বন্ধুর অনুরোধে প্রেমপত্র লিখে যেভাবে ধরা খেয়েছিলাম
Published: 22nd, February 2025 GMT
অর্ণব আমার সহপাঠী। একদিন হঠাৎ তার একটা বায়নায় আমি অবাক। একটা প্রেম নিবেদনের চিঠি লিখে দিতে হবে। সেটা দেখে নিজ হাতে লিখে বর্ণাকে দেবে। বর্ণাও আমাদের বন্ধু। অর্ণবের বিশ্বাস তাতেই ওদের ভালোবাসা হয়ে যাবে।
আমরা তখন নবম শ্রেণিতে পড়ি। ১৯৮৮ সালের সেই সময় হাতের লেখা চিঠিই ছিল মনের কথা বলার অন্যতম মাধ্যম।
অর্ণবের অনুরোধে সেদিন বাড়ি ফিরে একটা চিঠি লিখে ফেললাম। সম্বোধনে নির্দিষ্ট কারও নাম লিখলাম না, বদলে লিখলাম ‘প্রিয়তমা’। চিঠিখানা ভাঁজ করে বাংলা বইয়ের মধ্যে রাখলাম।
পরদিন বাংলা ক্লাসে সবাইকে বই খুলে পড়তে বললেন স্যার। আমি পড়ায় মন দিতে পারছি না। এমন সময় স্যার বইসহ আমাকে টেবিলে ডাকলেন। ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গেলাম। কোনোরকমে বইটা নিয়ে স্যারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। স্যার বইটা নিতেই ভেতর থেকে ভাঁজ করা চিঠিটা টুপ করে নিচে পড়ল। ভাঁজ খুলে কয়েক লাইন পড়লেন স্যার, তারপরই চিৎকার, ‘প্রেমপত্র! চিঠি লেখো? এত সাহস! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।’
বলতে বলতে চিঠিখানা কুটি কুটি করে ছিঁড়ে পকেটে ঢোকালেন। তারপর দু–চার ঘা বেতের বাড়ি দিয়ে ক্লাসে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। কিছুই বলার সুযোগ পেলাম না। ক্লাস শেষে যখন সবার কৌতূহলী চোখ আর প্রশ্নে আমি জর্জরিত, তখন অর্ণব এসে আমার কাঁধে হাত রাখল। দুই চোখ জলে ভেজা। প্রকৃত ঘটনার সাক্ষী হয়ে আমরা দুজন সেদিন আর কাউকে কিছু বুঝতে দিইনি।
স্কুলজীবন শেষ করে একেকজন একেক কলেজে ভর্তি হলাম। বছরখানেক পর একদিন বর্ণার কলেজের সন্ধান পেলাম। তাকে একটা চিঠি লিখলাম, ‘বর্ণা, অনেক কষ্টে তোমার ঠিকানা জোগাড় করেছি। আশা করি, ভালো আছ। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে, নবম শ্রেণির ক্লাসে প্রেমপত্র লেখার অপরাধে স্যার আমাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। সবাই জানত, চিঠিখানা আমি লিখেছি। কিন্তু লেখাটা কার উদ্দেশে ছিল, আজও কেউ তা জানে না। চিঠিটা সেদিন তোমার হাতেই পৌঁছানোর কথা ছিল। আর সেই চিঠির লেখক আমি হলেও নিবেদক আমি ছিলাম না। অর্ণবের অনুরোধে আমি চিঠিখানা লিখেছিলাম। ওর ইচ্ছা ছিল, আমার লেখা চিঠিখানা নিজে আবার লিখে তোমাকে দেবে।’
ডাকবাক্সে চিঠিখানা পোস্ট করে যেন দায়মুক্ত হলাম। বর্ণাকে লেখা চিঠির উত্তর কখনো পাইনি। আশাও করিনি। এইচএসসির পর আমি ঢাকায় চলে এলাম। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ হলো। একদিন এক বন্ধুর মাধ্যমে জানলাম, অর্ণব আর বর্ণা দুজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমি যখন পঞ্চম বর্ষে, তখন একবার মেডিকেলের এক বন্ধুসহ রাজশাহী গেলাম বেড়াতে। উদ্দেশ্য, অর্ণবকে খুঁজে বের করা। আমরা উঠলাম রাজশাহী মেডিকেলের আরেক বন্ধুর হোস্টেলে। তিনজন মিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুঁজে বের করলাম ওদের দুজনকেই। ওরা তখন বিবাহিত। অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে। দুজনই খণ্ডকালীন চাকরি করে। ওদের জীবনের চড়াই–উতরাই, প্রেম, ভালোবাসা আর বিয়ের গল্প সেদিন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনলাম। জানতে পারলাম, কলেজে পড়ার সময়ে বর্ণাকে যে চিঠি আমি লিখেছিলাম, সেটা সে পেয়েছিল। তারপর ওরা দুজনই যখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো, বর্ণাই এগিয়ে এসেছিল।
ঢাকায় ফেরার দিন রেলস্টেশনে আমাদের এগিয়ে দিতে এসেছিল ওরা। আমি অর্ণবকে বললাম, ‘স্কুলের সেই শাস্তি ভোগের কথা আজ পুরোপুরি ভুলে গেলাম, বন্ধু। ভালো থাকিস তোরা।’
আরও পড়ুনওই আমার প্রথম ও শেষ প্রত্যাখ্যান, তারপর আর কাউকে কোনো দিন চোখ তুলে দেখিনি১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: একদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সেতুর অভাবে দুর্ভোগ তিন উপজেলাবাসীর
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়নে ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে রয়েছেন তিন উপজেলার মানুষ। দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে একটি সেতুর জন্য প্রহর গুনছে মাহমুদপুরবাসী। দুই যুগ ধরে এই সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের পর বেমালুম ভুলে যান সেতু নির্মাণের সেই প্রতিশ্রুতি।
টাঙ্গাইল শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রায় ২৪টি গ্রাম নিয়ে ৩০ হাজার জনসাধারণের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাহমুদনগর ইউনিয়ন। ধলেশ্বরীতে সেতু না হওয়ায় তিনটি উপজেলা নাগরপুর, সিরাজগঞ্জের চৌহালী ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযাগ বিচ্ছিন্ন। টাঙ্গাইল সদর থেকে নাগরপুর হয়ে চৌহালী যেতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। একটি সেতু নির্মাণ হলেই টাঙ্গাইল সদর থেকে মাহমুদপুর হয়ে চৌহালী যেতে অন্তত ৩০ কিলোমিটার রাস্তা সাশ্রয় হবে। এতে খরচ ও সময়ের সাশ্রয় হবে। তিনটি উপজেলার সংযোগস্থল হবে এই সেতু। মাহমুদনগর ইউনিয়নে মেজর মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিয়াপড়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র কারিগরি স্কুল, ১০টি প্রাইমারি স্কুল, একটি ফাজিল ও একাধিক হাফিজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। রয়েছে ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। মাহমুদনগর ও তার আশপাশে রয়েছে অনেকগুলো হাট। যার মধ্যে শাহ্জানী, করিমগঞ্জ, বালিয়াপাড়া, চাঁনবয়রা, কাতুলি হাট অন্যতম। এই অঞ্চলের শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশ। প্রধান পেশা কৃষি। কৃষিপণ্য শহরে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। কৃষকের উৎপাদিত ফসল বর্ষাকালে শহরের হাটে বিক্রি করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
একটি সেতুর জন্য মাহমুদনগর ইউনিয়নের চরবাসীকে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভরা বন্যার সময় ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হতে গিয়ে অনেকের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। অনেক জরুরি রোগীকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয়েছে। ধলেশ্বরী সেতু না থাকায় শুকনো মৌসুমে প্রায় এক কিলোমিটার পথ তপ্ত বালুর পথ হেঁটে পার হতে হয়। তিনটি উপজেলার হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। খেয়াঘাট পার হতে অনেক সময় ব্যয় হয়।
মেজর মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার লতা আক্তার বলে, ‘বর্ষাকালে নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। এখানে নদীর ওপর সেতু হলে আমাদের খুবই উপকার হবে।’
স্থানীয় কৃষক দানেজ আলী জানান, কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য বাজারে নিতে পারেন না তারা। অনেক খরচ পড়ে। সময়ও লাগে বেশি। সেতুটি হলে তাদের অনেক উপকার হবে।
খেয়াঘাটের ইজারাদার সোবহান মিয়ার ভাষ্য, ২৬ বছর ধরে ইজারা নিয়ে ঘাট চালান তিনি। এখন প্রতি বছর দেড় লাখ টাকা দিতে হয়। তিনটি উপজেলার লোকজন অনেক কষ্ট করে খেয়া পারাপার হয়। বর্ষাকালে তো ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয়। তাঁরও দাবি ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু হলে কষ্ট কমে যাবে।
জনতা ব্যাংকের টাঙ্গাইল কর্পোরেট শাখার এজিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু না থাকায় আমাদের সমস্যার অন্ত নাই। আমাদের এখানকার কৃষকের সব পণ্য শহরে বিক্রি হয়। সীমাহীন কষ্ট ও অধিক ব্যয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে শহরে পণ্য পরিবহন করা হয়। এই পথ দিয়ে তিনটি উপজেলার মানুষ যাতায়াত করে। অনেক জনপ্রতিনিধি সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভোটের পর ভোট গেছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।’
কথা হয় মাহমুদনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন শিকদারের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, এখানে সেতু না থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজারো মানুষ। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের। এখানে সেতু হলে তিন উপজেলাবাসীর ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এই পশ্চিমাঞ্চল চরবাসীর।
টাঙ্গাইলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, জনগুরুত্ব বিবেচনা করে ইতোমধ্যে সেতুটির পরিমাপ করা হয়েছে। প্রাক্কলন ব্যয় শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অতিদ্রুতই প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।