কীর্তনখোলার চরে টাকা জমিয়ে পরম যত্নে শিশুরা গড়েছে ২৫ শহীদ মিনার
Published: 22nd, February 2025 GMT
ছোট শিশুরা বাহারি রং, মাটি ও কাগজ দিয়ে তৈরি করেছে রঙিন-বর্ণিল সাজের শহীদ মিনার। সারা বছর টিফিনের টাকা থেকে জমানো অর্থ দিয়েই শহীদ মিনার তৈরি করেছে এই শিশুরা। তারা অপেক্ষায় থাকে একুশে ফেব্রুয়ারির। ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারী ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে তাদের জমানো অর্থ দিয়ে করে আয়োজন। এদিন শিশুরা দলে দলে ভাগ হয়ে তৈরি করে নানা রঙের শহীদ মিনার।
১৪ বছর ধরে বরিশাল নগরের রসুলপুর চরের শিশুরা মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে এমন ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করে আসছে। তাদের আয়োজনে থাকে গান, নাচ, আবৃত্তি, পুরস্কার বিতরণসহ নানা অনুষ্ঠান। এই শিশুদের সবাই নিম্ন আয়ের পরিবারের। এবার এই শিশুরা ২৫টি শহীদ মিনার তৈরি করেছে।
কীর্তনখোলা নদী তীরে বিচ্ছিন্ন এক জনপদ হলো এই রসুলপুর। নদীর বাঁকে জেগে ওঠা এই চরে গড়ে উঠেছে সুবিধাবঞ্চিত-দরিদ্র মানুষের বসতি। এর নাম রসুলপুর কলোনি (বস্তি)। এলাকাটি বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য পড়লেও মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন। আগে এই চরে শহীদ মিনার ছিল না। শিশুরাও জানত না শহীদ মিনার কী। কিন্তু এখন সেই শিশুরা সবই জানে।
গতকাল শুক্রবার ওই চরে দিনভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃত্তি, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও খাওয়াদাওয়ার আয়োজন ছিল। কলোনির অলিগলিতে, ঘিঞ্জি পরিবেশের মধ্যে সামর্থ্য অনুযায়ী গড়ে তোলা হয়েছে শহীদ মিনার। মাটির বেদিতে কাঠ, ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে প্রতিটি মিনার। কাঠের গুঁড়ার সঙ্গে রং মিশিয়ে লেখা হয়েছে ভাষাশহীদদের নাম। অঙ্কিত হয়েছে মানচিত্র। রঙিন কাগজে আবৃত করা হয়েছে শহীদ মিনার এলাকা।
ছোট শিশুরা বাহারি রং, মাটি ও কাগজ দিয়ে তৈরি করেছে রঙিন-বর্ণিল সাজের শহীদ মিনার।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েট শিক্ষার্থীদের নামে মামলা এবং বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের নামে মামলা এবং বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই দুই দাবিসহ পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্যসচিব জাহিদ আহসান। তিনি বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল এবং বহিরাগত বিএনপি-যুবদল ক্যাডাররা সাধারণ ছাত্রদের ওপর নির্মম হামলা চালান। সেখানে দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রদলের জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জের ধরেই ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ মাসুদকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সেই হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীরা বারবার প্রশাসনের সাহায্য চেয়েও নিরাশ হন।
হামলার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন, সেই সময়েই ১০ এপ্রিল ২২ জন শিক্ষার্থীর নামে মিথ্যা মামলা করা হয়। মামলার পরপরই ১৩ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নামে মামলা প্রত্যাহারের দাবি তোলে।
গতকাল রাতে মিরপুরে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহিন আহমদের ওপর বিএনপি ও যুবদলের নেতা–কর্মীরা নির্মম হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রসংগঠনটি। সংগঠনটির ভাষ্য, হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সদস্য আহত হয়েছেন বলে তারা নিশ্চিত হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল সহিংস রাজনীতির বদলে সমাজে সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখা। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে বিএনপি আগের মতোই সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে সংগঠনটি।
পাঁচ দফা দাবি
১. কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের হামলা, মামলা এবং শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়ে নিরপেক্ষ ভদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। ২. আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের নামে মামলা এবং বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা। ৩. কুয়েটের ভিসি ড. মোহাম্মদ মাসুদকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করা, পদত্যাগ না করলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে অপসারণ করা। ৪. আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কুয়েটের সব হল খুলে দেওয়া এবং সর্বশেষ দাবি হলো মাহিন আহম্মেদের ওপর হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করা।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি।
আরও পড়ুন৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার, ২ মে হল খোলার সিদ্ধান্ত২০ ঘণ্টা আগে