গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাচ্ছেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা
Published: 22nd, February 2025 GMT
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তাদের আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তাঁরাও এ গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল-১) কার্যবিধি, ২০১০-এর সংশোধনের খসড়া প্রস্তাবে প্রসিকিউটরদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এই কার্যবিধিতে আরও কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। তারপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের দুটি সংশোধন আনা হয়েছে। আর ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধির সংশোধন আনার এটিই প্রথম উদ্যোগ।
কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, তাহলে যেন সাজার ব্যবস্থা থাকে। এম বদরুদ্দোজা, সাবেক সম্পাদক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, চিফ প্রসিকিউটরসহ মোট ১৪ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন। কো-অর্ডিনেটরসহ তদন্ত সংস্থায় ২৩ জন তদন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। আইন অনুযায়ী, প্রসিকিউটররা তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধি অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাস্তবায়ন করতে পারেন। সংশোধন করে পরোয়ানা কার্যকরের ক্ষমতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাদেরও দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া প্রসিকিউটর বা তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
কার্যবিধি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির করতে হয় পুলিশকে। এখানে পরিবর্তন এনে বলা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ বা তদন্ত কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনাল বা যেকোনো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আসামিকে হাজির করবেন।
চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় বলছে, বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা একান্তভাবে ট্রাইব্যুনালের। যেহেতু বিধি আগে থেকেই আছে, তাই অধিকতর স্বচ্ছতা ও বিচারকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করার জন্য বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনবেন ট্রাইব্যুনাল। তা ছাড়া ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন আনা হয়েছে, সেটার জন্যও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। ট্রাইব্যুনাল কোনো সংশোধনী আনলে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে।
ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধির দ্রুতই সংশোধন আনা হতে পারে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, কার্যবিধির সংশোধন এলে তদন্তপ্রক্রিয়া সহজ হবে, যা বিচারপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে।
তদন্ত কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার নিজস্ব অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তাঁরা সহযোগিতা করবেন, যখন তদন্ত কর্মকর্তা আসামি গ্রেপ্তারে যাবেন। তা ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেপ্তারে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও সহযোগিতা করবেন।
আরও যেসব সংশোধন আসছে
কার্যবিধির সংশোধনী এনে ট্রাইব্যুনালের কিছু ক্ষমতা কমানো হচ্ছে। এখন ট্রাইব্যুনাল নির্দেশিত প্রথম শ্রেণির কোনো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জবানবন্দি নেওয়া হয়। জবানবন্দি গ্রহণের সময় ভুক্তভোগীর আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারেন। যদিও সেই আইনজীবী কথা বলা বা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না জবানবন্দির সময়। এই দুটি ধারা বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তবে বিধির ২৪-এর ২ উপবিধিতে বলা হয়েছে, তদন্ত সংস্থার কোনো সদস্য যেকোনো প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য আবেদন করতে পারেন। এ ধারা বহাল রাখা হতে পারে।
তদন্ত চলার পাশাপাশি বিচার চলার সময় ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিধানও বিধিতে যুক্ত হতে পারে। জব্দ করা যেকোনো বস্তুর বিষয়ে যথাযথ সংস্থার বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে পারবেন তদন্ত কর্মকর্তা—এ বিষয়ও যুক্ত হতে পারে।
চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় বলছে, এসব সংশোধনী এলে তা বিচারপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা মনে করেন, তদন্ত কর্মকর্তা বা প্রসিকিউটরকে গ্রেপ্তারি ক্ষমতা দেওয়া হলে তদন্তের ক্ষেত্রে অনিয়ম বা নিরপেক্ষতা হারাবে না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই ক্ষমতা থাকলে হয়তো তদন্ত সাহসিকতার সঙ্গে করতে পারবেন তাঁরা।
অবশ্য এম বদরুদ্দোজা মনে করেন, গ্রেপ্তারি ক্ষমতা দেওয়ার পাশাপাশি আরেকটি বিষয় রাখা দরকার। সেটি হচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তাহলে যেন সাজার ব্যবস্থা থাকে। এটি থাকলে তদন্ত কর্মকর্তা সতর্কভাবে কাজ করবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার করতে পারবেন, তা–ও যেন উল্লেখ থাকে। গ্রেপ্তার করতে হবে কেন, সেটিরও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা থাকতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র র ক ষমত গ র প ত র কর তদন ত স আইনজ ব অন য য় সদস য করব ন প রথম র করত
এছাড়াও পড়ুন:
বিনা ভোটে জয়ের পথে প্রার্থীরা
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ের পথে বিএনপি-জামায়াতপন্থি প্রার্থীরা। গতকাল বুধবার মনোনয়ন ফরম জমা ও মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিনে ১৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিজয়ী হতে যাচ্ছেন তারা।
বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী মফিজুল ইসলাম।
আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জয়ের পথে রয়েছেন– সভাপতি পদে মো. শহিদুল্লাহ, সহ-সভাপতি নূরুল ইসলাম, এরশাদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মিজানুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মানিক, কোষাধ্যক্ষ মুজিবুল ইসলাম, লাইব্রেরিবিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন পাখি, এনরোলমেন্ট সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ, রিক্রিয়েশন সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, আইটি সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এবং সদস্য পদে ওবায়েদ উল্লাহ সরকার, শরিফুল ইসলাম, কামরুল হাসান সুমন, মু. সলিমুল্লাহ খান ও মো. মাসুদ।
এর আগে সোমবার কুমিল্লা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়। তপশিল অনুসারে মনোনয়নপত্র বিক্রির শেষ দিন ছিল গত মঙ্গলবার, প্রত্যাহার ২৩ ফেব্রুয়ারি, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ২৪ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৬ মার্চ এ নির্বাচন হবে। এবার মোট ভোটার ১ হাজার ২১০ জন। কিন্তু একজন করে প্রার্থী থাকায় প্রার্থীরা জয়ের ঘোষণার অপেক্ষায় আছেন।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন সমকালকে জানান, গত বছরের ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মিছিলে হামলার অভিযোগে আইনজীবী সমিতির সভাপতি (মোস্তাফিজুর রহমান লিটন) ও সাধারণ সম্পাদকসহ এক সঙ্গে আওয়ামী লীগপন্থি ৩২ আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কৌশলে আমাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে এবারের তপশিল ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অমান্য করে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদানের তিন দিন সময় দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র এক দিন। নির্বাচনের সময়ও এগিয়ে আনা হয়েছে এক সপ্তাহ। আমরা আদালত চত্বরে যাওয়ার পরিবেশ পাইনি। আমাদের নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় ছিল। তাই আমাদের কেউ ফরম আনতে যাননি।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট কাজী মফিজুল ইসলাম। সমকালকে তিনি বলেন, এ মামলার সঙ্গে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা টাকা জমা দিয়েছেন ও বৈধ ভোটার তারাই মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তারা (আওয়ামী লীগ) এলে মনোনয়ন ফরম নিতে পারতেন। নির্বাচন নিয়ে কোনো কৌশল করা হয়নি। এ নির্বাচনের কিছু প্রক্রিয়া শেষে প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।