বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ে গঠিত হচ্ছে ছাত্র-জনতার রাজনৈতিক দল। চলতি মাসে দলটির ঘোষণা আসবে বলে আগেই জানিয়েছেন সংগঠকরা। তবে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে হঠাৎ দেখা দেয় জটিলতা। প্রধান দুই পদের স্টেক নিয়ে বিরোধে জড়ালে প্রকাশ্যে আসে একাধিক গ্রুপ। শঙ্কা ঘনীভূত হয় ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ঐক্য নিয়ে। এর মধ্যে অ্যাক্টিভিস্টদের নানা কথায় জল গড়িয়েছে অনেক দূর।

ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দলে আলোচিত প্রার্থীদের অন্যতম ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থীর রয়েছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা। তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে অনুসারীদের অনেকে ফেসবুকে সরব হয়েছিলেন। যদিও এসব নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি আখতারকে। তবে আজ শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও মাহফুজ আলমের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি শেয়ার করেছেন আখতার হোসেন। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন- ‘দুইজন বন্ধু, একজন ছোটভাই! জাতির প্রত্যাশার ভাষা আমাদের পাথেয় হোক।’

ছবিটি দুই উপদেষ্টাকে মেনশনও করেছেন আখতার হোসেন। স্বাভাবিকভাবেই নেটিজেনদের মধ্যে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। কেউ কেউ ভাবতে শুরু করেছেন- এবার কি তাহলে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়ে গেল? ছাত্র-জনতার নতুন দলের প্রধান দুই পদে আসছেন নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেন?

এসব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে কেবল নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা এলেই। তবে ছবিটির প্রতীকী একটি অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করলে হয়তো ব্যাপারটি দাঁড়ায়- দুই পাশে দুই কাণ্ডারি নিয়ে মাঝে ‘মাস্টারমাইন্ড’। অর্থ্যাৎ নতুন দলের আহ্বায়ক হচ্ছেন জুলাই আন্দোলনের এক দফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম আর সদস্য সচিব হচ্ছেন ‘স্বচ্ছ ইমেজের নেতা’ হিসেবে পরিচিত আখতার হোসেন।

উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রভাবশালী চরিত্র মনে করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহফুজ আলমকে।  অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ‍উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসও তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে। ছাত্র-জনতার নতুন যে দল আসছে- তার গঠন প্রক্রিয়ায়ও রয়েছে মাহফুজ আলমের একচ্ছত্র প্রভাব। ফলে আখতার হোসেনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে আনতে একসময় তার আপত্তি ছিল বলে প্রচার হলেও এই ছবি বলছে, সে বরফ হয়ত গলে গেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম আখত র হ স ন ছ ত র জনত র আখত র হ স ন উপদ ষ ট কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভয়ে পালিয়েছে, ভারতের নন্দনগরে এক মুসলিম পরিবারের টিকে থাকার লড়াই

নন্দাকিনী নদীর তীরে রোজ সকাল আটটায় নিজের ড্রাই ক্লিনিংয়ের দোকানের বাদামি শাটার খুলে কাজ শুরু করেন আহমেদ হাসান। উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চলের উত্তরাখন্ড রাজ্যের নন্দনগরে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছেন তিনি।
সকালে দোকান খুলে নিত্যদিনের কাজ শুরু করেন হাসান। শুকনো পদ্ধতিতে পরিষ্কার (ড্রাই ক্লিনড) করা কাপড় নিজের দোকানের গোলাপি দেয়ালের প্লাস্টিক কভারে সুচারুভাবে ঝুলিয়ে রাখেন। এরপর ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজের আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন গ্রাহক হাসানের কাছে আসতেন। শেরওয়ানি, স্যুট, কোট, প্যান্ট এবং শীতকালীন পোশাক তাঁর কাছে পরিষ্কার করতে দিতেন। কোনো কোনো গ্রাহক তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিতেন। চা খেতে খেতে রাজনীতি নিয়ে আলাপ ও মজা করতেন, হাসি–আনন্দ ও সুখ-দুঃখ বিনিময় করতেন। গ্রাহকদের বেশির ভাগ ছিলেন হিন্দু, অল্প কিছু ছিলেন মুসলিম।
কিন্তু ১২ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত পাঁচজনেরও কম হিন্দু গ্রাহক হাসানের দোকানে এসেছেন। তিনি জানান, কোনো মুসলিম গ্রাহকের আশায় থাকা বৃথা। এ সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।

নন্দনগরে এখন হাসানই একমাত্র মুসলিম পুরুষ। অথচ এই শহরে কয়েক মাস আগেও ১৫টি মুসলিম পরিবার ছিল, যারা বংশপরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছিল। হাসানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। প্রতিবেশী হিন্দুদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। পূজা-পার্বণে হিন্দুরা তাঁদের নিমন্ত্রণ করতেন। আর ঈদের সময় হিন্দু প্রতিবেশীদের তাঁরা দাওয়াত দিতেন। প্রতিবেশী হিন্দু মারা গেলে শবদাহের জন্য তিনি কাঠ সংগ্রহ করতেন, হিন্দু বন্ধুদের মরদেহ কাঁধে বহন করে শ্মশানে নিয়ে গেছেন।

কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে এই এলাকায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতা শুরুর পর এ সবকিছু রাতারাতি বদলে গেছে। এক হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এ সহিংসতা শুরু হয়েছিল। তবে নন্দনগরে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে মন–মানসিকতায় আরও আগে থেকেই বড় পরিবর্তন সূচনা হয়েছিল, যা করোনাকাল থেকে খেয়াল করে আসছিলেন হাসান।

গত সেপ্টেম্বরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শারীরিক হামলার আগে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ঘৃণামূলক স্লোগান দেওয়া হতো। মুসলিমবিরোধী কিছু বিক্ষোভও হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষেরা রাতের আঁধারে নন্দনগর ছেড়ে পালিয়ে যান।

হাসানও পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই ছোট্ট শহর আবার মুসলিমদের বসবাসের উপযোগী করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কারণ, এটাই তাঁদের জন্মভূমি। কিন্তু হাসানের পরিবারকে সেখানে এখনো ভয়ে ভয়েই থাকতে হচ্ছে।

হিন্দু প্রতিবেশীরা এখন হাসানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন না। আগে তিনি সন্ধ্যায় নিয়মিত নন্দাকিনী নদীর তীরে হাঁটতে গেলেও এখন যান না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেন না। তাঁর আশঙ্কা, আবারও সহিংসতা দেখা দিতে পারে।

হাসান বলেন, ‘আমি সোজা দোকানে যাই, দোকান থেকে বাসায় আসি। সারাটি জীবন এই শহরে কাটালেও নিজেকে আমার এখন ভূত বলে মনে হয়। আমি যেন সম্পূর্ণ অদৃশ্য। এমনকি কেউ আমার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলছেন না।’

‘মুসলিমদের জুতা দিয়ে পেটাও’

রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে গাড়িতে করে নন্দনগর যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। ভারত-চীন সীমান্তের কাছাকাছি স্থানের এই শহরটি নন্দাকিনীর কয়েকটি উপনদীর সংগমস্থলে অবস্থিত। গঙ্গার ছয়টি উপনদীর একটি হলো নন্দাকিনী, যাকে হিন্দুরা পবিত্র বলে বিশ্বাস করেন। শহরটি জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

হাসানের দাদা পার্শ্ববর্তী উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বিজনৌর জেলার নাজিবাবাদ শহর থেকে ১৯৭৫ সালে নন্দনগরে এসেছিলেন। তাঁদের পরিবার সেখানেই বসতি গড়ে। পরের বছর হাসানের জন্ম হয়।

এক মুসলমান নরসুন্দরের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলে হাসান ও নন্দনগরের অন্য মুসলমানরাও অংশ নিয়েছিলেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ