সংস্কার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে: প্রধান বিচারপতি
Published: 22nd, February 2025 GMT
বিচার বিভাগ সংস্কার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আজ শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতাবিষয়ক আঞ্চলিক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আজকের সেমিনারটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন দেশ একটি জাতীয় প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ খাতভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাবের ওপর রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা চলছে।’
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সংস্কার প্রচেষ্টাগুলোর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার উপায়গুলো অন্বেষণ এবং নির্ধারণ করতে হবে। জেলার বিচার বিভাগ এবং বিচারকদের নিজ নিজ ভূমিকায় সংস্কারক ও উদ্ভাবক হিসেবে আত্মপ্রকাশ এবং সংস্কার কর্মসূচির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
বিচার বিভাগের বিস্তৃতি এবং খাতভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে ভাগাভাগি করা হয়েছে জানিয়ে বিচারপতি বলেন, প্রস্তাবগুলোর লক্ষ্য হলো, জনগণকেন্দ্রিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং সাধারণ জনগণের জন্য দক্ষ ও দ্রুত সেবা প্রদান করা। ময়মনসিংহে এই সেমিনারের ভূমিকা হবে সেই প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
ইউএনডিপির উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার। আরও বক্তব্য দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ্ মাহবুব। বাণিজ্যিক আদালতের রোডম্যাপ–বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শরিফুল আলম। পাশাপাশি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপির রোমানা শোয়েগার। সেমিনারে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও নেত্রকোনা জেলার বিচারক ও পাবলিক প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ রপত
এছাড়াও পড়ুন:
এখনো মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে পারিনি: অ্যাটর্নি জেনারেল
এখনো দেশে মিথ্যা মামলা দেওয়া বন্ধ হয়নি বলে জানিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘‘ছত্রিশ জুলাইয়ে পর দেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়েছে। তবে এখনো আমরা মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে পারিনি।’’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘ছত্রিশ জুলাইয়ের পর পুলিশ বাদী হয়ে কোনো মামলা করেনি। এর আগে ৬০ লাখ মানুষকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ সব মামলার বাদী ছিল পুলিশ। সাড়ে ৪ হাজার মানুষ বিনা বিচারে হত্যার শিকার হয়েছে। বিগত ১৫ বছরের চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলীসহ অনেকে গুম হয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর একটি হোটেলে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এ সব কথা বলেন।
এ সময় মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘যারা ফ্যাসিস্ট, যারা মানুষকে গুলি করে মেরেছে, তাদের সাক্ষ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগছে। বিগত ১৫ বছর যারা ফ্যাসিজমের পক্ষ নিয়েছেন, কারা এখন পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন, আমরা দেখছি। আমরা আপনাদের কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, আপনারা এই জায়গায় নতুন করে জুরিসপ্রুডেন্স রচনা করুন। একজন আসামি আদালতে পাঠানোর পূর্বে তার বিরুদ্ধে সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করুন। এফআইআরএ নাম না থাকতে পারে কিন্তু কী কারণে তাকে গ্রেপ্তার করলেন এবং সেটার পেছনে প্রমাণ কী, তিনি কীভাবে এই অপরাধে অংশগ্রহণ করেছেন, তিনি অর্থের যোগান দিলে কাকে দিয়েছেন, টেলিফোন করলে কাকে করেছেন, এই বিষয়গুলো থাকলে ন্যায় বিচারের জন্য বিচার বিভাগের কাজ সহজ হবে।’’
এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুল রউফ বলেন, ‘‘অনেক নিরাপরাধ মানুষকে বিনাবিচারে কারাগারে থাকতে হয়েছে। জামিনযোগ্য মামলাতেও জামিন দেওয়া হয়নি নানা উদ্দেশ্যে। কিন্তু এখন আর বিনাবিচারে কেউ যেন কারাগারে না থাকে। দোষী যেই হোক শাস্তি পেতে হবে কিন্তু বিনা দোষে কেউ যেন শাস্তি না পায়।’’
কর্মশালায় অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে আমরা পুলিশের ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। জনমানুষের সন্তুষ্টির জন্য আমরা বিচার বিভাগ ও পুলিশ এক সঙ্গে কাজ করব। ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য পুলিশ ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে। অতীতে আমরা ভুল ত্রুটি কী করেছি, তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করব, উত্তরণের চেষ্টা করব।’’
এ সময় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ‘‘জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি, পুলিশ কোনো অঙ্গ যদি প্রোপার কাজ না করে তাহলে তার প্রভার অন্যদের ওপর পড়ে। ৫ আগস্টের আগে কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ অতি উৎসাহিত হয়ে নানা অপকর্ম করেছেন। ৫ আগস্টের পর মামলার হিড়িক পড়ে। তখন মামলায় অনেককে আসামি করা হয়। তখন কিছু করার ছিল না। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নিরীহ কোনো লোককে গ্রেপ্তার না করতে সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পরিবর্তিত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিচারিককে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করার জন্য অনুরোধ করছি।’’
কর্মশালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোকতার আহমেদ, পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান, ময়মনসিংহের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ পারভীন প্রমূখ।
ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, চার জেলার ডিসি, এসপি, পিপি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সব থানার ওসিরা কর্মশালায় অংশ নেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তিনি আসতে পারেননি।
ঢাকা/মিলন/বকুল