বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি: যে কারণে দেরিতে মামলা
Published: 22nd, February 2025 GMT
ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনার চার দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় ৮-৯ জনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন ভুক্তভোগী বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী।
শুক্রবার মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা, তৎসহ ৩৯৫ ও ৩৯৭ পেনাল কোড ১৮৬০ আইনের ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।’
ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, তার পরদিন সকালে যাত্রীরা অভিযোগ করলেও মামলা নেয়নি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ। সীমানা জটিলতার কথা বলে তারা ঠেলে দিয়েছিল বাসটির চলার রুটে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার দিকে।
আবার মির্জাপুর থানা থেকে বলা হয়েছিল যে, এই ঘটনা মির্জাপুর থানার সীমান্তে ঘটেনি।
যদিও যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজারকে আটক করেছিল। আটকদের আদালতে সোপর্দ করলেও সেদিনই সন্ধ্যা নাগাদ তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।
দুই থানা পুলিশের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টায় তিনদিন কোনো মামলা হয়নি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করলে চতুর্থ দিনের মাথায় মামলা নেওয়া হয়। শুক্রবার ভোরে ওই বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় আট থেকে নয়জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন। যদিও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। খবর বিবিসির
বড়াইগ্রাম ও নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমীন নেলী বলেন, ঘটনাটি যেহেতু টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা এলাকায় ঘটেছে, সে কারণে মির্জাপুর থানায় মামলা রুজু হয়েছে। যাত্রীদের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।
এদিকে, শুক্রবার রাতে নাটোর জেলা পুলিশের জানা যায়, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকায় বিক্ষোভ
চলন্ত বাসে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে শুক্রবার শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি দল। এতে সংহতি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের বিচারহীনতার নিন্দা জানিয়ে এর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করেন।
সমাবেশে নারী সংস্কার কমিশনের সদস্য সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন সফল হয় ৫ আগস্ট। সেই সাফল্যের পর আজ একুশে ফেব্রুয়ারিতে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হচ্ছে। ধর্ষকরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।’
ঢাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী আল ফজলে রাব্বি বলেন, দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে দেশে ধর্ষণের ঘটনা থামবে না। অপরাধীদের আশ্রয় দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা। প্রশাসন ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের সাবেক ভিপি তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম রাজপথে নামি তনু ধর্ষণের বিচার চেয়ে, যার সুরাহা এখনও হয়নি। নারীকে এ দেশ দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিচার করে। সুযোগ পেলেই ধর্ষণ করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম নতুন বাংলাদেশে সবার অধিকার থাকবে। নারীর স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু আমাদের চাওয়া অনুযায়ী দেশ গড়ে ওঠেনি। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা। এ সরকারের সময়ে কোনো একটি প্রশাসন ঠিকঠাক কাজ করছে না। ধর্ষণ স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসবের দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। যদি সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে এ দেশে বারবার জুলাই-আগস্ট ফিরে আসবে।’
বিক্ষোভ সমাবেশে ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘুম থেকে উঠুন’, ‘চলন্ত বাসে ধর্ষণ কেন?’ ‘অভ্যুত্থানের চেতনা, ধর্ষকের বাংলা না’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি মুনতাসীর মামুন প্রমুখ।
রাবি প্রতিনিধি জানান, বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় গতকাল বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্যারিস রোডে গিয়ে থামে। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বিভাগে ভর্তির ব্যবহারিক পরীক্ষা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে সংগীত, নাট্যকলা ও ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষার ‘ফি’ জমা দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই তিন বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা আগামী ২০ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে পরীক্ষার ‘ফি’ অনলাইনে জমা দিতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রকাশিত পৃথক দুইটি বিজ্ঞপ্তিতে এই খবর জানানো হয়েছে।
‘বি’ ইউনিটের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের বি-ইউনিটের (কলা ও আইন অনুষদ) স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংগীত ও নাট্যকলা বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ২০ থেকে ২৫ এপ্রিল রাত ১২টার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে লগইন করে ফি জমা দিতে হবে। ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইট www.admission.jnu.ac.bd। ব্যবহারিক পরীক্ষায় নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের ফি ৪০০ টাকা।
‘ডি’ ইউনিটের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সানজিদা ফারহানা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ডি-ইউনিটের (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের ২০ থেকে ২৫ এপ্রিল রাত ১২টার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে লগইন করে ফি জমা দিতে হবে। ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইট www.admission.jnu.ac.bd। এই বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি ৪০০ টাকা।
২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ‘বি’ ইউনিটের তিনটি পালায় মোট আসনসংখ্যা ৭৮৫টি। প্রথম পালায় মোট আসন ২৯৪টি। এতে মানবিকে ১৯৯, বাণিজ্যে ৩৫ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৬০টি আসন। দ্বিতীয় পালায় মোট আসন ২৯২টি। এর মধ্যে মানবিকে ১৯৯, বিজ্ঞানে ৫৮ এবং বাণিজ্য বিভাগের জন্য ৩৫টি আসন। তৃতীয় পালায় মোট আসন ১৯৯টি। এতে মানবিকে ১৩৬, বিজ্ঞানে ৩৯ এবং বাণিজ্য বিভাগের জন্য ২৪টি আসন।
‘ডি’ ইউনিটের দুইটি পালায় মোট আসনসংখ্যা ৫৯০টি। প্রথম পালায় মোট আসন ২৯৪টি। এর মধ্যে মানবিকে ১৯২, বাণিজ্যে ৩৩ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৬৯টি আসন। দ্বিতীয় পালায় মোট আসন ২৯৬টি। এর মধ্যে মানবিকে ১৯৩, বাণিজ্যে ৩২ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য থাকবে ৭১ আসন।