‘নিশি ট্রেনের ভূত’ উপন্যাসে যা বলে গেল ভূত
Published: 22nd, February 2025 GMT
ঘটাং ঘট, রাতের ট্রেন। ছুটে চলছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। কেবিন–যাত্রী শিশির মোড়ল, সহযাত্রী সে কি ভূত! মধ্যরাতে আঁধার কেবিনে সহযাত্রীর হঠাৎ প্রশ্ন, ‘আপনি কখনো ভূত দেখেছেন?’ আচমকা প্রশ্নে বিরক্ত শিশির মোড়ল।
অনেক ভূতের গল্প শুনেছি দাদি, নানি, নানার মুখে। দারোগাভূত, গেছোভূত, বাঁশভূত, ব্যাঙভূত, চ্যাংভূত আরও কত নামের ভূত! ছড়া কেটেছি বন্ধুরা তালে তালে, ‘তেঁতুলগাছের তলা/ রাত্রিদুপুর বেলা/ ভূতে মারে ঠেলা।’ কিন্তু ‘নিশি ট্রেনের ভূত’ উপন্যাসের লেখক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক আমাদের, মানে পাঠকদের জন্য নিয়ে এসেছেন এক প্রাপ্তবয়স্ক ভূতের জীবনভিত্তিক এক তরজমা। লেখকের এই ভূত বাংলা নিয়ে লেখাপড়া করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। জীবনটা শুরু হয়েছিল তার স্বপ্ন বুনে। বিয়ে করে ব্যবসায় থিতু হয়েছিল গল্পপটু এই ভূত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আনুকূল্যে গল্পবন্ধুও জুটে গিয়েছিল মেসেঞ্জারে। তা-ও আবার এই নারীবন্ধুর স্বামী থাকে প্রবাসে। বেশ সময় কাটত মেসেঞ্জারে গল্প বলে অবসরে। বউয়ের সন্দেহের তালিকায়ও নাম উঠেছিল। রাতের ট্রেনের আঁধার কেবিনে বসে এই ভূতপ্রেম, নীতিনৈতিকতা, সন্তানবাৎসল্য, শিশুমনের স্বপ্ন, লড়াকু জীবন আর নেতা নামের নির্মম লেবাসের আড়ালের ক্রূরতার গল্প বলে যায়। নিষ্ঠুরতার আগুন কী করে নিমেষে সব স্বপ্নের যবনিকাপাত ঘটিয়ে দেয়, তার মর্মস্পর্শী বর্ণনা কাঁদিয়ে দেয় সামাজিক বিবেককে। ভূতটি যখন মানুষ ছিল, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিল ব্যবসার কাজে। সেই সঙ্গে আকাঙ্ক্ষাও ছিল মেসেঞ্জার-প্রেমিকার সঙ্গে মধুর সময় কাটানোর। শিশির মোড়ল গল্পের মধ্যে এতটাই লীন হয়ে গিয়েছিলেন যে তাঁর তাড়া ছিল গল্পের যবনিকায় পৌঁছানোর, কিন্তু ভূত নামের আত্মাটি সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে বলে যেতে থাকে পরতের পর পরত তার দেখা মানুষজীবনের গল্প। শিশির মোড়লের তাগাদার পরিপ্রেক্ষিতে ভূতটি ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায় ছাপা হওয়া এক রসাত্মক ধারাবাহিক উপন্যাসের কিয়দংশের অবতারণা করে। ওই অংশ ছিল এমন: ‘নায়ক ও নায়িকা ঘরে ঢুকল। তারা দরজা বন্ধ করল। রাতের বেলা। তারা বাতি বন্ধ করল। বিছানায় গিয়ে বসল দুজন পাশাপাশি।’ তারপর লেখা: ‘বাকি অংশ পরের লেখায়।’ পরের সংখ্যায় লেখা শুরু হলো, ‘নায়িকা গোসল সেরে এসেছে। তার চুল বেয়ে পানি ঝরছে। সে একটি গামছা দিয়ে চুলে বেণি বানাচ্ছে।’ এরপর পাঠকদের কাছ থেকে প্রচুর চিঠি আসতে লাগল, ‘দুই সংখ্যার মধ্যবর্তী সময়ে কী হলো?’ উপায়ান্তর না দেখে সম্পাদক নোট দিলেন, ‘এই দুই সংখ্যার মধ্যবর্তী সময়ে কী ঘটিয়াছে, তাহার জন্য সম্পাদক দায়ী নহেন।’ ভূতের জবানিতে গুরুগম্ভীর একটি লেখা লিখতে গিয়ে পাঠকদের এমন একটি রসাত্মক অনুষঙ্গ উপহার দেওয়া কি সব লেখকের পক্ষে সম্ভব!
আসলে ট্রেনে আগুন কারা দেয়? কে তাদের নির্দেশ দেয়? কী লাভ তাদের? যাঁরা আমাদের এই সমাজকে চালান; স্কুলে বা কোনো অনুষ্ঠানে যাঁরা শিশুদের সুন্দর সুন্দর উপদেশ দেন; তারাই যদি রাতের আঁধারে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী কিংবা দলীয় স্বার্থে অগ্নিসন্ত্রাস চালান বিপথগামী কিছু তরুণকে সামান্য কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে, তাহলে দেশ-সমাজ-রাষ্ট্র কে চালায়? মানুষ, নাকি ভূত?যে শিশুর স্বপ্ন ছিল পাইলট কিংবা অ্যাস্ট্রোনট হবে, হিংসার আগুন তাকে মুহূর্তে বোকা বানিয়ে দেয়। যে শিশুটি ট্রেনের দুলুনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছবি এঁকে চলে, নিমেষে সে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, ভেবেছিল কি শিশুটি, কিংবা তার মা-বাবা-স্বজন! কষ্ট মোচড় দিয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, শিশুটি মারা গেলেও তার স্কুলব্যাগটি অক্ষত রয়েছে। হয়তো সে পুড়ে মরার আগে ব্যাগটি ছুড়ে ফেলেছিল দূরে।
আসলে ট্রেনে আগুন কারা দেয়? কে তাদের নির্দেশ দেয়? কী লাভ তাদের? যাঁরা আমাদের এই সমাজকে চালান; স্কুলে বা কোনো অনুষ্ঠানে যাঁরা শিশুদের সুন্দর সুন্দর উপদেশ দেন; তাঁরাই যদি রাতের আঁধারে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী কিংবা দলীয় স্বার্থে অগ্নিসন্ত্রাস চালান বিপথগামী কিছু তরুণকে সামান্য কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে, তাহলে দেশ-সমাজ-রাষ্ট্র কে চালায়? মানুষ, নাকি ভূত? কে দেবে এর জবাব? এই প্রশ্নটা দেহ থেকে আত্মা আলাদা হয়ে যাওয়ার আগের ভূতের, নাকি আপনার, আমার—সবার?
আনিসুল হক.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দর
এছাড়াও পড়ুন:
ইয়ামালকে নিয়ে মেসি: সে এখনই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন
বার্সেলোনার কিংবদন্তি ও বর্তমান ইন্টার মায়ামি তারকা লিওনেল মেসি সম্প্রতি প্রশংসায় ভাসিয়েছেন উঠতি তরুণ উইঙ্গার লামিনে ইয়ামালকে। যাকে তিনি সরাসরি বলেছেন ‘বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন।’
মাত্র ১৮ বছর বয়সী ইয়ামাল বার্সেলোনার বিখ্যাত ‘লা মাসিয়া’ একাডেমির খেলোয়াড়। যেখান থেকে উঠে এসেছিলেন মেসিও। ক্লাবের জার্সি গায়ে অভিষেকের পর থেকেই নজর কাড়ছেন ইয়ামাল। বিশেষ করে হান্সি ফ্লিকের বার্সেলোনার আক্রমণভাগের অন্যতম প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছেন তিনি। রাফিনহার সঙ্গে উইংয়ে তার আগ্রাসন ও ফুটবল বুদ্ধিমত্তা রীতিমতো প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক।
সম্প্রতি একটি শো’তে ইয়ামালের বিষয়ে মেসি বলেন, ‘‘ইয়ামাল যা দেখাচ্ছে, তা অসাধারণ। সে ইউরোতে স্পেনের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার বয়স মাত্র ১৭! এখনো সে বেড়ে ওঠার পর্যায়ে আছে। ঠিক যেভাবে আমিও ধীরে ধীরে নিজেকে গড়ে তুলেছিলাম। ওর মধ্যে অবিশ্বাস্য গুণ আছে। আমি নিশ্চিত, সে এখনই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন।’’
আরো পড়ুন:
মেসির দাবি প্রতিনিয়ত মান বাড়ছে মেজর লিগের
নেইমারের সান্তোসে ফেরার পথে মেসির পুরনো কোচ
শুধু মেসি নন, তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও প্রশংসা করেছেন ইয়ামালের। সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সতীর্থ রিও ফার্ডিন্যান্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোনালদো বলেছিলেন, ‘‘লামিনে ইয়ামালের মধ্যে অনেক প্রতিভা দেখি আমি। আশা করি ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে না। ওর একটু ভাগ্যেরও দরকার। কারণ, বয়স এখনো খুবই কম। তবে আমি নিশ্চিত, এই প্রজন্মের সেরাদের একজন হবে সে।’’
মাত্র ১৬ বছর বয়সে লা লিগার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার রেকর্ড গড়েন ইয়ামাল। এরপর ইউরোতে খেলতে নেমে হয়ে যান ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়। শুধু তাই নয়, ২০২৪ ইউরোতে স্পেনকে শিরোপা জেতাতে সাহায্য করে টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতে নেন তিনি।
ইয়ামাল ও তার দল বার্সেলোনা লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে। এছাড়া চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে। যেখানে তারা ইন্টার মিলানের মুখোমুখি হবার অপেক্ষায় রয়েছে।
ঢাকা/আমিনুল