‘দুই মাস ধরি টিসিবির ট্রাক আইসে না’
Published: 22nd, February 2025 GMT
‘কম টাকায় চাইল-ডাইল কিনি কোনোমতে বাঁচি আচি। দুই মাস ধরি টিসিবির মাল নিয়া হামার এত্তি ট্রাক আইসে না। সামনোত রোজার মাস, মাল না পাইলে মোর মতোন গরিব মাইনসের মরণ দশা হইবে।’ টিসিবির পণ্য না পাওয়ায় আক্ষেপের সঙ্গে এভাবে কথাগুলো বলেন রংপুর নগরীর বাহাদুর সিংহ এলাকার সুবিধাভোগী সৈয়দা বেগম।
শুধু তিনি নন, হঠাৎ করে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় চলতি বছরের প্রথম দুই মাস টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকায় বিশেষ করে আসন্ন রমজান মাস ঘিরে চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছে দরিদ্র পরিবারগুলো।
জানা যায়, জেলায় ২ লাখ ৮৫ হাজার পরিবারের মাঝে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের ৬৬ পয়েন্টে ডিলারের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা হয় ৯৯ হাজার ২৬৮ পরিবারকে। ৪৭০ টাকার প্যাকেজে ছিল দুই কেজি ডাল, দুই লিটার ভোজ্যতেল ও পাঁচ কেজি চাল। অভিযোগ রয়েছে, টিসিবির সুফলভোগীর অধিকাংশ রাজনৈতিক বিবেচনায় তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এ জন্য পুরোনো কাগজের কার্ড বাতিল করে নতুন স্মার্ট কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যাচাই-বাছাই শেষে স্মার্ট কার্ডের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে ২৫ হাজার ৭২টি পরিবার। তবে কার্ড বিতরণ না হওয়ায় পণ্য বিক্রি বন্ধ রেখেছে টিসিবি। কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে পরিবারগুলো।
টিসিবির সুফলভোগীদের রংপুর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তম এলাকার বাসিন্দা একরামুল হক বলেন, ‘ওইসব পণ্য বাইরে থেকে কিনলে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি লাগে।’
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ না করার কারণে টিসিবির কার্যক্রম বন্ধ থাকা সত্যি দুঃখজনক।’
টিসিবি রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগে ম্যানুয়ালি টিসিবির কার্যক্রম পরিচালিত হতো। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় সুবিধাভোগীরা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পেরেছে। তবে বর্তমানে স্মার্ট কার্ড ছাড়া সুফলভোগীরা পণ্য কিনতে পারবে না। গত বছরের ১০ জানুয়ারি প্রথম ধাপে সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য মোট বরাদ্দের ২০ হাজার ৪০৩টি এবং ওই বছরের ১২ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৪ হাজার ৬৬৯টি ফ্যামিলি স্মার্ট কার্ড জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু ডিসেম্বরের পর থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন করে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়নি। সে কারণে পণ্য বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। টিসিবি তাদের নিবন্ধিত ২১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করলেও কার্যক্রম পরিচালনা করে সিটি করপোরেশন। আর জেলা প্রশাসন এই কার্যক্রম সমন্বয় করেন।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা জানান, জেলা প্রশাসন থেকে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড কয়েক মাস আগে পেয়েছি। এতদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সুবিধাভোগীদের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণের সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাইনি। এখন চিঠি পেয়েছি এবং কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। আগামী রমজানে পণ্য বেচা যাবে বলেও জানান তিনি।
টিসিবির কার্যক্রমে সমন্বয়কারী রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রমিজ আলম বলেন, খুব দ্রুত টিসিবি এবং সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টিসিবি রংপুরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘কার্ড বিতরণ না হওয়ায় সিটি করপোরেশন এলাকায় পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ৬৬০ টাকার প্যাকেজে রয়েছে ২ লিটার ভোজ্যতেল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি, ২ কেজি ছোলা এবং ৫ কেজি চাল।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক র ড ব তরণ পর ব র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ইলিশ: দাম স্বাভাবিক, ক্রেতা কম
বাংলা নববর্ষ উদযাপনে পান্তা ইলিশের একটি রেওয়াজ আছে। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ এলে বাজারে ইলিশের চাহিদা ও দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এবার বাজারে বড় সাইজের ইলিশের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক থাকলেও ক্রেতা কম বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক কেজি বা একটু বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সুইটি রানী রাইজিংবিডিকে বলেন, “পয়লা বৈশাখে পান্তা ইলিশ না খেলে নববর্ষ উদযাপন হবে কী করে? তাই স্বামীকে নিয়ে ইলিশ নিতে এসেছি। এখানে ভালো মানের ইলিশ পাওয়া যায়। আমি এক কেজি ওজনের দুটি ইলিশ নিয়েছি। আমার কাছ থেকে চার হাজার টাকা রেখেছে। গত সপ্তাহেও এই দামে নিয়েছি।”
আরো পড়ুন:
কড়া নাড়ছে ঈদ, চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা
শেষ মুহূর্তে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা
সাজ্জাদুল ইসলাম নামের আরেকজন ক্রেতা রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের অফিসের জন্য ১৫ কেজি ইলিশ নিয়েছি। অফিসের সবাই ইলিশ দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করব। ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম রেখেছে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে। অন্য সময় হয়তো ১ হাজার ৫০০ তে পেতাম। তবে এখানকার মাছগুলো টাটকা।”
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছ কিনতে আসা কাইয়ুম মজুমদার রাইজিংবিডিকে বলেন, “এবার বাজারে অন্য বছরের তুলনায় ইলিশের দাম কম দেখলাম। বড় ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মধ্যে। কিন্তু যারা মধ্যবিত্ত রয়েছে তাদের পক্ষে এই দামেও ইলিশ কেনা সম্ভব না।”
কারওয়ান বাজারে সুজন মৎস্য আড়ৎ এর স্বত্বাধিকারী মো. সুজন সিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, “বাজারে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ সরবরাহ থাকার কারণে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশের দাম বাড়েনি। আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। নদীর ইলিশের চাহিদা বেশি। এখন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তবে আগে যেমন পয়লা বৈশাখে বাজারে ভিড় থাকত। এ বছর ভিড় দেখছি না, বিক্রিও কম।”
বাবুল মৎস্য আড়ৎ এর ইলিশ বিক্রেতা বাবুল মোল্লা রাইজিংবিডিকে বলেন, “এবার বাজারে ইলিশের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। এর অন্যতম কারণ বড় ইলিশ মাছের সরবরাহ ঠিক আছে।”
ঢাকা/রায়হান/সাইফ