সাভারে ২টি সড়ক অবরোধ করে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ
Published: 22nd, February 2025 GMT
ঢাকার সাভারে দুই এলাকায় দুটি আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে দুটি তৈরিপোশাক কারখানার শ্রমিকেরা।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাভারের তেঁতুলঝড়া ইউনিয়নের বসুন্ধরা গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে কাজ বন্ধ করে সিংঙ্গাইর-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নেয়। অপরদিকে, বকেয়া বেতন ও কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে আশুলিয়ার বিশমাইল-জিরাবো সড়ক অবরোধ করে স্থানীয় ছেইন অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকেরা।
সাভারের বসুন্ধরা গার্মেন্টস লিমিটেডের বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা জানান, এখন পর্যন্ত গত জানুয়ারি মাসের বেতন পাননি কারখানায় কর্মরত কয়েকশত শ্রমিক। একইসঙ্গে ওভারটাইমের টাকাও দেয়নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত কারখানার কর্তৃপক্ষ তা করেনি। আজ ২২ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষ এক নোটিশে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তাই বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রেখে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
আরো পড়ুন:
কাশিয়ানীতে দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ২
নরসিংদীতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত ৬৩
এক শ্রমিক বলেন, “সকালে আমরা কারখানায় কাজ করতে এসে দেখি কর্তৃপক্ষ আজ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। একে তো তারিখ দিয়েও এখনো শ্রমিকদের জানুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি, এরপর আবার কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যার কারণে শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে সকাল ৯টা থেকে হেমায়েতপুর-সিংগাইর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।’’
এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুফিয়ান বলেন, বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা হেমায়েতপুর-সিংগাইর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিল। মালিকপক্ষ আগামী ৩ মার্চ শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দেওয়ার পর শ্রমিকরা দুপুর ১টা নাগাদ সড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়ে যার যার বাসায় ফিরে যায়।
এদিকে, আশুলিয়ার ছেইন অ্যাপারেলস কারখানার পোশাক শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রতি মাসের বেতন ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও মালিকপক্ষ এখন পর্যন্ত জানুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ না করে কয়েকদিন ধরে কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে বন্ধ রেখেছে। বকেয়া পাওনা ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে কারখানার সামনে সড়কে অবস্থান নেয় তারা।
সকাল থেকে আশুলিয়ার কাঠগড়া আমতলা এলাকায় বিশমাইল-জিরাবো সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, বকেয়া বেতন সংক্রান্ত ইস্যুতে গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারখানাটি সাধারণ ছুটির আওতায় বন্ধ রেখেছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সম্প্রতি কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আগামী দেড় মাসের জন্য কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ঈদকে সামনে রেখে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
কারখানার এক নারী শ্রমিক বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারখানা সাধারণ ছুটি ছিল বকেয়া বেতনের ইস্যুতে। আজ সকালে শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দিতে গিয়ে দেখেন, গেটে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে মালিকপক্ষ। এটি দেখে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সড়ক বিক্ষোভ শুরু করে।
তিনি বলেন, “সামনে ঈদ। এই সময়ে এভাবে কারখানা লে-অফ করার কোনো মানেই হয় না। হয় কারখানা খুলে দিক, অন্যথায় আমাদের যাবতীয় পাওনা-বেনিফিট দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিক। এর বাহিরে আমাদের কোনো দাবি নেই। আমরা এভাবে মাসের পর মাস ঝুলে থাকতে পারব না।”
টানিয়ে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, আগামী ০৭/০৪/২০২৫ তারিখ হতে কারখানা খোলা থাকবে। এ লে-অফ কালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৬ মোতাবেক দেওয়া হবে।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, ‘‘ছেইন অ্যাপারেলস কারখানাটিতে কয়েকদিন ধরেই ঝামেলা চলছিল। এর মধ্যে বকেয়া বেতনের বিষয় ছিল। সম্প্রতি মালিকপক্ষ কারখানা লে-অফ ঘোষণা করেছে। যার কারণে শ্রমিকরা আজ সকাল থেকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। পরবর্তীতে আমরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে আগামীকাল সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার পর দুপুর পৌনে ২টার দিকে শ্রমিকরা সড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।’’
এখন সাভারের হেমায়েতপুরের হেমায়েতপুর-সিংগাইর আঞ্চলিক সড়ক এবং বিশমাইল-জিরাবো সড়ক দুটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
ঢাকা/সাব্বির/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন ম ল কপক ষ পর শ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠানে ৭ দেশের কবি
তারা ভিন দেশের নাগরিক। কবিতা পাঠ করলেন নিজ নিজ ভাষায়। জানালেন তাদের অনুভূতিও। আবার সেই কবিতা আর অনুভূতির মর্মার্থ ইংরেজিতে বুঝিয়েও দিলেন সবাই।
শুক্রবার কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ‘সার্ধশততে একুশের দ্রোহ’ শিরোনামে ভিন্নধর্মী এ অনুষ্ঠান হয়। এর আয়োজন করে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (কসউবি) প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ।
কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সকাল ১০টায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন জাপান, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, কাজাখিস্তান ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। যারা কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।
বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে জাপানি নাগরিক মাছিকো ফুকোমারা বলেন, নিজের ভাষায় কথা বলতে পারাটা অনেক আনন্দের। স্কুল দেখে আমি আমার নিজের দেশ, বাড়ি, শৈশব ও নিজের ভাষাকে মনে পড়ছে। তিনি জানান, এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছেন।
নাইজেরিয়ান নাগরিক হাওয়া হাসান কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এখানে আমরা অনেক ভাষাভাষী মানুষ একসঙ্গে হয়েছি, এটা খুব ভালো লাগছে।
ফিলিপাইনের নাগরিক হেলেন বেশ কয়েক বছর ধরেই আছেন বাংলাদেশে। তিনি বলেন, কথা বলতে পারার স্বাধীনতা অনেক বড় বিষয়। অনেক আনন্দের।
ইসাবেল সুয়োরাজ কলম্বিয়ান নাগরিক। এই আয়োজনে এসে তিনি শিশু বয়সে ফিরে যাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, স্কুলের বাচ্চাদের দেখে আমার স্কুলের সময়ের কথা মনে পড়ছে।
কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এম এম সিরাজুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের গৌরবময় ১৫০ বছর পূর্তির ধারাবাহিকতায় এ আয়োজন মাতৃভাষার বৈচিত্র্য ও ঐক্যের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, বিদেশিদের উপস্থিতি মাতৃভাষার গুরুত্বকে বিশ্বজনীন পরিসরে তুলে ধরার প্রয়াস থেকেই এমন আয়োজন।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কবি জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত শহীদ মিনারটি কক্সবাজার জেলার প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে স্বীকৃত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষকদের অবদান গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে খালেদ মোশাররফ, যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তার নেতৃত্বে কক্সবাজার হাইস্কুলের ছাত্ররা ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়।
বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা আয়োজনের অংশ হিসেবে ভিন্নধর্মী এ আয়োজনের কথা জানিয়ে ছাত্র পরিষদের সংগঠক ইয়াসির আরাফাত জানান, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ দিবসেই তাদের কর্মসূচি থাকবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত।