ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গতকাল শুক্রবার রাতে যে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তাঁরা সবাই একসময় চরমপন্থী দলের নেতা–কর্মী ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয়রা গতকাল রাতে কয়েকটি গুলির শব্দ পেয়েছে, তবে ভয়ে কেউ বাড়ি থেকে বের হননি।

নিহত তিনজন হলেন ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের হানেফ আলী (৫৬) ও তাঁর শ্যালক উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের লিটন (৩৫) এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রাইসুল ইসলাম (২৫)। হানেফ পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) আঞ্চলিক নেতা ছিলেন। তিনি একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন, পরে তিনি সাধারণ ক্ষমা পেয়ে মুক্তি পান।

গতকাল রাতে শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকায় প্রতিপক্ষের লোকজন তিনজনকে গুলি করে হত্যা করে। রাতেই ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁদের সবার মাথায় গুলির চিহ্ন আছে। আরেক চরমপন্থী দল জাসদ গণবাহিনী বার্তা পাঠিয়ে এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে তাঁরা মাঠের দিকে বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পান। তবে ভয়ে আর কেউ ঘর থেকে বের হননি। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি মরদেহ ও দুটি মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তাঁরা পুলিশে খবর দেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (জনযুদ্ধ) ও জাসদ গণবাহিনীর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। গতকাল রাতে রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকায় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের গোপন বৈঠকের খবর পায় প্রতিপক্ষ। জাসদ গণবাহিনীর শীর্ষ নেতা কালুর নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, কালুর বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামে। নিহত হানিফের বিরুদ্ধে হত্যাসহ কমপক্ষে ১৩টি মামলা আছে।

শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের মতিয়ার রহমান বলেন, রাতে স্থানীয়রা গোলাগুলির শব্দ পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বলেন, ‘সোর্সের মাধ্যমে খবর পাই, গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এরপর নিশ্চিত হওয়া যায় ঘটনাস্থলে তিনজনের মরদেহ পড়ে আছে। লাশ উদ্ধার করে রাতেই থানায় আনা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর একই স্থানে পাঁচজনকে হত্যা করে চরমপন্থীরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতক ল র ত উপজ ল র মরদ হ ত নজন

এছাড়াও পড়ুন:

শৈলকুপায় প্রতিপক্ষ তিনজনকে হত্যার পর চরমপন্থীদের দায় স্বীকার

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর মাঠের মধ্যে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হানিফ আলীসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হত্যার বিষয়ে চরমপন্থী সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু দায় স্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন।

চরমপন্থী নেতা কালু পরিচয় দিয়ে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনাবাসীর উদ্দেশে জানানো যাচ্ছে, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারী, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিণাকুণ্ডুনিবাসী হানিফ তাঁর দুই সহযোগীসহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন। এই অঞ্চলের হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো, অন্যথায় আপনাদের একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।’

শৈলকুপা থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান জানান, রামচন্দ্রপুর মাঠের মধ্যে তিনজনকে গুলি করে মারা হয়েছে। বিস্তারিত পরে বলা যাবে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাতে এই এলাকায় তাঁরা একাধিক গুলির শব্দ শুনতে পান। পরে তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ইবি থানার পিয়ারপুর ও শৈলকুপায় রামচন্দ্রপুর গ্রামের মাঠের মধ্যে শ্মশানঘাট এলাকায় তিনজনকে গুলি করে হত্যার পর ফেলে রাখা হয়েছে। তাঁরা এগিয়ে গিয়ে দেখতে পান তিনজনের মৃতদেহ পড়ে আছে। পাশে তাঁদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল পড়ে আছে। যার নম্বর চুয়াডাঙ্গা ল ১২-০১২৩।

এলাকার বাসিন্দারা আরও জানান, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের হানিফ আলী, তাঁর শ্যালক লিটন হোসেন রয়েছেন। একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁরা সবাই চরমপন্থী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাঁদের কীভাবে মারা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শৈলকুপায় গুলিতে নিহত ৩: চরমপন্থি সংগঠনের বিরোধ নাকি বাঁওড় দখল, মিলছে না সূত্র
  • ঝিনাইদহে ট্রিপল মার্ডার: কে এই ‘চরমপন্থি’ নেতা হানিফ?
  • ৫ হত্যার ১৫ বছর পর একই স্থানে ৩ চরমপন্থিকে গুলি করে হত্যা 
  • ঝিনাইদহে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা, দায় স্বীকার করে চরমপন্থী সংগঠনের বার্তা
  • শৈলকুপায় তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার চরমপন্থির দায় স্বীকার
  • শৈলকুপায় ৩ জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা, দায় স্বীকার করে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা
  • শৈলকুপায় প্রতিপক্ষ তিনজনকে হত্যার পর চরমপন্থীদের দায় স্বীকার