ভাঙাচোরা অস্ট্রেলিয়াকেও কঠিন মনে হচ্ছে ইংল্যান্ডের
Published: 22nd, February 2025 GMT
অস্ট্রেলিয়ার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে কে কে নেই? সবগুলো নাম মনে করা বেশ কঠিনই। চোটের কারণে প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড, মিচেল মার্শ নেই। ব্যক্তিগত কারণে থাকছেন না মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিস নিয়েছেন আকস্মিক অবসর।
ফলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বে যে দলটা গেছে, সেটাকে অস্ট্রেলিয়ার মূল দল না বলে দ্বিতীয় সারির দল বলাই ভালো। সেই অস্ট্রেলিয়ার আজ প্রথম ম্যাচ লাহোরে, প্রতিপক্ষ তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড। তবে মরা হাতিও যেমন লাখ টাকা, ভাঙাচোরা দল হয়ে গিয়েও আইসিসি টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া তেমনই। সব সময় শিরোপার বড় দাবিদার। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জশ বাটলারও সেটাই যেন মনে করিয়ে দিলেন সবাইকে, নিজের দলকেও হয়তো, ‘আইসিসি টুর্নামেন্টে তো অস্ট্রেলিয়া সব সময় ভালো পারফর্ম করে। আমরা কঠিন একটা চ্যালেঞ্জই প্রত্যাশা করছি।’
শন অ্যাবটের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলিংয়ে এবার প্রায় সবাই নতুন। কিন্তু এটাকেও খুব বড় সুবিধা মনে করছেন না বাটলার, ‘তাদের (নিয়মিত পেসারদের বদলে যারা এসেছে) খুব ভালো সামর্থ্য আছে ওই ঘাটতি পূরণের।’
কামিন্স না থাকায় শেষ মুহূর্তে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পড়েছে স্মিথের কাঁধে। তিনি অবশ্য খর্বশক্তির দল নিয়েও বেশ নির্ভার, ‘আপনি যখন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলবেন, চাপ থাকবেই। আমাদের যা নেই, তা নিয়ে ভাবছি না। অনেকেই তাদের প্রথম বড় টুর্নামেন্ট খেলবে। তারা ভালো কিছু করতে চায়। আমাদেরও আস্থা আছে ওদের ওপর।’
অস্ট্রেলিয়া অর্ধশক্তির দল হয়ে গেছে, তবে ইংল্যান্ডও আসলে খুব সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। কয়েক দিন আগেই ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তারা, এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা হেরেছিল ৪-১ ব্যবধানে। তবে সেসব ভুলে গিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা নতুনভাবেই শুরু করতে চান বাটলার, ‘আমাদের দলে অনেকেই আছে, যারা আগে পাকিস্তানে খেলেছে। আমার মনে হয়, এই অভিজ্ঞতাটা বেশ কাজে দেবে।’
এমনিতে ওয়ানডেতে মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাস অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে। ১৬১ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ৯১টি, ইংল্যান্ড ৬৫টি। দুটি টাই ও ফল হয়নি তিনটি ম্যাচের। তবে আজ কঠিন এক লড়াই হবে বলেই মনে করেন বাটলার, ‘ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো সব সময় থাকে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচও হয়। আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির যে ফরম্যাট, প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রায় একই সুর অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্মিথের কণ্ঠেও, ‘সাদা বলে ইংল্যান্ড কয়েক বছর ধরে দুর্দান্ত খেলেছে। আশা করি কাল (আজ) একটা ভালো ম্যাচ হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকারকেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ দেখাতে হবে
খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের পথ দেখাতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই এই দায়িত্ব নেবে—এমন প্রত্যাশা করেন দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও লেখকেরা। তাঁরা অবশ্য এ–ও বলেন, আগামী ছয় মাসেই সব ঠিক হবে, এমন আশা প্রকাশ করাও ঠিক হবে না। তবে পথ দেখাবেন বর্তমান সরকারের নেতৃত্ব প্রদানকারীরা। বর্তমানে বৈষম্যহীন, সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ আছে।
আজ শনিবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের গভর্নরের স্মৃতিকথা শীর্ষক বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। দৈনিক বণিক বার্তা বইটি প্রকাশ করেছে। রাজধানীর আইসিএবি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নতুন বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে এ বইয়ের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। মানসম্পন্ন জীবনযাত্রা দিতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয় সংস্করণে গভর্নরের স্মৃতি কথা থাকবে না। এখনকার বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে চাই। শপথ নিয়েছি তো, তাই অনেক কথা এখন বলতে পারি না।’
বইয়ের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘ছাত্রজীবনে আমি যে সংগঠনের রাজনীতি করতাম, লেখকও সেই ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। লেখকের রাজনীতিতে যেমন সংযোগ ছিল, তেমনি পড়াশোনায় সংযোগ ছিল।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে—এই বইয়ে সেই চিত্র উঠে এসেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বিকাশ কীভাবে ঘটেছে, সেই বিষয়েও এতে আলোকপাত করা হয়েছে।
লেখক ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, ব্যাংক খাত ঠিক করার সুযোগ এখন। কারণ, এখন রাজনৈতিক চাপ নেই। তিনি প্রবাসী শ্রমিকদের মর্যাদা দেওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীরের মতে, বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ আছে এই বইয়ে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশের গভর্নরকে পালিয়ে যেতে হয়। নীতিনির্ধারণের সময় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হয়। খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখাবে বর্তমান সরকার, এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ষাটের দশকের রাজনীতির একটি চিত্র পাওয়া যায় গভর্নরের স্মৃতিকথা বইয়ে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, দেশকে উন্নত করতে হলে গ্রামের দিকে নজর দিতে হবে। আর গরিব মানুষকে দেখতে হলে বিনয়ী হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক কাজী মারুফুল ইসলাম মনে করেন, ‘এত দিনের বাজার বন্দোবস্তে একটুও আঁচড় লাগেনি। সরকারের তরফেও কোনো উদ্যোগ দেখছি না।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।