কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ১৬ মাস বয়সী এক শিশুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সূত্রে জানা যায়, জন্মের পর থেকেই শিশুটিকে নিজের সন্তান হিসেবে অস্বীকার করে আসছিলেন ওই ব্যক্তি। তাঁর দাবি, অবৈধ সম্পর্কের কারণে অন্য কারও সন্তান তাঁর স্ত্রীর গর্ভে আসে। জন্মের পরপর ওই শিশুকে একবার গলা টিপে হত্যারও চেষ্টা করেছিলেন বাবা। এ নিয়ে এই দম্পতির মধ্যে ঝামেলা চলছিল। বিষয়টিকে সামাজিকভাবে কয়েকবার সমাধানের চেষ্টাও করা হয়।

শিশুটির মা জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সাংসারিক জীবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছিল। গতকাল শুক্রবার শিশুটির জ্বর ছিল। আজ সকাল ৯টার দিকে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা শহরে নিয়ে যেতে চান। তখন তাঁর স্বামী বলেন, তিনি নিজেই নিয়ে যাবেন। স্ত্রী সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বাধা দেন। পরে তাঁদের বড় ছেলেকে সঙ্গে পাঠান। কিছুক্ষণ পরই বড় ছেলে একা বাড়ি ফিরে জানায়, তাকে মুরাদনগর সদরের বাজারে রেখে ছোট ভাইকে নিয়ে তার বাবা একাই কুমিল্লায় গেছেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে মৃত অবস্থায় শিশুটিকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন নাঈম। ফিরে জানান, কুমিল্লায় যাওয়ার পথে বুড়িচংয়ের কংশনগর এলাকায় গাড়ির ভেতরই অসুস্থতার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।

শিশুটির মায়ের দাবি, ‘আমার স্বামীই আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। আমি তার ফাঁসি চাই। এর আগেও সে আমার ছোট্ট ছেলেটিকে হত্যার চেষ্টা করেছে।’

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, শিশুটি জন্মের পর থেকে স্ত্রীর পরকীয়া সন্দেহে ওই ব্যক্তি বহুবার সালিস বৈঠক ডেকেছেন। তবে সালিসে পরকীয়ার বিষয়ে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

ওই ব্যক্তি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে আছেন বলে জানান মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান। আজ বেলা তিনটার দিকে বলেন, ‘শিশুটির শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। সুরতহাল শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি শিশুটিকে হত্যা করেননি। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। এ ঘটনায় থানায় এখনো মামলা হয়নি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র দনগর

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষে হাঁকডাকে মুখোর শতবর্ষী মাছের মেলা

বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে বসেছে মাছের মেলা। ঐতিহ্যবাহী এই মেলা বসেছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারে। দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। ভোর থেকে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলে এই মেলা।

আজ মঙ্গলবার সকালে মেলায় ভিড় ঠেলে এগোতেই শোনা গেল মাছ বিক্রেতাদের হাঁকডাক। তারা ক্রেতাদের উদ্দেশে বলছেন–‘মাছ...ভাই..., বড় বড় মাছ..। পুকুর, দিঘী ও নদীর মাছ। বাঁচা মাছ, খুব স্বাদের মাছ, দেখে যান, নিয়ে যান, এ মাছ ফুরাইলে আর পাইবেন না ভাই...।’ 

মেলায় সুন্দর করে সাজানো কাতলা, রুই, মৃগেল, জি-থ্রি রুই, ব্ল্যাককার্প, পাঙাস, গ্রাসকার্প, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের বড় মাছ ছাড়াও রয়েছে চিংরি, টেঙড়া, পাবদা, শোলসহ নানা প্রজাতির মাছ। ভোর থেকে বসেছে সারি সারি মাছের দোকান। চলছে হাঁকডাক ও দরদাম। মাছের আকার অনুযায়ী প্রতি কেজি মাছ ৫০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারাও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন মাছ। আবার দেখতে এসেছেন অনেকেই।

মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, পহেলা বৈশাখ ঘিরে মাছের চাহিদা অনেক বেড়েছে। মেলায় সবধরনের মাছ নিয়ে এসেছেন তারা। নববর্ষ উপলক্ষে সবাই বড় মাছটাই বেশি কেনেন। মাছের দাম একটু বেশি থাকায় তারাও কিছুটা দাম বেশি চাচ্ছেন।

সাত কেজি ওজনের একটি পাঙাস মাছের দরদাম করতে দেখা গেল রামচন্দ্রপুর ইউপি সদস্য আব্দুল কাদেরকে। তার সঙ্গে কথা হলে সমকালকে বলেন, মেলায় নানা প্রজাতির বড় মাছ উঠলেও দাম একটু বেশি। বিক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করে মাছ কিনে নিতে হচ্ছে। সবাই সাধ্যমতো মাছ ক্রয় করছেন।

এই মাছের মেলা রামচন্দ্রপুর বাজারের ঐতিহ্যের অংশ বলে জানালেন রামচন্দ্রপুর অধ্যাপক আব্দুল মজিদ কলেজের অধ্যাপক শাহ আলম জাহাঙ্গীর। 

তাঁর ভাষ্য, ঐতিহ্যবাহী এই মেলা ঠিক কবে শুরু হয়েছিল সেটি নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে এই মেলার বয়স শত বছরের বেশি এবং এটি মুরাদনগরের ঐতিহ্য। মেলা থেকে বড় মাছ কিনে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় পাঠানো হয় এবং অনেকে মেলার মাছ দিয়ে অতিথি আপ্যায়নও করেন। কিছু ব্যবসায়ী আছেন যারা এই মেলায় বিক্রির জন্যই মাছ বড় করে থাকেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নববর্ষে হাঁকডাকে মুখর শতবর্ষী মাছের মেলা
  • নববর্ষে হাঁকডাকে মুখোর শতবর্ষী মাছের মেলা