শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আমলে নিয়ে আগামী বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) শুনানি ডেকেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ওই শুনানি স্থগিত করার দাবি জানিয়ে আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। দাবি মানা না হলে সংগঠনটি থেকে শুনানিতে অংশ নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর কথাও বলা হয়েছে।

রাজধানী ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব বলেছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর এ উদ্যোগ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির অপতৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়ে আরও বলা হয়, ‘বর্তমান বিইআরসি আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে। এটা আগের সরকারের ধারাবাহিকতা। এটা উদ্বেগের। যারা দাম বাড়ানোর এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, তাদের সবার প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধেই আন্দোলন হয়েছে, রক্তদান হয়েছে, রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। এমন অবস্থায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বৈষম্যমূলক প্রস্তাব অনুমোদন করে জ্বালানি বিভাগ বিস্মিত করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনের সরকারের আচরণ যদি আগের সরকারের মতো হয় তাহলে আন্দোলন শুরুতেই ব্যর্থ মনে হবে। ৬ মাসে সরকারের দাম বাড়ানো, রপ্তানি শিল্পকে অস্থির করে তোলাটা অশনিসংকেত মনে হয়। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা দরকার, এটা ক্যাব বিশ্বাস করে না। নেপথ্যের কোনো শক্তি এটা করাচ্ছে।’

ক্যাব আরও বলছে, গত ১৫ বছরে প্রতিযোগিতা ছাড়া কাজ দেওয়া হয়েছে। লুণ্ঠনমূলক ট্যারিফ নির্ধারণ করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের খরচ বাড়ানো হয়েছে। এগুলো এখন আদালতে প্রতিষ্ঠিত।

মূল্যবৃদ্ধির আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অযৌক্তিক ব্যয়, লুণ্ঠনমূলক খরচের হিসাব বের করতে বিইআরসির কমিটি করা উচিত বলছে ক্যাব। সেটি করার পর তার ভিত্তিতে খরচ কমিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম কমানোর প্রস্তাব করতে পারে বিইআরসি। শেষ মুহূর্তে হলেও বিইআরসি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির শুনানি স্থগিত করবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন ক্যাব নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, ‘বিইআরসি শুরুতেই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আবেদন খারিজ করে দিতে পারত। শুনানির আগে উন্মুক্ত সভা ডেকে যৌক্তিকতা বিচার করা যেত। এখন কোনো উন্মুক্ত সভা করা হয় না। এটি ভোক্তা স্বার্থের পরিপন্থী।’

যেগুলো প্রতিরোধ করা বিইআরসির দায়িত্ব, সেগুলোকে তারা সুরক্ষা দিচ্ছে বলেন এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, দাম বাড়ানোর দিকে গেলে বিইআরসি গণশত্রুতে পরিণত হবে। তারা গণশত্রু হতে চাইবে না বলেই বিশ্বাস করতে চায় ভোক্তারা।

এদিন ক্যাবের লিখিত বক্তব্যে বিইআরসির চেয়ারম্যানের প্রতি তিনটি অনুরোধ করা হয়। এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিইআরসিতে চিঠি দিয়ে একই অনুরোধ করেছিল ক্যাব।

তাতে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, এলএনজি, এলপিজি, সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ সরবরাহে অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় কতটা সমন্বয় হয়েছে তার পরিমাণ বিআইরসি কর্তৃক নির্ধারিত হতে হবে। লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মুনাফা রোধ করে এবং সরকারের রাজস্ব কমিয়ে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির মূল্যহার এবং ভর্তুকি কী পরিমাণ কমানো সম্ভব; তা বিইআরসির হিসাব করতে হবে। জ্বালানি–সংক্রান্ত অপরাধীদের বিচারের জন্য বিইআরসি আইনের আওতায় ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।

সম্মেলনে ক্যাব বিইআরসির প্রতি তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যহার কমিয়ে আনার এবং মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার আহ্বান জানায়।

এদিন ক্যাবের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এম শামসুল আলম। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিইআরসি গত ১৫ বছর শুধু মূল্যহার নির্ধারণের কাজ করেছে। বর্তমানেও এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মূল্যহার কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিইআরসি। এখন তারা গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করেছে। বিদ্যুতেরও শুরু করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির ভুইয়া। সঞ্চালনা করেন শুভ কিবরিয়া, তিনি পেশায় সাংবাদিক।

ধন্যবাদ জানান ক্যাবের সদস্য শওকত আলী খান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ইআরস র সরক র র র ধ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লুটের পরিমাণ প্রকাশের দাবি

গত সরকারের আমলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লুটের পরিমাণ প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানানো হয়েছে। 

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় ক্যাব।

এ ছাড়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম. শামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য শওকত আলী খান, বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। 

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘‘বর্তমান বিইআরসি পূর্বের বিইআরসির ধারা বজায় রাখছে, যা দেখে আমরা উদ্বিগ্ন। তাদের আচরণের মাধ্যমে বিইআরসি আইনের যে উদ্দেশ্য, তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। যা আগের বিইআরসি করে গেছে, এখনকার বিইআরসি তার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুরো জাতির মধ্যে যে চেতনা তৈরি হয়েছে, বিইআরসি কর্মকাণ্ড সে চেতনাবিরোধী। আজকের বক্তব্যের পর আমরা আশা করছি, বিইআরসি গণশুনানি স্থগিত করবে, ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে পরিমাণ লুণ্ঠনমূলক ব্যয় হয়েছে, তার পরিমাণ নির্ধারণ করবে। এ ছাড়া, সরকারের রাজস্ব কমিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভর্তুকি কী পরিমাণ কমানো সম্ভব, তা বিইআরসিকে নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া জ্বালানি অপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে প্রস্তাব পাওয়া গেছে, সে শুনানি স্থগিত করবে। এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা গণশুনানিতে যাব। দাবি বাস্তবায়নে বিইআরসি যেন একাত্মতা প্রকাশ করে।’’

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ বিধান আইন এবং বিইআরসি আইনে সংযোজিত ধারা ‘৩৪ক’ বাতিল করে। তবে আইনে সংযোজিত কমিশন কর্তৃক প্রবিধান প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে- এই বাক্যটি বাতিল হয়নি। ফলে মন্ত্রণালয় কর্তৃক জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণ অব্যাহত আছে।

আবার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশেষ বিধান আইন, ২০১০ বাতিল করা হলেও তাতে ২ (খ) ও ২ (গ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে ওই আইনের আওতায় যেসব অন্যায় ও অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানো হয়েছে, সেসব কার্যক্রমকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তাতে জনগণ প্রতারিত হয়েছে। ফলে বলা যায়, সরকার ও বিইআরসির চেতনা ও ধারণায় কোনো পরিবর্তন আসেনি, লুণ্ঠন সুরক্ষিত থেকেছে।

ক্যাব আরো বলে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ক্যাবের পক্ষ থেকে দেওয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংস্কার প্রস্তাবে কোনো কাজ হয়নি। বিইআরসি লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মূল্যহার কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরকারকেও কোনো পরামর্শ দেয়নি। বরং বিইআরসি কর্তৃক গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, পেট্রোবাংলা এবং তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল, সুন্দরবন ও কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানিসমূহের প্রাকৃতিক গ্যাসের শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণীতে বিদ্যমান, প্রতিশ্রুত ও সম্ভাব্য ভোক্তার গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর ২৬ ফেব্রুয়ারি বিইআরসি দিনব্যাপী শুনানির আয়োজন করেছে। অর্থাৎ গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বিদ্যুতেরও শুরু করা হবে। গ্যাসে বিদ্যমান আর্থিক ঘাটতি বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা এবং প্রতিশ্রুত ও সম্ভাব্য শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ব্যবহৃত গ্যাসের বর্তমান মূল্যহার ৩০ থেকে ৭৫ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব বিইআরসি আইনের ধারা ২২ ও ধারা ৩৪ এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগ আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লুটের পরিমাণ প্রকাশের দাবি