চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কাল ভারত-পাকিস্তান মহারণ
Published: 22nd, February 2025 GMT
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ম্যাচে কাল (রোববার) মুখোমুখি হচ্ছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। ‘এ’ গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচটি দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় শুরু হবে।
টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে জয় ভীষণ জরুরি পাকিস্তানের জন্য। নিজেদের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৬০ রানে হেরে বিপাকে পড়েছে স্বাগতিক দল। অন্যদিকে, প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছে ভারত।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কারণে কেবলমাত্র আইসিসি ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) টুর্নামেন্টেই মুখোমুখি হয় ভারত ও পাকিস্তান। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দুই দল কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেনি। ফলে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম আকর্ষণীয় এ লড়াই নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে কয়েক মিনিটের মধ্যেই। স্টেডিয়ামে থাকবেন ২৫ হাজার দর্শক, আর বিশ্বের লাখো ক্রিকেটপ্রেমী টেলিভিশনে উপভোগ করবেন হাইভোল্টেজ এই ম্যাচ।
এবারের আসরে নিউজিল্যান্ড দুই ম্যাচ খেলে ২ জয় নিয়ে শীর্ষে আছে। ভারতও সমান ২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে, তবে রান রেটে পিছিয়ে। পাকিস্তান এখনো পয়েন্টের খাতা খুলতে পারেনি, তাই সেমিফাইনালে যেতে হলে জয় ছাড়া বিকল্প নেই বাবর আজমদের জন্য। পাকিস্তানের ব্যাটার সালমান আগা বলেন, ‘টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে ভারতের বিপক্ষে জিততেই হবে। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই, জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব।’
পাকিস্তান শিবিরে দুঃসংবাদ, ইনজুরির কারণে পুরো আসর থেকে ছিটকে গেছেন বাঁহাতি ব্যাটার ফখর জামান। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১১৪ রানের ইনিংস খেলে দলকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন তিনি। তার পরিবর্তে দলে যোগ দিয়েছেন ইমাম-উল-হক।
বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে ভারতীয় দল। পেসার মোহাম্মদ সামি ৫৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন, আর ওপেনার শুভমান গিল অপরাজিত ১০১ রান করেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে শামি বলেন, ‘পাকিস্তান ম্যাচ আমাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা। সেরা পারফরম্যান্স দিতে হবে এবং তাদের চাপে রাখতে হবে।’
ওয়ানডেতে মুখোমুখি লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত ১৩৫ ম্যাচে পাকিস্তান জয় পেয়েছে ৭৩টিতে, ভারত জিতেছে ৫৭টিতে। তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ভারতের পক্ষে। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ছয় ওয়ানডের মধ্যে পাঁচটিতেই জয় পেয়েছে রোহিত শর্মার দল।
দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ
পাকিস্তান: মোহাম্মদ রিজওয়ান (অধিনায়ক), বাবর আজম, ইমাম-উল-হক, সৌদ শাকিল, তৈয়ব তাহির, ফাহিম আশরাফ, খুশদিল শাহ, সালমান আগা, উসমান খান, শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ।
ভারত: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সামি, আর্শদীপ সিং, শ্রেয়াস আইয়ার, ঋষভ পান্ত।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি
গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।
গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।
ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’
তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।