‘বই অতীতের সঙ্গে বর্তমান ও ভবিষ্যতের যোগসূত্র তৈরি করে’
Published: 22nd, February 2025 GMT
‘উলিপুরের বইমেলা হোক রংপুর অঞ্চলের সাহিত্য ও সংস্কৃতির মিলনমেলা’ প্রতিপাদ্যে ২৯তম উলিপুর বইমেলার উদ্বোধন হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে কুড়িগ্রামের উলিপুর শহীদ মিনার চত্বরে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সাত দিনের এই মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
আয়োজকেরা জানান, সপ্তাহব্যাপী এই বইমেলার মঞ্চে প্রতিদিন নৃত্যানুষ্ঠান, শিশুদের কুইজ, ছড়া, আবৃত্তি, গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। বইমেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। এতে ১০টি স্টলে দেশবরেণ্য লেখকদের বইসহ প্রথমা প্রকাশনের সব বই পাওয়া যাচ্ছে।
ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘একটি উপজেলা শহরে ২৯ বছর ধরে বইমেলা হচ্ছে—এটি আমাদের সংস্কৃতির জন্য আশা জাগানিয়া ঘটনা। আমি এই বইমেলার সাফল্য কামনা করছি।’
‘ফ্রেন্ডস ফেয়ার উলিপুর’–এর আয়োজনের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট কবি, কলামিস্ট ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান। তিনি বলেন, বইমেলায় বিশ্বের বড় বড় সাহিত্যিকের সঙ্গে পাঠকদের সাক্ষাৎ হয়। বই অতীতের সঙ্গে বর্তমান ও ভবিষ্যতের যোগসূত্র তৈরি করে। পাঠককে নতুন এক জগতের সন্ধান দেয়। এ জন্য দেশের প্রতিটি উপজেলা শহরে বইমেলা আয়োজন দরকার।
সোহরাব হাসান আরও বলেন, ‘আমরা যাঁরা সাহিত্য সৃষ্টি করি, তাঁরা মূলত আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সাহিত্য করি। উলিপুর বইমেলা ২৯ বছর ধরে বইমেলার আয়োজন করছে। তারা লেখকের সৃষ্টি করা আলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
ফ্রেন্ডস ফেয়ার উলিপুরের স্থায়ী কমিটির সদস্য রেজওয়ান করিম লালনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জুলফিকার আলি, এম এস আমীন রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের পরিচালক শামীম আকতার, উলিপুর উপজেলা স্কাউটের কমিশনার রফিকুল ইসলাম আনছারী, প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জাহানুর রহমান প্রমুখ।
ফ্রেন্ডস ফেয়ার উলিপুরের স্থায়ী কমিটির সদস্য রেজওয়ান করিম লালনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জুলফিকার আলি, এম এস আমীন রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের পরিচালক শামীম আকতার, উলিপুর উপজেলা স্কাউটের কমিশনার রফিকুল ইসলাম আনছারী, প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জাহানুর রহমান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বইম ল র প রথম সদস য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘জামতলা’ থেকে ৪২ বছর ধরে ছড়াচ্ছে একুশের গল্প
কুমিল্লা নগর উদ্যানের জামতলা। জামগাছটির গোড়ায় ইট, বালু আর সিমেন্টের পাকা মঞ্চ। ভাষার মাসে সেখানে আয়োজন করা হয়েছে একুশের অনুষ্ঠান। জামতলায় থাকা মঞ্চের সামনেই ত্রিপল বিছানো, পাশে রয়েছে চেয়ারও। সেখানে বসেছেন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। জামতলার মঞ্চ থেকে শোনানো হচ্ছে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।
প্রতিবছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই জামতলার মঞ্চ থেকে ভাষা আন্দোলন আর স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেয় কুমিল্লার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন ‘তিন নদী পরিষদ’। এই কাজ এক দিন বা এক সপ্তাহের জন্য নয়। কুমিল্লা নগর উদ্যানের জামতলায় ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই ২১ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে সংগঠনটি। এমন আয়োজন কিন্তু কয়েক বছর ধরে নয়, ৪২ বছর ধরে চলছে এই ধারা।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও তিন নদী পরিষষের ২১ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠান চলছে। এ বছরের কর্মসূচি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের নিষ্ঠুর আক্রমণে শহীদ ছাত্র-জনতার স্মৃতির উদ্দেশে’। কুমিল্লার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকেরা বলছেন, দেশে এমন আয়োজন আজও দ্বিতীয়টি করতে পারেনি অন্য কোনো সংগঠন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বুকেও এমন আয়োজন বিরল ঘটনা।
১৯৮৩ সালে গোমতী, মেঘনা ও তিতাস, এ তিনটি নদীপাড়ের বৃহত্তর কুমিল্লার সংস্কৃতিচর্চাকে বিকশিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘তিন নদী পরিষদ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজও আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। তিন নদী পরিষদের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন সময়ে হয়েছে আন্দোলন-সংগ্রামও।
তিন নদী পরিষদের পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবুল হাসানাত (বাবুল) জানান, ১৯৮৪ সালে তিন নদী পরিষদ প্রথম ২১ দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সে সময় কুমিল্লা পৌর পার্কে থাকা একটি বিশাল জামগাছের তলায় হয়েছিল ওই অনুষ্ঠান। জামগাছটি এখনো আছে। বর্তমানে ওই স্থানই কুমিল্লা নগর উদ্যানের ‘জামতলা’ নামে পরিচিত। ৪২ বছর ধরে প্রতিবছরই একুশের অনুষ্ঠান এই জামতলায় হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত জামতলায় চলে একুশের অনুষ্ঠান। প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন একুশের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে। গতকাল বুধবার জামতলায় আসেন কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুরুতে একুশ নিয়ে আলোচনায় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হাসনাত আনোয়ার উদ্দীন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে। তিন নদী পরিষদ ২১ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠান করছে, যা বিশ্বের বুকে বিরল।
একই দিন আয়োজনে অংশ নেন বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক আমিন-উর-রশিদ (ইয়াছিন)। তিনি বলেন, ‘বরকত, সালাম, জব্বার, রফিক, জব্বার নিজেকে উৎসর্গ করেছেন বাংলা ভাষার জন্য। তাই আমাদের বাংলা ভাষা মন দিয়ে ভালোবাসতে হবে। কারণ, একুশ আমাদের অহংকার। আর একুশের কথাগুলোই নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়াচ্ছে তিন নদী পরিষদ।’