধ রয়েছে। হাত দিয়ে আধুনিক জুতা তৈরি সম্ভব নয়। তাই কারখানাও বন্ধ রেখেছি। আমার মতো অনেকেই কারখানা চালু করতে পারেননি। 
পাদুকা কারিগর আবদুল মতিন বলেন, কাজ নেই। বাধ্য হয়ে সকালে দিনমজুর হিসেবে ও বিকেলে কারখানায় টুকটাক কাজ করছি। বেকারমুক্ত গ্রামটিতে এখন অসখ্য বেকার।
জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, নিজের জমিতে সিএফসি স্থাপন করেছি। অন্যের জমি দখলের অভিযোগ মিথ্যা। অন্যান্য বিষয় সমাধানের জন্য একাধিকবার বসতে চেয়েছি, কোনো পক্ষই রাজি হয়নি।
কালুহাটি পাদুকাশিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি। বরং সরকার পতনের পর আমার কারখানার মালপত্র লুট হয়েছে। সিএফসি স্থাপনের সময় ব্যক্তিগত যে টাকা খরচ করেছি, সে টাকাও সমিতি এখনও ফেরত দেয়নি। এলাকায়ও যেতে পারছি না।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উপমহাব্যবস্থাপক (ক্লাস্টার উন্নয়ন) আবু মঞ্জুর সাঈফ বলেন, সমিতির সভাপতি-সম্পাদক কারোরই কারখানা ছিল না। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে সমিতি গঠন করেছিলেন। এ জন্য সিএফসিকে তারা কখনোই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ’লীগ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবেছে কালুহাটি পাদুকাপল্লি