লক্ষ্মীপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দুর্নীতি ও দুঃশাসন করে কেউ টিকে থাকতে পারে না। অতীতে সোনার বাংলা গড়ার নামে শোষণ হয়েছে, কিন্তু এখন এমন রাজনীতি করা যাবে না, যাতে পেশিশক্তির মতো দেশ ছেড়ে পালাতে হয়।

শনিবার সকাল ১১টায় লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের আমির মাস্টার রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে আদর্শ সামাদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

দীর্ঘ ২৮ বছর পর লক্ষ্মীপুরে আয়োজিত এই জনসভাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর আমির শাহজাহান চৌধুরী, কুমিল্লা মহানগর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ডা.

রেজাউল করিম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এড. আতিকুর রহমান ও ঢাকাস্থ লক্ষ্মীপুর ফোরামের সভাপতি ডা. আনোয়ারুল আজীম প্রমুখ।

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, দেশে এখনো চাঁদাবাজি চলছে। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলছি, এসব বন্ধ করুন। যদি কেউ খাদ্য সংকটে থাকে, আমরা তার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করব।

জুলাই বিপ্লবের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। জনসভায় দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিপুল সংখ্যক সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম র আম র

এছাড়াও পড়ুন:

দর্জিদের পতাকার নমুনা দিলাম

মার্চ মাসটা ছিল অগ্নিঝরা। আন্দোলন, মিছিল, জনসভা, হরতাল,  কোনো সময় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের, কোনো সময় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কর্মসূচিতে গোটা দেশবাসীর সঙ্গে খুলনা ছিল প্রথম কাতারে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছে এবং সংগ্রাম পরিষদ শুধু আন্দোলনই করছে না, প্রশাসনও এই সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশমতো কাজ করছে। অত্যন্ত আন্তরিকভাবেই সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তর সংগ্রাম পরিষদের কথামতোই পরিচালিত হয়। সে সময়ে খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা মিলে একটা জেলা ছিল। 
আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশ পেয়ে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ দিবস ও পতাকা দিবস’ পালন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিলাম এবং জনগণকে ওই দিন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলনের আবেদন জানালাম। খুলনা শহরের দর্জিদের পতাকার নমুনা দিলাম। তারা পতাকা তৈরি করে দোকানের সামনে রাখলে সাধারণ মানুষ এই পতাকা ক্রয়ের জন্য ব্যস্ত হলো, এমনকি পতাকার মূল্য ১০ টাকা দাবি করলেও ক্রেতা ১২ টাকা দিয়ে খুশি হয়ে পতাকা কিনতে লাগল। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে জনসাধারণ যাতে সময়মতো পতাকা পায়, তার জন্য পতাকা তৈরি ও বিক্রয় করে লভ্যাংশ সংগ্রাম পরিষদের তহবিলে জমা দেওয়ার জন্য স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য মরহুম শেখ আব্দুল কাইউমের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হলো। দিন নেই, রাত নেই সবাই ব্যস্ত। ২১ ও ২২ মার্চ আমরা অত্যন্ত ব্যস্ত দিন অতিবাহিত করলাম। চাঁদা আদায়, পতাকা বিক্রয়, ফুল সংগ্রহ, গণসংযোগ ইত্যাদির ভেতর দিয়ে পুরো দিনটাই কেটে গেল। ২২ মার্চ রাতে কেউ আর তেমন ঘুমাল না, সারারাত ধরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করল। খুলনা থেকে জাহাঙ্গীর সম্পাদিত ও প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘দেশের ডাক’ পত্রিকা পূর্ণ পৃষ্ঠা স্বাধীন বাংলার রঙিন পতাকাসহ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করল। এই সংখ্যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেল এবং সব কপি দুপুরের মধ্যে বিক্রি হয়ে গেল। 
২৩ মার্চ আমরা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রভাতফেরি সমাপ্ত করে দ্রুত নাশতা-পানি খেয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় পার্কে এসে উপস্থিত হলাম। ছাত্র-শ্রমিক-জনতায় পার্ক যেন উপচে পড়ছে। পার্কের উভয় দিকের রাস্তায় এবং সোসাইটি সিনেমা হলের ধারে কয়েকটা মিলিটারি অবস্থান নিয়েছে। 
আমরা ঠিক সকাল সাড়ে ৯টায় বাদ্যের তালে তালে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’– এই গান গেয়ে আমি স্বাধীন বাংলার পতাকা তুললাম। জয় বাংলা বাহিনী সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের অভিবাদন জানিয়ে পতাকাকে স্যালুট করল, উপস্থিত জনতা করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানিয়ে আমাদের এই পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান উপভোগ করল এবং কর্মসূচি শেষ হলো। স্বাধীনতার পতাকা তোলার ভেতর দিয়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম তথা স্বাধীন বাংলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হলো। 
উল্লেখ করা আবশ্যক যে, অনেক আওয়ামী লীগ নেতা তখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন, কিন্তু স্বাধীন বাংলা ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র-জনতা স্বাধীনতার জন্য ছিল অনড়-অবিচল। বিকেলে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে পার্কে বিরাট জনসভা হলো। উল্লেখ্য, এই সভায় আমি সভাপতিত্ব করলাম, যেহেতু টসে জিতে ১২ মার্চের সভায় হুমায়ুন কবীর বালু সভাপতিত্ব করেছিলেন। সন্ধ্যায় আমরা পতাকা নামালাম, সন্ধ্যার পরও জনসভা চলল। আমরা বজ্র শপথ নিলাম– ‘দেশ স্বাধীন করবই।’ 
তারপর ২৫ মার্চের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ২৬ মার্চ সকালে খবর পেয়ে আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তখন খুলনা খানজাহান আলী রোডে আলিয়া মাদ্রাসার সম্মুখে অবস্থিত ‘কবীর মঞ্জিল’-এ বৈঠকের পরিকল্পনা করলেন মুজিব বাহিনীর প্রধান শেখ কামরুজ্জামান টুকু। ওই দিন আমরা প্রাথমিক আলোচনা করে একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠন এবং যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিই।
২৭ মার্চ সকালে অতি সতর্কতার সঙ্গে একে একে টুকু ভাই, কাইউম, আমিসহ অন্যরা মিলিত হলাম এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হলো যুদ্ধ অনিবার্য। যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন অস্ত্র, রসদ, পরিকল্পনা, অর্থ ইত্যাদি। কিন্তু কে কীভাবে এ যুদ্ধ পরিচালনা করবে? তাই এই যুদ্ধ পরিচালনার জন্য একটা বিপ্লবী পরিষদ করা হোক। তখন সর্বসম্মতিক্রমে শেখ কামরুজ্জামান টুকুকে চেয়ারম্যান, ডা. আসিফুর রহমান, কে এস জামান, জাহিদুর রহমান জাহিদ, শেখ আব্দুল কাইউম ও আমাকে সদস্য করে এই বিপ্লবী পরিষদ গঠিত হলো। আরও সিদ্ধান্ত হলো যে, এই পরিষদ যুদ্ধ চলাকালে সর্বোচ্চ পরিষদ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই পরিষদের সিদ্ধান্ত হবে চূড়ান্ত। 
২৭ মার্চ সন্ধ্যায় হঠাৎ শেখ কামরুজ্জামান টুকু সিদ্ধান্ত নেন যে, খুলনা সার্কিট হাউসে ও তৎসন্নিকটস্থ ইউএফডি ক্লাবে পাকিস্তানি সেনাদের তাঁবুতে তিনি আক্রমণ পরিচালনা করবেন। আমরা তেমন কেউ ওই সময় তাঁর কাছে না থাকায় শেখ আব্দুল কাইউম, ডালিম, জ্যোতিষ, বিনয়, তপনসহ তিনি এই দুঃসাহসিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তপন, জ্যোতিষ ও বিনয় আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের তেমন সক্রিয় কর্মী না হলেও দেশপ্রেমের কারণে তারা আত্মদানের প্রস্তুতি নিয়ে টুকু ভাইয়ের সঙ্গে যোগ দেয় এবং তারা শক্তিশালী বোমা, মলোটভ ককটেল প্রভৃতি অতি প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠে। সামান্য একটা ২২ বোর রাইফেল, গোটা দুয়েক দেশি বন্দুক আর ওদের তৈরি বোমা ও ককটেল নিয়ে ইউএফডি ক্লাবের সেনাছাউনিতে অভিযান চালানো হয়। অতর্কিতে ওই আক্রমণের জন্য খানসেনারা প্রস্তুত ছিল না। ফলে বহু খানসেনা এ হামলায় আহত হয়। হামলা শেষে সবাই নিরাপদে ফিরে আসি। খুলনায় পাকিস্তানি মিলিটারিদের ওপর এটাই ছিল প্রথম গেরিলা আক্রমণ। 
অনুলিখন
হাসান হিমালয়
খুলনা ব্যুরো

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দর্জিদের পতাকার নমুনা দিলাম