ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনার চার দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় ৮-৯ জনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন ভুক্তভোগী বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী। 

শুক্রবার মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা, তৎসহ ৩৯৫ ও ৩৯৭ পেনাল কোড ১৮৬০ আইনের ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।’

ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, তার পরদিন সকালে যাত্রীরা অভিযোগ করলেও মামলা নেয়নি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ। সীমানা জটিলতার কথা বলে তারা ঠেলে দিয়েছিল বাসটির চলার রুটে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার দিকে।

আবার মির্জাপুর থানা থেকে বলা হয়েছিল যে, এই ঘটনা মির্জাপুর থানার সীমান্তে ঘটেনি।

যদিও যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজারকে আটক করেছিল। আটকদের আদালতে সোপর্দ করলেও সেদিনই সন্ধ্যা নাগাদ তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।

দুই থানা পুলিশের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টায় তিনদিন কোনো মামলা হয়নি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করলে চতুর্থ দিনের মাথায় মামলা নেওয়া হয়। শুক্রবার ভোরে ওই বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় আট থেকে নয়জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন। যদিও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। খবর বিবিসির

বড়াইগ্রাম ও নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমীন নেলী বলেন, ঘটনাটি যেহেতু টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা এলাকায় ঘটেছে, সে কারণে মির্জাপুর থানায় মামলা রুজু হয়েছে। যাত্রীদের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।

এদিকে, শুক্রবার রাতে নাটোর জেলা পুলিশের জানা যায়, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকায় বিক্ষোভ 

চলন্ত বাসে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে শুক্রবার শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি দল। এতে সংহতি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের বিচারহীনতার নিন্দা জানিয়ে এর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করেন। 

সমাবেশে নারী সংস্কার কমিশনের সদস্য সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন সফল হয় ৫ আগস্ট। সেই সাফল্যের পর আজ একুশে ফেব্রুয়ারিতে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হচ্ছে। ধর্ষকরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।’ 

ঢাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী আল ফজলে রাব্বি বলেন, দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে দেশে ধর্ষণের ঘটনা থামবে না। অপরাধীদের আশ্রয় দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা। প্রশাসন ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের সাবেক ভিপি তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম রাজপথে নামি তনু ধর্ষণের বিচার চেয়ে, যার সুরাহা এখনও হয়নি। নারীকে এ দেশ দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিচার করে। সুযোগ পেলেই ধর্ষণ করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম নতুন বাংলাদেশে সবার অধিকার থাকবে। নারীর স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু আমাদের চাওয়া অনুযায়ী দেশ গড়ে ওঠেনি। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা। এ সরকারের সময়ে কোনো একটি প্রশাসন ঠিকঠাক কাজ করছে না। ধর্ষণ স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসবের দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। যদি সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে এ দেশে বারবার জুলাই-আগস্ট ফিরে আসবে।’ 

বিক্ষোভ সমাবেশে ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘুম থেকে উঠুন’, ‘চলন্ত বাসে ধর্ষণ কেন?’ ‘অভ্যুত্থানের চেতনা, ধর্ষকের বাংলা না’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি মুনতাসীর মামুন প্রমুখ।

রাবি প্রতিনিধি জানান, বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় গতকাল বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্যারিস রোডে গিয়ে থামে। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ, মুক্তিপণ নেওয়ার সময় পুলিশ সদস্যসহ চারজন আটক

শরীয়তপুরের ডামুড্যায় দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে আটক করে পিটুনি দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। পরে তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ডামুড্যা বাসস্টান্ড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

আটক ব্যক্তিরা হলেন বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার গারফা এলাকার কৌশিক আহমেদ (৩০), শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার কাউসার তালুকদার (২৯), মাগুরা জেলার বাসিন্দা রুবায়েত মীর (২৭) ও কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার আমৌদা এলাকার শরীফ হোসেন (৩৫)। রুবায়েত মীর চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, কৌশিক ও কাউসার পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম।

এ সম্পর্কে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি চক্র দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছিল। মুক্তিপণ আদায় করার সময় জনতার হাতে ওই চক্রের চারজন ধরা পড়েন। তখন পুলিশ তাঁদের আটক করে। ওই চারজনের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। আর পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা এখানে কীভাবে এসেছিলেন, কোথায় কর্মরত আছেন, তা–ও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ হেফাজতে তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।’

পুলিশ ও ডামুড্যা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি এলাকার জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার ডামুড্যা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী। গতকাল রাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ওই দুজন বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডামুড্যার দারুল আমান বাজার এলাকায় কয়েকজন ওই দুই ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। অপহরণকারী দুই ব্যবসায়ীর কাছে সারা দিনে কাপড় বিক্রির টাকা চান। তবে ওই দুজনের কাছে কোনো টাকা ছিল না। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা চান। দুই ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা ওই দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের লেকের পাড়ে যান। সেখানে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারী ব্যক্তিরা চার লাখ টাকা আদায় করেন।

বাকি ছয় লাখ টাকা আদায় করার জন্য দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁরা ওই দুজনকে নিয়ে ডামুড্যা বাসস্টান্ড এলাকায় যান। সেখানে দুই ব্যবসায়ী গাড়ির ভেতর থেকে চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। তখন স্থানীয় লোকজন ডাকাত বলে চিৎকার দেন। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। স্থানীয় লোকজন অপহরণকারী চারজনকে আটক করে পিটুনি দেন। পরে ডামুড্যা থানার পুলিশ সদস্যরা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। ওই গাড়িতে থাকা আরও চারজন পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে জয় পোদ্দার নামে আরেক পুলিশ সদস্য ছিলেন।

আটক হওয়ার পর অপহরণকারী দলের সদস্য রুবায়েত মীর বলেন, ‘কাউসার তালুকদার আমাদের এখানে এনেছেন। তিনি এই মিশনে আমাদের বস। অপহরণের সময় যেই টাকা পেয়েছিলাম, তা কাউসারের কাছে। আমি আর কিছু জানি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ