ইউএসএআইডির ওপর আক্রমণ: লাখো মানুষ ঝুঁকিতে
Published: 22nd, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিদিন উদ্বেগজনক খবর আসছে। এর মধ্যে একটি হলো ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) বন্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই প্রচেষ্টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও ইলন মাস্ক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
মাস্ক ইউএসএআইডি সম্পর্কে বলেছেন, এটি ‘অপরাধমূলক সংগঠন’ এবং এটিকে বন্ধ করে দেওয়ার সময় এসেছে। ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট ডাউন হওয়ার, আসলে কী ঘটছে, তা নিয়ে খুব কম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সংস্থাটির অর্থায়ন স্থগিত করে দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মীকে তাঁদের কর্মস্থল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার জনস্বাস্থ্যকর্মী এবং উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
ইউএসএআইডি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ফেডারেল সংস্থা, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশগুলো ও মানুষের মধ্যে বৈদেশিক সাহায্য দিয়ে থাকে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিচারক ইউএসএআইডির দুই হাজার কর্মীকে ছুটিতে রাখা থেকে বিরত করেছেন এবং আরও ৫০০ জনকে পুনর্বহাল করার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প ও মাস্ক এমন এক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন, যেখানে ইউএসএআইডির কর্মী বাহিনী ও ঠিকাদারের সংখ্যা ১০ হাজার থেকে কমিয়ে ৬০০-তে নামিয়ে আনতে চায়।
এ সিদ্ধান্তের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তার কাজে বড় ধরনের বিঘ্ন তৈরি হয়েছে। সিংহভাগ কর্মসূচি রাতারাতি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কর্মীদের ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য ও ওষুধ গুদামে আটকে গেছে। রোগী এবং অন্যান্য সহায়তাভোগীর সেবা পাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এসব সেবা পাওয়া মানুষের মধ্যে ইউক্রেন, জর্ডান, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকা মানুষগুলো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যদিও আমরা ক্ষতির পূর্ণ চিত্রটা পাচ্ছি না কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেবা পুরোপুরি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যৌনস্বাস্থ্য ও এইচআইভি–সেবা কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়েই রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নের বেতন-ভাতা দেওয়া হতো, এমন ৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে ছাঁটাই করতে হয়েছে। প্রায় ৫০ লাখ ডলার মূল্যের খাদ্যসহায়তা আটকে গেছে।
ইউএসএআইডির সামগ্রিক অবদান বিশাল। এককভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা পরিচালনাকারী সংস্থা এটি। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের মোট মানবিক সহায়তার ৪২ শতাংশের জোগান দিয়েছিল। ৬৮ বিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৪০ বিলিয়ন ডলারের জোগান দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যে বৈদেশিক সহায়তা দেয়, সেটা দেশটির ফেডারেল বাজেটের ১ শতাংশের কম। ফলে এ খাতে কাটছাঁট করা হলে সেটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মোট ব্যয়ের ক্ষেত্রে খুব বেশি রকমফের হবে না। কিন্তু এই অর্থের ওপর নির্ভরশীল কর্মসূচিগুলো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ করা হলে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য কী লাভ নিয়ে আসতে পারবে? যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক প্রেসিডেন্টের আমলে এই প্রশ্নটি সামনে আসে এবং উত্তরটা অস্পষ্ট। বৈদেশিক সহায়তা অস্থিতিশীলতা, সংঘাত এবং চরম দারিদ্র্যকে কমিয়ে দিতে পারে। গণবাস্তুচ্যুতির প্রধান কারণ এগুলো। বিশ্বের আরও বেশি অঞ্চলকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখার জন্য কর্মসূচিগুলোকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে নিপীড়ন, চরম দারিদ্র্য ও সহিংসতা থেকে পালাতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা।
অবৈধ অভিবাসন নিয়ে যখন বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে, তখন বৈদেশিক সহায়তা কাটছাঁট করা হলে এ ক্ষেত্রে আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। বৈদেশিক সহায়তা একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যায়। নতুন বাজার ও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে। ভারতের মতো দেশের কথা চিন্তা করুন। তারা একটি সজীব ও ক্রমবিকাশমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
বৈশ্বিক স্বাস্থ্য অসংক্রামক রোগের মহামারির বিস্তার রোধসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈদেশিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৪ সালের পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা চিন্তা করুন। লাইবেরিয়া, গিনি ও সিয়েরা লিওনকে ইবোলার বিস্তার রোধে যে সংগ্রাম করতে হয়েছিল, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের সহায়তা না দিলে সেটা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না।
ইবোলার বৈশ্বিক বিস্তার ঠেকাতে পশ্চিম আফ্রিকাকে এই সমর্থন দেওয়াটা জরুরি ছিল। এ ছাড়া যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেয়, সেসব দেশে গুরুত্বপূর্ণ সফট পাওয়ার ও প্রভাব তৈরি করতে পারে তারা। রাশিয়া ও চীন এ থেকে শিক্ষা নেবে এবং যুক্তরাষ্ট্র চলে আসায় যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেখানে চীন ও রাশিয়া ঢুকে পড়বে।
সম্ভবত অনেকে এখন ভাবছেন, অন্য দেশে সহায়তা দেওয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে তার দেশের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত। সাম্প্রতিক একটা সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় খারাপ করছে না, কিন্তু স্বাস্থ্য, সুখ ও সামাজিক বিশ্বাসের মতো মাপকাঠিতে পিছিয়ে আছে। সমীক্ষার লেখকেরা আমেরিকানদের বলেছেন, ‘সম্পদশালী কিন্তু অসুখী’।
● অধ্যাপক দেবী শ্রীধর এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের চেয়ার
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ২১ মিলিয়ন ডলার’—ট্রাম্পের এই বক্তব্য নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে উত্তাপ
ভারতে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ২১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া এক বক্তব্য ঘিরে ভারতের রাজনীতিতে উত্তাপ দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির কার্যক্রম স্থগিতের পর ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা কর্মসূচিতে সংস্থাটির অর্থায়ন বাতিলের কথা গত সপ্তাহে জানায় ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতাবিষয়ক বিভাগ (ডিওজিই)। এরপর ভারতে অর্থ ব্যয় নিয়ে ওই বক্তব্য দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যুক্তরাষ্ট্রের ওই অর্থায়নকে ‘বাইরের হস্তক্ষেপ’ বলছে। এ জন্য দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিজেপি বলেছে, তারা এই হস্তক্ষেপ চেয়েছিল।
কংগ্রেস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘অর্থহীন’ বলছে। অবশ্য ট্রাম্পের বক্তব্যের পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙা করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ট্রাম্পের। হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয়বারের মতো ফিরেই যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় কমানো এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য তিনি ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ডিওজিই চালু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের অর্থ অপচয় রোধ করা এবং জাতীয় ঋণ কমানোই ডিওজিইর লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেছেন ইলন মাস্ক।
ইলন মাস্কের এই দপ্তর এখন পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ইউএসএআইডির বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করাই সবচেয়ে বড়। যুক্তরাষ্ট্রের এই সংস্থা ১৯৬০-এর দশক থেকে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। ইলন মাস্ক সম্প্রতি ইউএসএআইডিকে ‘অপরাধী সংস্থা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। গত রোববার সংস্থাটির বেশ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিলের ওই তথ্য জানান তিনি।
ইলন মাস্কের সঙ্গে করমর্দন করছেন নরেন্দ্র মোদি। ওয়াশিংটন ডিসিতে, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫