ট্রাম্পের নির্দেশে ৫ হাজার ৪০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা পেন্টাগনের
Published: 22nd, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন গতকাল শুক্রবার ৫ হাজার ৪০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেডারেল কর্মী বাহিনী কাটছাঁট করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে পেন্টাগন এসব কর্মীকে চাকরিচ্যুত করবে।
ট্রাম্পের এমন আগ্রাসী উদ্যোগের জেরে কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ক্ষুব্ধ ভোটারদের তোপের মুখে পড়ার এক দিন পর পেন্টাগন এ কথা জানাল।
পেন্টাগন বলছে, আগামী সপ্তাহে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ৫০ হাজার লোকবল কমিয়ে ফেলার অংশ হিসেবে এটা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ ছাঁটাই প্রক্রিয়া এখানেই শেষ হবে না।
পেন্টাগনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একজন দারিন সেলনিক বলেন, পেন্টাগন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখবে। শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৯ লাখ বেসামরিক শ্রমশক্তির ৫ থেকে ৮ শতাংশ কমিয়ে আনবে পেন্টাগন।
ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআই গতকাল সংস্থাটির ১ হাজার ৫০০ কর্মীকে ওয়াশিংটনের সদর দপ্তর থেকে সরিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বদলি করার ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটির দুটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সরকারি হিসাবে, এফবিআইয়ের প্রতি চার কর্মীর একজন ওয়াশিংটনে কাজ করছেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও উপদেষ্টা ইলন মাস্কের সরকারি চাকরিজীবীদের এমন গণছাঁটাই ভালো চোখে দেখছেন না মার্কিনিরা।
রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত এক জরিপে বেশির ভাগ মার্কিনি উদ্বেগ্ন প্রকাশ করেন, ট্রাম্প ও মাস্কের গণছাঁটাই সরকারি পরিষেবাগুলো ব্যাহত করতে পারে।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রোজওয়েলের টাউন হলে এক অনুষ্ঠানে ভোটারদের তোপের মুখে পড়েছিলেন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা রিচ ম্যাককরমিক। এ সময় কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ কমাতে ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাইয়ে ক্ষোভ জানান ভোটাররা।
আরেকজন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্কট ফিৎজগারল্ডকে উইসকনসিনের ওয়েস্ট বেন্ডে এক আয়োজনে এমন ক্ষুব্ধ দর্শকদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, একজন ক্ষুব্ধ দর্শক চিৎকার করে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাকে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টরা রাজা নন।’
আরও পড়ুন৫০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা সিআইএর২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এদিকে পেন্টাগনে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা অস্থিরতার পর গতকাল শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল চার্লস কিউ ব্রাউন জুনিয়রকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুদ্ধবিমানের চার তারকাবিশিষ্ট পাইলট ব্রাউন মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান। জেনারেল ব্রাউন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় কোনো মার্কিন নাগরিক, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন।
আরও পড়ুনক্ষমতায় এসে কতজনকে চাকরিচ্যুত করলেন ট্রাম্প১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনপেন্টাগনে অস্থিরতা: শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প বল ক ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএমডিএর আরো ২ প্রকৌশলী সাময়িক বরখাস্ত, ব্যাখ্যা তলব
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে জোরপূর্বক দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করার ঘটনায় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পর আরো দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. এম আছাদুজ্জামানের কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান স্বাক্ষরিত পৃথক অফিস আদেশে তাদের বরখাস্ত করা হয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রকৌশলীরা হলেন- নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা ও সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ।
গত ২৩ মার্চের ওই ঘটনার দুইদিন পর অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এই দুই প্রকৌশলীসহ আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মেহেদী, সহকারী মেকানিক মো. আপেল ও মেহেদী হাসান, গুদামরক্ষক মো. নুরুজ্জামান, মজিবুর রহমান, আব্দুল কাইয়ুম খান, ক্যাশিয়ার শফিকুল ইসলাম, গাড়িচালক মো. শাহাবুল, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শমসের আলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম। মামলায় ৫০-৬০ জনকে নাম না জানা আসামি করা হয়েছে।
রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তারা আত্মগোপনে আছেন।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আছেন উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান। বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরক ও মো. জাফরুল্লাহ, জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার জন্য গত বৃহস্পতিবার বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. এম আছাদুজ্জামানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে তাকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা সিরাজগঞ্জ রিজিয়নের দায়িত্বে ছিলেন, কিন্তু তিনি অনুমতি ছাড়া রাজশাহীতে চলে আসেন এবং অতিরিক্ত সচিবকে হেনস্তার ঘটনায় তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইডি শফিকুল ইসলামকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। তবে, রিলিজ অর্ডার না পাওয়ায় তিনি দপ্তর ছাড়তে পারেননি। ২৩ মার্চ দুপুরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে তার দপ্তরে প্রবেশ করে তাকে জোরপূর্বক বের করে দেন। তখন একটি চিঠি প্রস্তুত করা হয়, যাতে লেখা ছিল- শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন এবং জাহাঙ্গীর আলম খান দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
শফিকুল ইসলাম মামলায় উল্লেখ করেছেন, তাকে এই চিঠিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।
এই ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম কৃষি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন এবং ২৫ মার্চ রাজপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। তার অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ের রিলিজ স্লিপ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি বিএমডিএতে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার নির্দেশনা পেয়েছিলেন। প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানের নেতৃত্বে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করেন।
বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরক বলেন, “বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালকের পদটি প্রশাসন ক্যাডারের একজন অতিরিক্ত সচিবের জন্য সংরক্ষিত। শফিকুল ইসলাম বদলি হওয়ার পরও যদি তিনি দায়িত্বে থাকেন, সেটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবে, একজন কর্মকর্তাকে জোরপূর্বক দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করা এবং চেয়ার দখল করা গুরুতর অপরাধ।”
তিনি আরো বলেন, “মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ