প্রেম কিংবা রক্ত-ঝরা কবিতা ‘প্রেমিকাদের কিছুটা বোকা হতে হয়’
Published: 22nd, February 2025 GMT
মনে প্রেম থাকলে মানুষের বোকা হওয়া ঠেকায় কে! ‘প্রেমিকাদের কিছুটা বোকা হতে হয়’ বলে যে আপ্ত-বাক্য ছুড়ে দিয়েছেন তরুণ কবি শামীম পাটোয়ারী; বিপরীতে প্রেমিকরাও কেন বোকাসোকা হবে না এমন প্রশ্নও তোলা যায়। অবশ্য বোকা না হলেও উদার হতেই হবে এছাড়া যে প্রেমিকদের কোনো গত্যন্তর নেই! উদারই যদি করতে না পারল তবে কীসের প্রেম।
একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে শামীম পাটোয়ারীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমিকাদের কিছুটা বোকা হতে হয়’। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১৬৮-১৬৯ নম্বর স্টলে মিলছে বইটি। বইয়ের নাম শুনলে প্রথমে মনে হতে পারে এটা বুঝি ন্যাকা ন্যাকা প্রেমের কবিতা। আদতে তা নয়, একটুও নয়। বাম রাজনীতির চেতনা যে কবির বুকে স্পন্দন তোলে অহর্নিশ চাইলেও তার পক্ষে অতটা আবেগী হওয়ার সম্ভব নয়। ইতি-নেতি প্রেমের দুটি দিকই তিনি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন এই কবিতায়।
‘প্রার্থনার ভঙ্গিতে তোমার নতমুখ’ পেরিয়ে দেখা দেয় বিপ্রতীপ চিত্র ‘তোমার স্বার্থপর চতুর মুখশ্রী’। পাশাপাশি দুটি চিত্র মেলে ধরে কবি প্রমাণ করতে চেয়েছেন কেন তার মানসপ্রতিমাকে বোকা হতে হবে! শুধু প্রেম-অস্বস্তি বা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোলায় বিষয়ই নয়, কবি অনেক কঠিন নিরেট বাস্তব কথাও উচ্চারণ করেছেন ৮০ পৃষ্ঠার বইটির ছত্রে ছত্রে।
আরো পড়ুন:
‘বইয়ের অনুবাদ স্বত্ব কেনা মোটেও সহজ নয়’
বইমেলায় রক্তিম রাজিবের ‘বোবা পাখির পালক’
অগ্রজ কবি সরকার মাসুদ যথার্থই বলেছেন ফ্ল্যাপে ‘শামীম পাটোয়ারী সাহিত্যে নবাগত নন, অন্যূন পঁচিশ বছর সাহিত্যচর্চা করার পর এই প্রথম তার কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে। তার কবিতায় ভাষার স্বচ্ছতা, বিষয়ের স্পষ্টতা ও ভাবকল্পনার মনোগ্রাহী উপস্থিতি অস্তিত্বমান। এ কবির কাব্যে বিষয়বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। সহজ ও সাবলীল ভঙ্গিতে তিনি মনের নিগূঢ় অনুভব ব্যক্ত করে থাকেন। তার ভাবনা সচ্ছল অভিযাত্রা সর্বদাই গভীরতার দিকে। নর্দমার মশা থেকে কাঁটাতারে ঝুলন্ত ব্রা পর্যন্ত বিস্তৃত তার কবি কল্পনা। যা পথ দেখাতে উদ্বুদ্ধ করে প্রকৃত কবিতার মর্ম ও মিথস্ক্রিয়া।’
শামীম পাটোয়ারীর রাজনৈতিক চেতনা বরাবরই প্রখর। ‘নেতা’ কবিতায় তিনি যখন বলেন ‘বিপন্ন বাতাসে/ দুর্গন্ধের মতো আপনার সুনাম ছড়াচ্ছে’ তখন আমরা বুঝতে পারি বিরক্তির পরিধি কতটা গভীর। আবার ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় কী কৌশলেই না জানিয়ে দিচ্ছেন ‘মেয়েটি যেখানে দাঁড়িয়ে/ সেখানে বিশেষত পতিতারা দাঁড়ায়।’ এভাবে সরাসরি না বলেও পরোক্ষভাবেই অনেক জটিল-কঠিন কথা বলে দেন কবি, জড়তা না রেখেই!
‘বেত খাওয়া বালকের মতো’ কবিতায় তিনি বেত্রাঘাতটা যে ঠিক কোথায় করতে চেয়েছেন পাঠক হিসেবে ঠিকই আমরা বুঝে যাই। স্পষ্ট কথার শাণিত চাবুক পেরিয়ে কবিতা উচ্চারণ করেনÑ ‘যুদ্ধের মিথ্যে বাহানায় সিন্ডিকেট দেখায়/ গরিমায় হাসে হলুদাভ ডিম, মাংসের বাজারে/ ইদানীং কেউ যাচ্ছে না।’
উত্থাপিত চিত্রগুলো একেবারেই তরতাজা, চক্ষুষ্মান সবাই দেখে ও বোঝে শুধু সমাধানটাই অধরা! কবির সমাজতান্ত্রিক মানস মানুষে মানুষে প্রভেদ ঘোচানোর স্বপ্নই বপন করে চলে। অন্যদিকে বিরক্তিকর বাস্তবতা বুঝিয়ে দেয়, ক্ষমতাসীন মুখ পাল্টায় একে একে কিন্তু কাক্সিক্ষত মুক্তি ধরা দেয় না। ‘কবিদের লাম্পট্য’ কবিতায় শামীম পাটোয়ারী শিল্পচর্চার নামে চলমান আত্মপ্রচার তথা অপপ্রচারের দিকগুলো তুলে ধরেছেন। পঠন-পাঠন নেই, নতুন কোনো দর্শন নেই, স্বদেশ-সমকালকে তীর্যকভাবে দেখার দৃষ্টিশক্তিটুকুও নেই এরাই আবার বুনে যাচ্ছেন গণ্ডা-কানি কবিতার খেত-খামার! অকারণ আবেগ আর নির্জীব জীবনবোধকেই সহজ কথায় তুলে ধরেছেন শামীম পাটোয়ারী ‘কবিদের লাম্পট্যে একুশের মেলায়/ বাড়ে বইয়ের জঞ্জাল/ ফেসবুকজুড়ে স্ট্যাটাসের আবর্জনা/ ছবি-সমেত গড়াগড়ি খায়/ অকারণ উচ্ছাসে!’
সব কবিই কি এমন জলজ? অবশ্যই না। সত্যিকারের আকাক্সক্ষা, শুভবোধের স্বপ্ন দেখার কবিও কম নেই। বইয়ের শেষ প্রচ্ছদে শামীম পাটোয়ারী বয়ান করেন নিজস্ব ইশতেহারÑ ‘আমরা মানে কবিরা সব প্রেমের সানাই/ কারো মাঝে জাগলে সে প্রেম/ আমরা তাকে ভীষণ বাজাই।’ প্রেম-প্রশস্তির বাইরেও চাপা থাকে না ক্ষোভ। ‘আরাধ্য’ কবিতায় লেখেনÑ ‘কবি নয়/ নেতা হওয়ার উদগ্র বাসনায়/ কেউ কেউ হারিয়ে ফেলে হিতাহিত জ্ঞান। .
বইটিতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে কবি ও কবিতাবিষয়ক কবিতা। যেমন ‘রূপসী তুমি কবিতার ভৃত্য’ কবিতায় কবি কী চমৎকারভাবেই জানিয়ে দেন ‘কবিতার মতো আর কোনো বিউটি পার্লার নেই/ আর কবির মতো বিউটিশিয়ান’। আবার ‘কবিতা তোমাকে মুগ্ধ করে না’ বলে কবি উচ্চারণ করেন অনুদ্ভাসিত সত্য ‘অথচ তোমার কবিতার শরীর’। জীবন শুধু কবিতার নয়, রুক্ষ ভূমিরও। পরিস্ফুট হয়েছে আরও কবিতায়। বিশেষ করে কাঁটাতারে ব্রা ঝুলে আছে বলে কবি অঙ্গুলি নির্দেশ করেন আমাদের অন্তঃসারশূন্যতার দিকেই। দ্রোহে জ্বালালো বহ্নি এই অনন্ত অম্বরে কবিতায় চোখের সামনে তুলে ধরেন ফেলে আসা ইতিহাস। রক্তঝরা ’৫২ ও ’৭১ পেরিয়েও যে জাতি হিসেবে আমরা বিষকাটালির ঝোপে পড়ে আছি সেই বিষাদময় দৃশ্য ও দৃশ্যান্তর। শিশু হত্যার দেশে লাটিমের মতো ঘুরি পরীমনির দেশে জেগে থাকে রোজিনা। রিমোট হাতে গেলে লুণ্ঠিত গণতন্ত্র অপহৃত বিজয় রোগটা যদিও তুমি। কোলবালিশের কষ্ট তুমিই দায়ী বোমা হামলার পেছনে প্রেমিকা। প্রেমিকা ও বর্ণমালা বন্ধুর জন্য কয়েক পঙ্ক্তি একটি অদৃশ্য হাত গোধূলি লালিমায় কার রক্ত শকুনরা মরে বিরান হবে জল...। এভাবেই যদি কবিতার শিরোনামগুলো পাশাপাশি বসিয়ে দেই সৃষ্টি হতে থাকবে অর্থময় বিভিন্ন দৃশ্য কিংবা সাদৃশ্য। প্রেম অপ্রেম যুদ্ধ জিঘাংসা আহাজারি পেরিয়ে কবিতাগুলো যে অভিন্ন সুতোয় গাথা সেটাও পেয়ে যাই এমনতর অসম্ভবের খেলায়।
কবি নিজেই দিগন্তবিস্তারী আ-চুল প্রেমিক সেটা উৎসর্গপত্র থেকে আঁচ করতে পারি। চারটি চমৎকার বাক্যে সাজিয়েছেন উৎসর্গ আমার মা/ আমার দেশ/ আমার প্রেমিকা। আমার অন্তঃদহনের তিন উৎসমূল।
প্রেমিকারা বোকা হোক তবে পাঠকরা না হোক! পাঠকরা চালাক হলে কাব্যগ্রন্থটি অবশ্যই কিনে পড়বেন। বাজারে অনেক অকবিতার ভিড়ে ভালো মানের এক পশলা কবিতার নিশ্চয়তা দিচ্ছে বইটি। তবে একটা উদ্বেগ না জানিয়ে পারছি না এত বানান ভুল কেন? মাত্রাপ্রকাশ আগামীতে পাণ্ডুলিপির প্রুফ দেখিয়েই পাঠকের হাতে তুলে দেবে প্রত্যাশাটুকু জানিয়ে রাখলাম।
প্রেমিকাদের কিছুটা বোকা হতে হয়
শামীম পাটোয়ারী
প্রকাশক : মাত্রাপ্রকাশ
প্রচ্ছদ : নাওয়াজ মারজান
মূল্য : ২২০ টাকা
প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আদালতের ভেতরে পুলিশকে মারধর, বিএনপির ৬ নেতাকর্মী আটক
পাবনায় আদালতের ভেতরে শুনানি চলাকালে ভিডিও ধারণ করতে বাধা দেওয়ায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিএনপির ৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে পাবনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
আটককৃতরা হলেন- ঈশ্বরদী উপজেলা সদরের ফতে মোহাম্মদপুর নিউ কলোনী এলাকার মৃত আব্দুল ওহাবের ছেলে আওয়াল কবির (৩৮), হাবিবুর রহমানের ছেলে সরোয়ার জাহান শিশির (৩৩), দাশুড়িয়া গ্রামের মৃত আমজাদ খানের ছেলে কালাম খান (৪০), এম এস কলোনী এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে রুবেল হোসেন (৩৩), লোকোসেড গাউছিয়া মসজিদ এলাকার মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে সবুজ হোসেন (৩৫) এবং ভাঁড়ইমারী বাঁশেরবাদা গ্রামের মৃত আব্দুল গাফফার সরদারের জহুরুল ইসলাম (৩৫)।
তাদের মধ্যে আওয়াল কবির ঈশ্বরদী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক, সরোয়ার জাহান শিশির পৌর ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশী, কালাম খান দাশুড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রুবেল হোসেন পৌর ৪নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং জহুরুল ইসলাম ডালিম সলিমপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের সদস্য।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর ঈশ্বরদীতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সময় নাশকতা একটি মামলার শুনানি ছিল। সেই মামলায় আটককৃতরা হাজিরা দিতে এসেছিলেন। হাজিরা চলা অবস্থায় তারা এজলাসে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে থাকেন। এসময় সেখানে থাকা পুলিশ সদস্য শাহ আলম তাদের ছবি তুলতে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন ওইসব নেতাকর্মীরা।
এসময় আদালতের আইনজীবী ও উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করেন এবং হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে আদালতের শুনানি শেষে তাদের আটক করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিদর্শক ( কোর্ট ইন্সপেক্টর) রাশেদুল ইসলাম জানান, সঙ্গে সঙ্গে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পাবনা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আইনজীবী মাসুদ খন্দকার বলেন, “আদালতের এসলাসে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়ার মত নয়। বিএনপির কেউ যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/শাহীন/এস