ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার একমাসও হয়নি, এর মধ্যেই তারা বিশ্বজুড়ে রণহুঙ্কার ছাড়ছে। নিজেদের অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে ইউরোপ তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দুর্বল ও বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে বলে বলা হচ্ছে। জার্মানির মিউনিখে সদ্য সমাপ্ত নিরাপত্তা সম্মেলনে সেই বার্তাই পেয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা।

তিন দশক আগেই পূর্ব আর পশ্চিমের মধ্য স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়েছে। তবু এখন ইউক্রেন আর গাজা উপত্যকার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বড় অশান্তি তৈরি হয়েছে দুনিয়াজুড়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এমন একসময়ে নিরাপত্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো মিউনিখে।

নব্বইয়ের দশকে স্নায়ুযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসানের আগেই জার্মানির রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী সমাজ শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষে নানা উদ্যোগ নিতে শুরু করে। এমনকি তীব্র স্নায়ুযুদ্ধের কালেও ১৯৬৩ সালে রাজনীতিক, গবেষক ও নাগরিক সমাজকে নিয়ে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার বিষয়ে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্যোগ শুরু হয়। তবে প্রথম এক দশক সেই সম্মেলন ব্যাপক আন্তর্জাতিক সাড়া জাগাতে পারেনি। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোই এতে অংশ নিত। পরবর্তীকালে এর ব্যাপ্তি বেড়েছে।

১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ৬১তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের প্রথম দিনেই মার্কিন ভাইস জে ডি ভ্যান্স তাঁর বক্তব্যে ইউরোপীয় মিত্রদের তীব্র আক্রমণ করে কথা বলেন। সতর্ক করেন গণতন্ত্রের জন্য হুমকির বিষয়গুলো নিয়ে। তিনি ইউরোপের বেশির ভাগ দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেন, ইউরোপের দেশগুলো তাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে সরে আসছে। তিনি দেশগুলোর অভিবাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি কথিত হুমকির সমালোচনা করেন। এই বক্তব্যে জে ডি ভ্যান্স ইউরোপের নানা দেশে কট্টরবাদী দলগুলোকে আরও মুক্তভাবে রাজনীতি ও সহযোগিতা করার কথা বলেন।

বিশ্বব্যাপী ডানপন্থী রাজনীতি ক্রমেই প্রভাব বিস্তার করছে। এর বিস্তার ঘটেছে ইউরোপের নানা দেশেও। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরিতে এখন কট্টরপন্থী দলগুলোর রমরমা। ২০২৪ সালের ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনে রক্ষণশীল ও অতি ডানপন্থী দলগুলো বড় সফলতা পেয়েছে।

ইউরোপীয় রাজনীতিতে এই ডানপন্থা রাজনীতির সুযোগে তাকে আরও উসকে দিচ্ছেন সদ্য ক্ষমতাসীন মার্কিন রাজনীতিকেরা। এই কৌশলের একটি মূল চালিকাশক্তি হলো মার্কিন রাজনীতিতে অর্থনৈতিক অভিজাতদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। আদতে মার্কিন এসব রাজনীতিকদের কাছে ন্যায়নীতি, শান্তি বা সৌহার্দ্যের কোনো বার্তা নেই। যা আছে, তা হলো বিদ্বেষ ও পুঁজিবাদী অর্থনীতির উন্নয়ন।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের বিদায়ী চেয়ারম্যান ক্রিস্টোফ হিউসজেন এ বছরের সম্মেলনটিকে ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সম্মেলনগুলোর মধ্যে একটি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সের বক্তব্যের পর, ‘আমাদের সাধারণ মূল্যবোধ আর এত সাধারণ নেই’ তাই আশঙ্কার কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর মধ্য ইউরোপের ভগ্নপ্রায় দেশগুলো নিজেদের মধ্যে আবার ইউরোপীয় ঐক্য প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছিল। নব্বইয়ের দশকে স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পর পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠছিল। তখন থেকেই মার্কিনদের কাছে ইউরোপীয় ঐক্য প্রচেষ্টা পছন্দ হচ্ছিল না। ইউরোপে অকারণে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কিছু উসকানিমূলক সিদ্ধান্ত ইউরোপের বৃহত্তম ঐক্য প্রচেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

পশ্চিমা রাজনীতির অনেক সমালোচনা বা ক্ষেত্র বিশেষে যুদ্ধবাজ মার্কিনদের পক্ষে লেজুড়বৃত্তি করলেও ইউরোপ অন্য মহাদেশের তুলনায় উন্নত গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হোতা জার্মানি বিশ্ব–যুদ্ধোত্তর রাজনৈতিক নেতারা নাৎসি অতীতকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে সহনশীলতা, সংহতি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের ওপর ভিত্তি করে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ভিত্তি রচনা করেছেন। জার্মান গণতন্ত্র একটি স্পষ্টনীতি অনুসরণ করেছে। তা হলো বহুত্ববাদবিরোধী শক্তিগুলোকে বাদ দেওয়া উচিত নয়। তাই নব্য নাৎসি দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়নি শুধু এই কারণে যে গোষ্ঠীগুলো নিষিদ্ধ হলে গোপনে আরও বিপজ্জনকভাবে কাজ করতে পারে। এ ধরনের নীতি মধ্য ইউরোপের অনেক দেশেই বহাল আছে।

ক্ষমতায় আসার চার সপ্তাহ পূর্ণ না হতেই ইউরোপীয় রাজনীতিকদের সমালোচনায় মেতেছে মার্কিন রাজনীতিকেরা। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের সমালোচনার জবাবে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজসহ জার্মান রাজনীতিকেরা জে ডি ভ্যান্সকে রাজনীতিতে সংযত হতে বলেছেন।

১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ৬১তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের প্রথম দিনেই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের বক্তব্যকে জার্মানির সংবাদ মাধ্যমগুলোসহ ইউরোপীয় রাজনীতিকেরা তীর্যক চোখে দেখছেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ আসন্ন জার্মান নির্বাচনী প্রচারণায় বিদেশি যেকোনো নেতার হস্তক্ষেপের প্রত্যাখ্যান করেন। শলৎজ তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জে ডি ভ্যান্সকে মিউনিখ শহরের নিকটবর্তী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ডাখাউ বন্দিশিবির ও স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের জন্য ধন্যবাদ জানান। আর ইউরোপের নাৎসিবাদী দলগুলোর সঙ্গে তাদের মাখামাখির সমালোচনা করেন।

উল্লেখ্য জার্মানির মিউনিখে পৌঁছানোর পরই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর স্ত্রী মিউনিখের অনতিদূরে ডাখাউ বন্দিশিবির পরিদর্শন করেন। বন্দিশিবিরে গিয়ে জে ডি ভ্যান্স বলেছিলেন যে নাৎসিবাদের পুনরাবৃত্তি কখনো হওয়া উচিত নয়। অথচ পরের দিনই তিনি যাঁরা সেই ভয়াবহ ঘটনাগুলো তুচ্ছ করে দেখেন, জার্মানির সেই নব্য নাৎসি অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলের নেত্রীর সঙ্গে সৌহার্দ্যমূলক আলোচনা করেন।
সেই বক্তব্যে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের গণতন্ত্রে, আমাদের নির্বাচনে, আমাদের মতামত গঠনে বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ মেনে নেব না। .

..আমাদের গণতন্ত্রের ধারা পরবর্তীকালে কী হবে, তা আমরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেব।’

জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হ্যাবেক মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে বলেন, ‘তাঁর আচরণে আমরা উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রে মৌলিক গণতান্ত্রিক ধারণাগুলো যখন নির্মমভাবে হ্রাস করা হচ্ছে, তখন সেই দেশের একজন রাজনীতিকের মুখে এ কথা শোভা পায় না।’ তিনি জে ডি ভ্যান্সকে কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির ধারক বলে উল্লেখ করেন।

নিরাপত্তা সম্মেলনে ভ্যান্সের বক্তব্যের পর ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন নোয়েল ব্যারোট বলেন, এই পরিস্থিতিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ‘শীঘ্রই ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে’ আলোচনার জন্য একত্র করবেন।

জার্মানি ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক দলের নেতা এবং সম্ভাব্য আগামী চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস একটি সার্কুলার ইমেলে লিখেছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এখন সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি লেখেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ক্ষমতাসীন হওয়ায় ইউরোপের রাজনৈতিক শৃঙ্খলা এখন হুমকির মুখে। এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে আগামীতে আন্তআটলান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ফাটল দেখা দিতে পারে।’

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের বিদায়ী চেয়ারম্যান ক্রিস্টোফ হিউসজেন এ বছরের সম্মেলনটিকে ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সম্মেলনগুলোর মধ্যে একটি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সের বক্তব্যের পর, ‘আমাদের সাধারণ মূল্যবোধ আর এত সাধারণ নেই’ তাই আশঙ্কার কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

সম্মেলনের শেষ দিন মিউনিখ শহরের ঐতিহ্যবাহী শান্তিমিছিলের প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা ছিল বিশ্বজুড়ে শান্তি আর সৌহার্দ্যের কথা। সেখানে অনেকে বহন করে, ‘ভ্যান্স গো হোম’ লেখা প্ল্যাকার্ড।

সরাফ আহমেদ প্রথম আলোর জার্মানি প্রতিনিধি
ই–মেইল: [email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র জন ত ক র গণত ন ত র ক গণতন ত র ইউর প য় ইউর প র আম দ র জন ত র র জন য র র জন দলগ ল প রথম সবচ য ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এর দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে গুণগত মানের প্রতিষ্ঠান জরুরি, যেটির দুর্বলতা এখন বেশ প্রকট। এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সংস্কার দরকার। বাণিজ্য-সম্পর্কিত সংস্কার প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এ-সম্পর্কিত দুর্বলতায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের চেয়ে পিছিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়া।

গতকাল শুক্রবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সানেম অ্যানুয়াল ইকোনমিস্ট কনফারেন্স-২০২৫’ নামের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিনের আলোচনা হয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। আজ শনিবার থেকে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এ সম্মেলনের বাকি অধিবেশনগুলো হবে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার: ভঙ্গুরতা থেকে স্থায়িত্বের দিকে অগ্রসর হওয়া’। 

প্রথম দিনের আলোচনায় সঞ্চালনা করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফ্রানজিসকা ওহনসোর্গে। আলোচক হিসেবে ছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শান্তায়ানান দেবরাজন এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশন্স (আইসিআরআইইআর) পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. দীপক মিশ্র।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত হওয়া ছাড়া যে প্রকৃত উন্নয়ন হতে পারে না, সেটি আমরা অতীতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই দেখেছি। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য প্রতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে গুণগত মান ভালো থাকা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সংস্কার করে কেবল সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে চাপ এলে। উদাহরণ হিসেবে রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর ক্রেতাদের চাপে দেশের পোশাক কারখানার উন্নতির কথা উল্লেখ করেন তিনি। 

বহুপক্ষীয় বাণিজ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এখন অনেকটা পক্ষাঘাতগ্রস্থের মতো হয়ে গেছে। তার পরও কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর চীন ডব্লিউটিওতেই গেছে। উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্যও গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্য নিয়ে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি থাকার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তিনি। 
‘দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভূ-অর্থনৈতিক বিভাজনের প্রভাব’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে ড. ফ্রানজিসকা ওহনসোর্গে বলেন, ভূরাজনৈতিক বিভাজন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমায়। তবে এর প্রভাবের ক্ষেত্রে মিশ্র প্রবণতা দেখা যায়। উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির অনেক দেশ তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কসহ নানা ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে এ-সম্পর্কিত ঝুঁকি কমাতে পেরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার রপ্তানি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) উৎসগুলো ভূরাজনৈতিকভাবে বৈচিত্র্যময়। তবে দেশগুলোর মোট বাণিজ্য ও এফডিআই প্রবাহ খুবই কম। যেটি এ-সম্পর্কিত বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে বা এর পুনর্গঠনের সুবিধা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। 

ড. শান্তায়ানান দেবরাজন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত নিজেদের মধ্যে এবং বাকি বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো। এ জন্য প্রয়োজন বাণিজ্য উদারীকরণের। তাঁর মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমানে যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়, তার ১০ গুণ হওয়া উচিত। বিশ্ব বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো যখন বেশি শুল্ক আরোপ শুরু করে, তখন ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর সর্বোত্তম কৌশল হওয়া উচিত বাণিজ্য উন্মুক্ত করা। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের সুবিধা তারা কীভবে নিতে পারে, সেটিও ভাবা উচিত। 
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সংস্কার কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মূল কারণ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। বাণিজ্য উদারীকরণ না করার বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়া এখন পাঠ্যপুস্তকের উদাহরণে পরিণত হয়েছে।   
ড. দীপক মিশ্র বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাজনৈতিক সম্পর্কের অংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এটা খুব বেশি। অথচ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এমনটি দেখা যায় না। ফলে ওই দেশগুলো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে সংস্কারের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি করতে পারলে দক্ষিণ এশিয়া হবে বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় অঞ্চল।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওরা কারা বসন্ত আটকে দিতে চায়!
  • অমর একুশে আমাদের গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ
  • দাবি আদায়ে সহিংসতা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে: রেহমান সোবহান
  • গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়
  • যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র রক্ষায় রাজপথে থাকতে হবে
  • গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার
  • ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • মানুষ অবিলম্বে ভোট দেওয়ার জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখতে চায়
  • অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে কি না, তা মানুষের ‘রাডারে’ রয়েছে: মঈন খান