আড্ডা–গল্প আর গানে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা
Published: 22nd, February 2025 GMT
স্কুলের বয়স এক শ পেরিয়েছে। স্কুলে যাঁরা পড়াশোনা করেছেন, তাঁদের কেউ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কেউবা রাজনীতিবিদ। কেউ আবার শিক্ষক। স্কুলের শতবর্ষ উপলক্ষে প্রাক্তন এই শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বসে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে সাজানো হয় পুরো স্কুল। এতে অংশ নেন হাজারো শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। তাঁদের গল্প-আড্ডায় জমে ওঠে মিলনমেলা।
‘রঙিন স্বপ্ন নিয়ে তারকার মেলায় চেতনায় দিয়ে যায় দুল, শতবর্ষে পা রেখেছে জে কে অ্যান্ড এইচ কে হাইস্কুল’ সূচনা গানের মাধ্যমে শনিবার হবিগঞ্জের যোগেন্দ্র কিশোর-হরেন্দ্র কিশোর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের শতবর্ষ পুনর্মিলনী-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। হবিগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৪ সালে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি শতবর্ষ পূর্ণ করেছে।
যোগেন্দ্র কিশোর-হরেন্দ্র কিশোর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে বেলা ১১টায় আকাশে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জি কে গউছ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জের কৃতী সন্তান ও নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিম।
উদ্বোধন শেষে আলোচনা, স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন, স্মৃতিচারণা, খেলাধুলা, র্যাফল ড্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানে সাজানো হয় পুরো অনুষ্ঠান। স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রতিটি মানুষ তার শৈশব জীবনকে ফিরে পেতে ভালোবাসে। কর্মময় জীবনের সব ব্যস্ততা ভুলে গিয়ে ছাত্রজীবনের সহপাঠীরা একে–অপরের সঙ্গে মিলতে জড়ো হন। সবার উপস্থিতিতে রঙিন হয়ে ওঠে প্রিয় স্কুলের মাঠ। সহপাঠী বন্ধুত্বের এ মিলন অন্য রকম সুখের বার্তা দেয়। সেই সোনালি দিনগুলো স্মরণ করতে তাঁদের এই পুনর্মিলন।
পুনর্মিলনীতে আসা প্রাক্তন শিক্ষার্থী হুসনে আখতার রুমি বলেন, ‘সহপাঠী ও একই স্কুলে পড়ুয়া বড় ভাই-বোনদের পেয়ে অন্য রকম একটা দিন কাটল আজ। পুরো আয়োজনটা ছিল বেশ সুখের। উপস্থিত হয়ে মনে হয়েছে, ছাত্রজীবনে আবারও ফিরে গেছি।’
শতবর্ষ পূর্তি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী পুনর্মিলনী উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ জহিরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্য দেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফরিদুর রহমান, পুলিশ সুপার এ এন এম সাজেদুর রহমান, হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো.
অনুষ্ঠান ঘিরে প্রায় এক মাস আগে থেকে বিদ্যালয়টিকে সাজানো হয় রঙিন রূপে। শহরের প্রধান সড়কসহ স্কুল প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকা রঙিন বাতির আলোয় সবার দৃষ্টি কাড়ে। রাতে গানের আসরে মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে, ছড়াও ফুলের বন্যা
‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ/ দুপুর বেলার অক্ত/ বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?/ বরকতের রক্ত।/ হাজার যুগের সূর্যতাপে/ জ্বলবে, এমন লাল যে,/ সেই লোহিতেই লাল হয়েছে/ কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে!/ প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে/ ছড়াও ফুলের বন্যা,/ বিষাদগীতি গাইছে পথে/ তিতুমীরের কন্যা।’
কবি আল মাহমুদের লেখা এ কবিতার চরণ অনুসরণ করে দেশের সব রাজপথ গিয়ে মিশে যাবে আজ শহীদ মিনারে।
পলাশ আর শিমুল ফোটা ফাগুনের মিষ্টিমাখা হালকা শীতে কোকিলডাকা সূর্যোদয়ে দেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বীর সন্তানদের। বুকের তাজা খুন ঢেলে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করে গেছেন সেই শহীদরা। নগ্ন পায়ে শহীদ মিনারমুখী লাখো মানুষের কণ্ঠে থাকবে বিষাদমাখা চিরচেনা সেই গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।’ কি শিশু, কি বুড়ো– দল-মত নির্বিশেষে সবাই হাজির হবেন ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর মমতার ফুলে ভরে উঠবে বাঙালির শোক আর অহংকারের প্রতীক শহীদ মিনার।
চির প্রেরণার অমর একুশের ৭৩ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ভাই হারানোর বেদনা বুকে ধারণ ধরে বিশ্বজুড়ে বাঙালির আজ যুগপৎ শোক ও গর্বের দিন।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ফাল্গুনের সোনাঝরা রোদ্দুরে নিজ ভাষায় কথা বলার দাবিতে, মায়ের মুখের ভাষার সম্মান প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে প্রকাশ্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের সেই স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস আজ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও। জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহংকারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর দিন।
পৃথিবীর বুকে ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে একমাত্র বাঙালি জাতি। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির চেতনার প্রতীক। এই শহীদদের ঠাঁই প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের মর্মমূলে। পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় উচ্চারিত হয় ভাষাশহীদদের একেকটি নাম। তাদের স্মরণে সারাদেশে, অগণিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং বিদেশে যেখানে রয়েছে বাঙালি, সেখানে গড়ে ওঠে শহীদ মিনার। অমর একুশে তাই আত্মত্যাগের অহংকারে ভাস্বর মহান একটি দিন; জেগে ওঠার প্রেরণা। দেশমাতৃকার প্রয়োজনে আত্মোৎসর্গ করার শপথ গ্রহণের দিন।
এ বছর মাতৃভাষা দিবস সারাদেশে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয় তরুণ-যুবারা। তাদের সম্মিলিত আন্দোলনে অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৮১ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাণের বিনিময়ে মুক্তবাক, মুক্তচিন্তা ও গণতন্ত্রের পথে দেশকে উত্তরণে অবদান রেখে গেছেন জুলাই শহীদরা। তাদের এই আত্মত্যাগ বায়ান্নর অবিস্মরণীয় ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদী চেতনাকেই ধারণ করে।
এবার দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও দেশের ভাষাগুলোর মর্যাদা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
আয়োজন, কর্মসূচি
রাষ্ট্রীয় আয়োজনে একুশের অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে রাত ১২টা ১ মিনিটে, ঢাকা মেডিকেল কলেজসংলগ্ন একুশের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে।
প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার। এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হবে শ্রদ্ধা।
সারাদেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষাশহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল সাড়ে ৬টায় উপাচার্য ভবনের সামনে ‘স্মৃতি চিরন্তন’ চত্বর থেকে মৌন মিছিল ও প্রভাতফেরি বের করা হবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এতে নেতৃত্ব দেবেন। মৌন মিছিল ও প্রভাতফেরিটি উদয়ন স্কুল হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবে। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেবেন।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে কালো ব্যাজসহ প্রভাতফেরিতে অংশ নেওয়ার জন্য বলাকা সিনেমা হলের সামনে দলীয় নেতাকর্মীকে জমায়েত হতে বলা হয়েছে। তারা আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহীদদের মাজার জিয়ারত এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করবেন।