৭০টির বেশি দেশে ‘গোস্ট’ র্যানসমওয়্যার সাইবার হামলা
Published: 22nd, February 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে ৭০টির বেশি দেশে সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে ‘গোস্ট’ র্যানসমওয়্যার। যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো সুরক্ষা সংস্থা (সিআইএসএ) এবং ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) জানিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা, সরকার, শিক্ষা, প্রযুক্তি, উৎপাদন, ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন খাতের সংস্থাগুলো এই সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে।
সিআইএসএ, এফবিআই এবং মাল্টি-স্টেট ইনফরমেশন শেয়ারিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টার (এমএস-আইএসএসি) গত বুধবার এক যৌথ বার্তায় জানায়, ২০২১ সালের শুরু থেকেই ‘গোস্ট’ সাইবার অপরাধীরা পুরোনো ও সুরক্ষাহীন সফটওয়্যার এবং ফার্মওয়্যারের ইন্টারনেটভিত্তিক সেবায় নির্বিচার আক্রমণ চালাচ্ছে। এ ধরনের আক্রমণের ফলে চীনের প্রতিষ্ঠানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহু প্রতিষ্ঠান সাইবার–ঝুঁকিতে পড়েছে। ‘গোস্ট’ র্যানসমওয়্যার পরিচালনাকারীরা সাধারণত ম্যালওয়্যার ফাইল, এনক্রিপ্টেড ফাইলের এক্সটেনশন, মুক্তিপণের নোট এবং ই–মেইল ঠিকানা পরিবর্তন করে থাকে, যার ফলে তাদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় নির্ধারণে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই গ্রুপ ‘গোস্ট’, ‘ক্রিং’, ‘ক্রিপ্টার’, ‘ফ্যান্টম’, ‘স্ট্রাইক’, ‘হ্যালো’, ‘উইকরমি’, ‘এইচএসহারাডা’ এবং ‘র্যাপচার’ নামেও পরিচিত।
অর্থলোভী এই সাইবার গ্রুপ উন্মুক্ত কোড ব্যবহার করে সার্ভারের সুরক্ষাত্রুটি কাজে লাগায়। বিশেষত ফোর্টিনেট (সিভিই-২০১৮-১৩৩৭৯), কোল্ডফিউশন (সিভিই-২০১০-২৮৬১, সিভিই-২০০৯-৩৯৬০) এবং মাইক্রোসফট এক্সচেঞ্জ (সিভিই-২০২১-৩৪৪৭৩, সিভিই-২০২১-৩৪৫২৩, সিভিই-২০২১-৩১২০৭) সফটওয়্যারের পুরোনো ও অনিরাপদ সংস্করণ তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।
‘গোস্ট’ র্যানসমওয়্যার থেকে সুরক্ষিত থাকতে সিআইএসএ এবং এফবিআইয়ের নেটওয়ার্ক নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞেরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, র্যানসমওয়্যার দিয়ে এনক্রিপ্ট হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত এবং অফসাইট ব্যাকআপ রাখতে হবে। অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার এবং ফার্মওয়্যারের সুরক্ষাত্রুটি দ্রুত সময়ে সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে ‘গোস্ট’ র্যানসমওয়্যারের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু সুরক্ষাত্রুটিগুলো (সিভিই-২০১৮-১৩৩৭৯, সিভিই-২০১০-২৮৬১, সিভিই-২০০৯-৩৯৬০, সিভিই-২০২১-৩৪৪৭৩, সিভিই-২০২১-৩৪৫২৩, সিভিই-২০২১-৩১২০৭) সঠিকভাবে শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে হবে। নেটওয়ার্ক সেগমেন্ট করে সংক্রমিত ডিভাইস থেকে অন্য যন্ত্রে ভাইরাস ছড়ানো প্রতিরোধ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্ট এবং ই–মেইল সেবার জন্য ফিশিং-প্রতিরোধী মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (এমএফএ) চালু করতে হবে।
২০২১ সালের শুরুতে অ্যামিগো_এ এবং সুইসকমের সিএসআইআরটি টিম প্রথম ‘গোস্ট’ র্যানসমওয়্যার শনাক্ত করে।
সূত্র: ব্লিপিংকম্পিউটার ডটকম
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ভ ই ২০২১
এছাড়াও পড়ুন:
তিন কারণে ৩৩৪ দুর্নীতি মামলার বিচারে বিলম্ব
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও নূপুর মার্কেটের মালিক সাহেদ আজগর চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৩ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০০৩ সালে দুর্নীতি মামলা হয়। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। কিন্তু মামলাটি বাতিল চেয়ে ২০০৪ সালে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সাহেদ। ২০২২ সালের ৯ মার্চ রিট খারিজ হয়। ২৪ বছর পর ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত। যদিও এর মধ্যে দুজনই মারা গেছেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যান ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর আর সাহেদ ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর। দুই আসামি বিচার শুরুর আগেই মারা যাওয়ায় মামলাটির আইনগতভাবে আর কোনো কার্যকারিতা নেই।
রেলে নিয়োগ দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড সাবেক জিএম ইউসুফ আলী মৃধাসহ তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা করেছে দুদক। এর মধ্যে তিনটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি ১০টি চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত বিচারাধীন। এর মধ্যে চারটি মামলা শেষ পর্যায়ে। তিনটি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। ২০১২ সালের দুদক মামলাগুলো করার পর একযুগ কেটে গেলেও মামলাগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এরই মধ্যে জামিন নিয়ে কারামুক্ত জীবন কাটাচ্ছেন সাবেক জিএম ইউসুফ আলী মৃধা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে তিনটি কারণে দুর্নীতি মামলাগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কারণগুলো হলো বিচারক শূন্যতা, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ, সাক্ষী হাজির না হওয়া। এতে দুর্নীতি করেও শাস্তি পাচ্ছেন না অভিযুক্তরা।
চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সংঘটিত দুর্নীতির বিচার হয় বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে। এখানে ৩৩৪টি দুর্নীতি মামলার বিচার চলমান। প্রতি মাসেই যুক্ত হচ্ছে নতুন মামলা। কিন্তু চার্জশিট হওয়ার পর যে পরিমাণ মামলা বিচারের জন্য পাঠানো হচ্ছে, সেই পরিমাণ নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এর মূল কারণ স্পর্শকাতর আদালতটিতে প্রায়ই বদলিজনিত কারণে বিচারকশূন্য থাকে। এ ছাড়া সমন পাঠানো হলেও দুদকের অনেক কর্মকর্তা যথাসময়ে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে হাজির হন না। মূলত এ দুটি কারণেই বছরের পর বছর ঝুলে থাকে দুর্নীতিতে জড়িত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যক্তিদের বিচার। একযুগ সময় কেটে গেলেও এখনও ৮৮টি দুর্নীতি মামলার বিচার শেষ হয়নি। বিচারিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে নির্বিঘ্নে বিচরণ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে কৌশলে সাক্ষী, আইনজীবীসহ মামলা–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে প্রভাবিত করার ঘটনাও ঘটছে।
এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী চৌধুরী আবদুল্লাহ বলেন, ‘দুর্নীতি মামলার চার্জশিট হওয়ার পর এক থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রতিটি মামলার বিচার হওয়া উচিত। তখনই দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতি করতে শতবার চিন্তা করবেন। কিন্তু এখন মামলা হওয়ার পর কয়েক বছর কেটে যায়। চার্জশিট হওয়ার পর রায় হতে কখনো অর্ধযুগ, কখনো একযুগ কেটে যায়। অনেকে সাক্ষী, আসামিও বিচার শেষ হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। বিচারিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে দুর্নীতিবাজরা শাস্তির আওতায় না আসায় দুর্নীতি কমার চেয়ে বরং বাড়ছে।’
দুদক পিপি অ্যাডভোকেট মাহমুদুর হক মাহমুদ বলেন, ‘দুর্নীতি মামলার চার্জশিট আসার পর অনেক প্রভাবশালী ও অর্থবিত্তের মালিক আসামিরা হাইকোর্টে রিট করেন। উচ্চ আদালত রুল ইস্যু করেন। কিন্তু তারপর বছরের পর বছর কেটে গেলেও রুল নিষ্পত্তি না হওয়ায় অনেক মামলার বিচার আমাদের আদালতে শেষ করতে পারছি না। এছাড়া আদালত বিচারকশূন্য হয়ে পড়াও অন্যতম কারণ। এসব কারণে মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তিতে স্থবিরতা দেখা দেয়। তাতে রাষ্ট্রপক্ষ তথা প্রসিকিউশন, মামলার বাদীসহ সবপক্ষও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নতির ক্ষেত্রে বড় সংকট দুর্নীতি। বিচারকশূন্যতার কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। বিচার বিলম্বিত হওয়ায় দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না হওয়ায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছেন। বিচারের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে তাদের মধ্যে ভয় ধরানো যাচ্ছে না বলেই সমাজে দুর্নীতি বাড়ছে। তাই সরকারের উচিত বিচারক বদলির সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিচারক পদায়ন করা।’
চট্টগ্রাম অঞ্চলে দুর্নীতি ঠেকাতে দুর্নীতিবাজদের বিচার করার জন্য রয়েছে মাত্র একটি আদালত। দুর্নীতির মামলার বিচারের জন্য বিশেষ জজ আদালতের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ আদালতটি বিচারকশূন্য হয়ে পড়ে। ২০১৫ সালে যোগদানের পর একটানা তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন বিচারক মীর রুহুল আমিন। তারপর ছন্দপতন হতে থাকে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত বিচারক ছিল না আদালতে। তখন বিচার কার্যক্রম বন্ধই ছিল। শুধুমাত্র ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক রুটিন কাজ সেরেছেন। ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল যোগ দেন বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ। তিনি দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে সুনাম অর্জন করেন। ভয় ধরিয়ে দেন দুর্নীতিবাজদের মনে। ২০২৪ সালের মার্চে তিনি কক্সবাজার জেলা জজ হিসেবে বদলি হলে ফের বিচারকশূন্য হয়ে পড়ে আদালতটি। এরপর এক বছরের মাথায় দুই দফায় বিচারকশূন্য হয়ে যায় এই আদালত।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বর্তমানে দুর্নীতির মামলা রয়েছে ৩৩৪টি। বিশেষ জজ আদালতে পাঁচ বছর ও পাঁচ বছরের অধিক বিচারাধীন রয়েছে এমন মামলার সংখ্যা ৮৮টি। এর মধ্যে চাঞ্চল্যকর বিচারাধীন মামলার হচ্ছে, কক্সবাজারের উখিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, কক্সবাজারের আনিসুর রহমান ইয়াহিয়া, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আবু আহমে, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ও জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরফরাজ খান চৌধুরীর মামলা। এই আদালতে সাংবাদিকদের প্লট আত্মসাতের ঘটনায় সাংবাদিক নেতা শহীদ উল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা বিচারাধীন। আরও রয়েছে বন্দর, কাস্টমস, ভূমি অফিসসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি মামলা।