পাকিস্তান এবার আরও দু্র্বল, বলছেন মাঞ্জরেকার
Published: 22nd, February 2025 GMT
ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান সর্বশেষ ওয়ানডে কবে জিতেছে? ভুলে যেতেই পারেন। কারণ, ঘটনাটি ৮ বছর আগের, ২০১৭ সালের। সেবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারতকে হারিয়েছিল পাকিস্তান।
এরপর বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে ৬টি ওয়ানডে খেলেছে পাকিস্তান। যেখানে হেরেছে ৫টিতে, অন্যটি পরিত্যক্ত।
সাম্প্রতিক সময়ে এমন পারফর্ম করা পাকিস্তান এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও ভারতকে ভোগাতে পারবে না বলে মনে করেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার।
২০১১ সাল থেকে ভারত ও পাকিস্তান মোট ১৫টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে ভারত জিতেছে ১০টি, পাকিস্তান মাত্র ৪টি। অথচ দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে এখনো বেশ এগিয়ে পাকিস্তান। তাদের ৭৩টি জয়ের বিপরীতে ভারতের জয়ের সংখ্যা ৫৭টি। বোঝাই যাচ্ছে, একটা সময়ে কতটা দাপুটে ছিল পাকিস্তান দল। তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে। প্রতিভা, সামর্থ্য—সবকিছুর বিচারে এগিয়ে ভারত।
এই কন্ডিশনে সফল হতে ভালো স্পিনার দরকার, কিন্তু পাকিস্তান দলে শুধু একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার আছে—আবরার আহমেদ। তারা সালমান আগা বা খুশদিল শাহকে ব্যবহার করতে পারে, তবে তারা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়।সঞ্জয় মাঞ্জরেকারভারত–পাকিস্তান ম্যাচের আগে সেটিই মনে করিয়ে দিয়েছেন মাঞ্জরেকার। ধারাভাষ্যকার দীপ দাশগুপ্তের প্রশ্নের জবাবে এই সাবেক ক্রিকেটার বলেন,‘পাকিস্তান এখন ভারতের মানের কাছাকাছিও নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত পুরোপুরি আধিপত্য বিস্তার করেছে, আর এবার পাকিস্তান তো আরও দুর্বল।’
আরও পড়ুনএক আদালতে জরিমানার পর আরেকটিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল, চুমু কাণ্ডে জেরবার রুবিয়ালেস৪৮ মিনিট আগেভারত–পাকিস্তান ম্যাচের ভেন্যু এবার দুবাই। এখানে প্রথম ম্যাচে ভারত খেলেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে দুই দলের খেলা ৫ জন স্পিনারই দারুণ বোলিং করেছেন। মাঞ্জরেকার এ জায়গায় পাকিস্তানের বড় ঘাটতি দেখছেন, ‘এই কন্ডিশনে সফল হতে ভালো স্পিনার দরকার, কিন্তু পাকিস্তান দলে শুধু একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার আছে—আবরার আহমেদ। তারা সালমান আগা বা খুশদিল শাহকে ব্যবহার করতে পারে, তবে তারা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়। পেস বোলিংয়েরও খুব একটা প্রভাব পড়বে না।’
আবরার ছাড়া পাকিস্তান দলে বিশেষজ্ঞ স্পিনার নেই.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ক স ত ন দল
এছাড়াও পড়ুন:
‘অভিযুক্ত’ চালক-সুপারভাইজারকে আসামি না করায় প্রশ্ন বাদীর
ঢাকা–রাজশাহী রুটে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় হওয়া মামলায় বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে আসামি না করায় প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় শুক্রবার ভোরে হওয়া মামলার বাদীকে পুলিশ এজাহারের বর্ণনা পড়ে শোনাননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা (যৌন নিপীড়ন) এবং দণ্ডবিধির ৩৯৫ ও ৩৯৭ ধারায় (ডাকাতি) মামলাটি করা হয়। এতে অজ্ঞাতনামা আট–নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। বাসের ভুক্তভোগী যাত্রী ও নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা ওমর আলী এই মামলায় বাদী হয়েছেন।
ওমর আলী আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, আজ ভোর চারটার দিকে পুলিশের গাড়িতে করে তিনি, আরেক যাত্রী সোহাগ হোসেন ও তাঁদের ব্যবসায়িক অংশীদার আবু হানিফকে মির্জাপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। তারপর মামলার এজাহারে তাঁর স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে এজাহার তাঁকে পড়ে শোনানো হয়নি। তিনি জবানবন্দিতে ডাকাতির ঘটনা ও দুই নারীর শ্লীলতাহানির বর্ণনা দিয়েছেন; কিন্তু এজাহারে কী লেখা হয়েছে তিনি জানেন না।
ওমর আলীর কাছ থেকে যখন পুলিশ এজাহারে স্বাক্ষর নিচ্ছিল, তখন ওই বাসের চালক বাবলু আলী (৩০), তাঁর সহকারী মাহবুব আলম (২৮) ও বাসের সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩) থানায় বসে ছিলেন। তাঁরাও মামলা করতে চেয়েছিলেন। যদিও পুলিশ তাঁদের মামলা নেয়নি।
বাদী ওমর আলী তাঁদের থানায় দেখে অবাক হয়েছিলেন উল্লেখ করে বলেন, ‘ওরা (চালক ও তাঁর সহকারী) ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ওরা আসামি হবে। আবার ওরাই মামলা করার জন্য এসে বসে আছে। এটা কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না।’
এ বিষয়ে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার তদন্তে বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাঁদেরও আসামি করা হবে। চালক-সুপারভাইজারদের মামলার বিষয়ে বলেন, ‘তাঁদের নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এ কারণে যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁদের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
এজাহারে যা বলা হয়েছেমামলার এজাহারে ঘটনার বর্ণনায় সময় ও ঘটনার স্থান যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা যাত্রীরা আগে ঠিকমতো বলতে পারেননি। এজাহারে বলা হয়, বাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিলেন। রাত প্রায় একটার দিকে বাসটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার চন্দ্রা বাইপাসে চা–পানের বিরতির জন্য থামে। এ সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে তিন–চারজন নতুন যাত্রী ওঠেন বাসে। রাত দেড়টার দিকে কালিয়াকৈরের হাইটেক সিটি পার্ক-সংলগ্ন খাড়াজোড়া উড়ালসেতু অতিক্রমের পাঁচ–ছয় মিনিট পরেই হঠাৎ যাত্রীবেশে আট থেকে নয়জন ডাকাত দাঁড়িয়ে যায়। তাঁরা ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন ডাকাত পেছন থেকে সামনে এসে বাসচালকের গলায় চাকু ধরে ‘অনেক চালাইছস আর চালানো লাগবে না’ বলে টেনেহিঁচড়ে গাড়ির পেছনে উল্টো করে ফেলে রাখেন। একজন ডাকাত গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন।
এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, রাত পৌনে দুইটার দিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার সোহাগপাড়ার পদচারী–সেতুর প্রায় ১০০ গজ পশ্চিমে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওপর পৌঁছালে ডাকাত দলের ছয়–সাতজন বাদীসহ যাত্রীদের ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা, মুঠোফোন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেন। দুই-তিনজন নারীর শ্লীলতাহানি করেন। বাসটি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানার নাটিয়াপাড়া নাসির গ্লাসের সামনে থেকে ঢাকার দিকে ইউটার্ন নেয়। প্রায় দুই-আড়াই ঘণ্টা কালিয়াকৈর, কোনাবাড়ীসহ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরানোর পর ভোর প্রায় চারটার দিকে ঢাকার আশুলিয়া থানার বারইপাড়া এলাকার নন্দন পার্কের সামনে গাড়িটি টাঙ্গাইলমুখী করে থামিয়ে চালককে ‘১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও থামালে জানে মেরে ফেলব’ বলে তাঁরা দ্রুত বাস থেকে নেমে যান।
আরও পড়ুনচলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিন দিন পর মামলা৬ ঘণ্টা আগেএজাহারে ডাকাতিতে জড়িত ব্যক্তিদের বর্ণনা দিয়ে উল্লেখ করা হয়, তাঁদের বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩৮ বছরের মধ্যে। প্রত্যেকের পরনে ছিল ফুলপ্যান্ট, জ্যাকেট, গেঞ্জি (ফুল ও হাফহাতা) ও শার্ট। একজন লম্বা, ফরসা এবং একজন মোটা, শ্যামলা ও অন্য ডাকাতদের শারীরিক গঠন মাঝারি ধরনের ছিল। তাঁরা ঢাকা ও আশপাশের জেলার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলেন। বাদী ডাকাতদের দেখলে চিনতে পারবেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এজাহারে যাত্রীদের কাছ থেকে লুটের টাকার পরিমাণ ও দুজন নারীযাত্রীর শ্লীলতাহানির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারে ভুক্তভোগী বাসের যাত্রীরা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা হয়ে কীভাবে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় আসেন তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ করা হয়, গাড়িটি বড়াইগ্রাম থানা মোড়ে এলে যাত্রীদের মধ্য থেকে সন্দেহবশত বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজার জড়িত সন্দেহ করে পুলিশের হেফাজতে দেয়। বড়াইগ্রাম থানা-পুলিশ তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।
এজাহার পড়ে শোনানো হয়নি বাদীকেএজাহারে উল্লিখিত বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ওমর আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মামলার এজাহার বাদী ওমর আলীকে পড়ে শোনানো হয়নি বলে তিনি জানান। ওমর আলী বলেন, পুলিশ এজাহারে স্বাক্ষর দিতে বলেছে। এ জন্য তিনি স্বাক্ষর দিয়েছেন।
এজাহারে বাসের সুপারভাইজারের কাছ থেকে ডাকাতেরা ৩০ হাজার টাকা ও দুটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন বলে উল্লেখ করা হলেও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাদী। ওমর আলী বলেন, সুপারভাইজারের কাছ থেকে ডাকাতেরা সব টাকাপয়সা নিয়ে নিলে তাঁরা যমুনা সেতুর টোল কীভাবে দিলেন? বাসে তেল ভরলেন কীভাবে? তাঁরা হোটেলে খেলেন কীভাবে?’
‘টাঙ্গাইলের পুলিশ চ্যালেঞ্জ হিসেবে মামলাটি নিয়েছে’চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় আজ বেলা তিনটায় মির্জাপুর থানার ওসির কার্যালয়ে ব্রিফিং করেছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। এর আগে র্যাব-১৪ টাঙ্গাইলের কোম্পানি কমান্ডার মেজর কাউসার বাধন ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান থানায় মামলার বাদী ওমর আলী ও তাঁর সঙ্গে থাকা বাসের যাত্রী মো. সোহাগ হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাটি ঢাকা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল—তিন জেলায় সম্পৃক্ত। ভুক্তভোগীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ চ্যালেঞ্জ হিসেবে মামলাটি নিয়েছে। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক দল বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ইতিমধ্যে অনেক এগিয়ে গেছে।
আরও পড়ুনঢাকা-রাজশাহী রুটে চলন্ত বাসে ডাকাতির যে বর্ণনা দিলেন যাত্রীরা২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ঘটনাটিকে আন্তজেলা ডাকাত চক্রের কাজ উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, টাঙ্গাইলের পুলিশ ঘটনাটি জানার পর তদন্ত করে স্বপ্রণোদিত হয়ে দ্রুত মামলার প্রক্রিয়ায় যায়। ডাকাত চক্রকে ধরতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহাসড়কে দীর্ঘ সময় ধরে ডাকাতির কারণ, যাত্রীদের ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা। যাত্রীরা কেউ চিৎকার-চেঁচামেচি করতে না পারায় টহল পুলিশ বিষয়টি টের পায়নি। এ ঘটনায় জামিনে থাকা বাসচালক, তাঁর সহকারী ও সুপারভাইজার পুলিশের নজরদারিতে আছেন।