ভারত-পাকিস্তানের সেরা পাঁচ ওয়ানডে ম্যাচ
Published: 22nd, February 2025 GMT
ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ দ্বৈরথ ভারত-পাকিস্তান। ওয়ানডে ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ১৩৫ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। আগামীকাল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আবারও মুখোমুখি হচ্ছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দল। ক্রিকেটের অন্যতম জনপ্রিয় এই লড়াইয়ে সেরা পাঁচ ওয়ানডে ম্যাচ তুলে ধরেছে এএফপি স্পোর্টস।
১.
মিয়াঁদাদের ছক্কা (১৮ এপ্রিল, ১৯৮৬ - শারজাহ): এশিয়া কাপের ফাইনালে শেষ বলে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল চার রান। চেতন শর্মার করা শেষ বলটি ছক্কায় পরিণত করে পাকিস্তানকে ১ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। ১১৪ বলে অপরাজিত ১১৬ রানের ইনিংস খেলে নায়ক হয়ে যান তিনি। মরুভূমির শহরে এই জয় পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে আছে।
২. ইমরানের দুর্দান্ত বোলিং, কিন্তু জয় ভারতের (২২ মার্চ, ১৯৮৫ - শারজাহ): চার জাতির টুর্নামেন্টে প্রথমে ব্যাট করা ভারত মাত্র ১২৫ রানে অলআউট হয়, যেখানে ইমরান খান ১৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেন। তবে ১২৬ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৮৭ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন রমিজ রাজা। ইমরানের অসাধারণ বোলিংও শেষ পর্যন্ত বৃথা যায়।
৩. জাদেজার বিধ্বংসী ব্যাটিং (৯ মার্চ, ১৯৯৬ - ব্যাঙ্গালুরু): ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ৪২তম ওভার পর্যন্ত ভারত সংগ্রহ করেছিল ২০০ রান। এরপরই শুরু হয় অজয় জাদেজার ঝড়। ২৫ বলে ৪৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ভারতের স্কোর নিয়ে যান ২৮৭ রানে। জবাবে আমির সোহেল ও সাইদ আনোয়ারের উদ্বোধনী জুটিতে ভালো শুরু করলেও ২৪৮ রানে থামে পাকিস্তান। ৩৯ রানে জয় পেয়ে সেমিফাইনালে উঠে ভারত।
৪. টেন্ডুলকারের ব্যাটিং ঝড় (১ মার্চ, ২০০৩ - সেঞ্চুরিয়ন): ২০০৩ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সাইদ আনোয়ার সেঞ্চুরি করে দলকে ৭ উইকেটে ২৭৩ রানে পৌঁছে দেন। কিন্তু শচীন টেন্ডুলকার পাকিস্তানের বোলিং লাইনআপকে ধ্বংস করে দেন ৭৫ বলে ৯৮ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংসে। তার ব্যাটিং তাণ্ডবে ৬ উইকেটের সহজ জয় পায় ভারত।
৫. ফখর জামানের বিস্ফোরক ইনিংস (১৮ জুন, ২০১৭ - লন্ডন): আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানের বিশাল সংগ্রহ এনে দেন ওপেনার ফখর জামান। ১২টি চার ও ৩টি ছক্কায় সাজানো ১১৪ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানের বড় জয়ের ভিত্তি গড়ে দেন তিনি। জবাবে মাত্র ১৫৮ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। মোহাম্মদ আমির ও হাসান আলি ৩টি করে উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন করেন।
ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথ সবসময়ই উত্তেজনাপূর্ণ। আগামীকাল দুবাইতে হতে যাওয়া ম্যাচেও দর্শকরা তেমনই রোমাঞ্চকর লড়াই প্রত্যাশা করছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি
গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।
গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।
ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’
তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।