অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে নবোদ্যম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শরীফ ওবায়েদুল্লাহর বই ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ: পথ না হোক শিশুর ঠিকানা’। তিনি সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের জীবনসংগ্রাম ও তাদের উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে লিখেছেন বইটি।

এছাড়া তিনি পথশিশুদের বাস্তব পরিস্থিতি, তাদের দৈনন্দিন জীবন, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেছেন। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শাওন মাহমুদ। প্রকাশ করছে বইমই প্রকাশনী। রকমারি ডটকমসহ বইমই প্রকাশনীর ১৪৭ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে।

শরীফ ওবায়েদুল্লাহ বলেন, “প্রতিটি শিশু একটি ফুলের মতো, যার বিকাশ ও প্রস্ফুটন নির্ভর করে যত্ন ও পরিচর্যার উপর। কিন্তু আমাদের চারপাশের অনেক শিশু সেই যত্ন ও সুরক্ষার বাইরে পড়ে আছে। পথশিশুরা আমাদের সমাজের এমন একটি অংশ, যারা প্রতিদিন নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে। তাদের জীবন সংগ্রাম আমাদের মানবিকতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”

আরো পড়ুন:

বইমেলায় সাইফুলের ‘ছোটদের ইংলিশ থেরাপি’

বইমেলায় কুবি শিক্ষিকার গল্পগ্রন্থ ‘বুমেরাং’

তিনি বলেন, “এই বইটি সেসব পথশিশুদের জীবনের গল্প এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে এক বিনম্র প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের দ্রুত নগরায়ন এবং সামাজিক অসমতার কারণে পথশিশুদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ শিশুরা কেবল খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত নয়, বরং সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যও নানা বাধার সম্মুখীন। তাদের প্রতি অবহেলা আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বড় বাধা।”

“এক যুগ ধরে পথশিশুদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাদের জীবন, দুঃখ, আনন্দ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার অনেক গল্প শুনেছি। তাদের প্রতিদিনের লড়াই আমাকে শুধু অনুপ্রাণিতই করেনি, বরং আমাকে এক নতুন চোখে জীবনকে দেখতে শিখিয়েছে। এ বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় সেই অভিজ্ঞতার প্রতিফলন,” শরীফ যোগ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শরীফ সমাজের অবহেলিত পথশিশুদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তিনি নবোদ্যম ফাউন্ডেশন ও সেভ দ্য টুমরো স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, যা এক যুগ ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পথশিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক সহায়তা প্রদানে কাজ করছে। তিনি দেশের জাতীয় দৈনিকে পথশিশুদের সমস্যা নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন।

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জ বন আম দ র বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী

পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।

তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’  নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।

তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।

নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।

শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।

বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।

শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।

পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।

শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ