ব্যবসা পরিচালনায় আট সমস্যা, শীর্ষে মূলধনের অভাব
Published: 22nd, February 2025 GMT
এ দেশে ব্যবসা বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় মোটাদাগে আট ধরনের সমস্যায় পড়েন উদ্যোক্তারা। সমস্যাগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে মূলধনের অভাব।
এ ছাড়া অন্য সমস্যাগুলো হলো সহজে ঋণপ্রাপ্তির জটিলতা, দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব, কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, পণ্য বিপণনের সমস্যা, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকট।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪–এ এই চিত্র উঠে এসেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে এমন প্রতিষ্ঠান বা পরিবার পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের মতামতের ভিত্তিতে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিবিএসের শুমারি অনুসারে, প্রায় ৮৬ শতাংশ উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ব্যবসা পরিচালনায় তাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো মূলধনের অভাব।
উদ্যোক্তাদের মতে, পুঁজির অভাবে অনেকে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারেন না। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ে না। মূলধনের অভাবকে উদ্যোক্তারা বড় সমস্যা হিসেবে মনে করেন।
আর ৩৪ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা মনে করেন, সহজে ঋণ পাওয়া যায় না। ছোট ছোট উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সময়ে বলে আসছেন, তাঁরা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ পান না। নানা ধরনের কাগজপত্র বা জামানত লাগে। এতে ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে যায়।
অবকাঠামোর অভাবের কথা জানিয়েছেন প্রায় ১৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মালিক। বাকি সমস্যাগুলোর কথা জানিয়েছেন ৫ থেকে ১০ শতাংশ উদ্যোক্তা। তবে একেকজন উদ্যোক্তা একাধিক সমস্যার কথাও জানান।
দীর্ঘদিন ধরে উদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে নানা ধরনের সমস্যা কথা বলে আসছিলেন। কিন্তু সমস্যা সমাধানের বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি নেই।
অর্থনৈতিক শুমারি প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এবারই প্রথমবারের মতো এই শুমারিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় কী ধরনের সমস্যা হয়, তা উঠে এসেছে। এতে মাঠপর্যায়ে সমস্যা চিহ্নিত করে নীতিনির্ধারকেরা তা সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারবেন।
সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামে রয়েছে ৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান, বাকিটা শহর এলাকায় অবস্থিত। অর্থাৎ শহরে শ্রমঘন ও বড় প্রতিষ্ঠানের প্রাধান্য থাকলেও সংখ্যার দিক থেকে বেশি প্রতিষ্ঠান গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত। অন্যদিকে এসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি সাড়ে ৭ লাখের বেশি মানুষ কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে শহরের কর্মসংস্থান ৪৩ শতাংশ, বাকিটা গ্রামে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমস য গ ল র সমস য ব যবস ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
দাবি আদায়ে সহিংসতা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে: রেহমান সোবহান
দাবি আদায় করতে লোক জড়ো করা এবং সহিংসতা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে হবে।
রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে আজ শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি’ শীর্ষক একটি অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা এম হাসান।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, অতীতের ক্ষমতার চর্চা ছিল অর্থের ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য। আদর্শের চর্চার প্রভাব খুব একটা ছিল না। জাতীয় সংসদের প্রধান থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পর্যন্ত সবাইকে এ ধারায় চলতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ চলে গেলেও সেই টাকার প্রভাবের শূন্যতা পূরণ হয়ে যাচ্ছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে তার কাজের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনার কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার যথেষ্ট সুযোগ আছে। সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি নিশ্চিতের প্রবিধান সংযুক্ত করা হবে।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থাকে কেউ কেউ ‘বিপ্লব’ বলেন। আদতে এটা বিপ্লব ছিল না। বিপ্লব হলে বিভিন্ন কমিশন গঠন করার দরকার হতো না। তিনি উল্লেখ করেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করবে তারা কতটুকু গ্রহণ করবে।
অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, সবাই সংস্কার চান। তবে কী সংস্কার চান, তা সুস্পষ্ট করা উচিত। সংস্কার কেবল আইনের পরিবর্তনের মধ্যে আটকে থাকলে হবে না। আইন অনেক আছে। সমস্যা রাজনৈতিক চর্চার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনেকগুলো সংস্কারের জন্য কাজ করছে। এরই মধ্যে অনেক সংস্কার প্রস্তাবও এসেছে। তবে সংস্কার প্রস্তাবের অনেকগুলো আইন পরিবর্তনের জন্য। সত্যিকার অর্থে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাইলে জনগণকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক চর্চার পরিবর্তনের জন্য অন্তর্বর্তী নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সরকার ব্যবস্থাকেও রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রাখার চর্চাও দেখা গেছে। প্রতিবছর সম্পদের হিসাব প্রকাশ করবে– ‘দিন বদলের’ কথা বলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি। কীভাবে মানুষ এটা বিশ্বাস করবে, রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসছে, সেই প্রতিশ্রুতি রাখবে।
বক্তারা আরও বলেন, নিজেদের পক্ষে কথা বলার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রতিনিধি পাঠানোর পর যদি জনগণ দেখেন তাদের পক্ষে ওই প্রতিনিধি কথা বলছেন না, তাহলে তাকে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থাও থাকা উচিত। রাজনৈতিকগুলো গণতন্ত্রের কথা বললেও নিজেরা গণতন্ত্রের চর্চা করে না। মুখে জনগণই সব ক্ষমতা উৎস– এমনটা বললেও সংসদে নিজ দলের বিরুদ্ধেই কথা বলতে পারে না।