বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি যেভাবে বদলে যাচ্ছে
Published: 22nd, February 2025 GMT
ভিন্নমাত্রার এক কর্মসূচি পালন করল বিএনপি। তিস্তা নদী রক্ষার জন্য উত্তরের ৫টি জেলার ১১টি স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এখন শুষ্ক মৌসুম। তিস্তা মৃতপ্রায়। সেই তিস্তা নদীর পাড়ের বালুকাময় চরে প্যান্ডেল, তাঁবু খাটিয়ে দুই দিন ধরে বিএনপির নেতা–কর্মীরা অবস্থান করেছেন। নদী রক্ষার জন্য জনসভা হয়েছে। দিনভর মানুষজন নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন। নেতাদের ভাষণ শুনেছেন। অভিনব এ ধরনের কর্মসূচি এর আগে তেমন দেখা যায়নি।
অবশ্যই দেশের নদ-নদী, পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ বিএনপি আগেও নিয়েছে। দলটি প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এমনটা আমরা দেখি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সারা দেশে ঘুরে ২৬ হাজার কিলোমিটার খাল খনন বা পুনরুদ্ধার করেছিলেন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেশে পলিথিন ও থ্রি–হুইলার বেবিট্যাক্সি নিষিদ্ধ করেছিলেন।
এবারের ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচি বিএনপির পরিবেশবান্ধব অবস্থানের কথাই মনে করিয়ে দেয়। বিশ্বের উদারপন্থী সামাজিক গণতন্ত্রী বা মধ্যপন্থী বামেরা সব সময় পরিবেশ, প্রকৃতিকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেয়। বিএনপিও তাদের মতোই সব সময় পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়েছে।
তবে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ নেহাতই পরিবেশ বা নদী রক্ষার কর্মসূচি ছিল না। এখানে রাজনীতিও আছে। এই সমাবেশ থেকে সরকারের প্রতি বার্তা দেওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে প্রতিবেশী ভারত ও চীনকেও বার্তা পাঠিয়েছে বিএনপি। বিএনপি ভালোভাবেই তিস্তা রক্ষার সঙ্গে নিজেদের কৌশলগত অবস্থানও পরিষ্কার করেছে। প্রথমত, উত্তরবঙ্গে জনসাধারণের সামনে জনস্বার্থ–সম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। তিস্তা উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এই তিস্তা নিয়ে ভারত সব সময় বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেছে। শুষ্ক মৌসুমে তারা পানি আটকে রেখে গোটা উত্তরবঙ্গে তিস্তা অববাহিকায় এক মরুময় পরিবেশের সৃষ্টি করে। আবার বর্ষায় পানি ছেড়ে দিয়ে সমগ্র অঞ্চল প্লাবিত করে সৃষ্টি করে দুর্ভোগ–দুর্দশা। এ নিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রত্যেক মানুষের মনে ক্ষোভ আছে।
বিএনপি মানুষের এই ক্ষোভকে ধারণ করে উত্তরবঙ্গে বসে কথা বলেছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে তিস্তা রক্ষার দাবি করেছে। বিএনপি বলেছে, লড়াই করেই তারা তিস্তার পানি নিয়ে আসবে। প্রয়োজনে তিস্তার পানির বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপনের কথা বলেছে বিএনপি। এর আগে, ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে গঙ্গার পানি ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে প্রত্যাহারের বিষয়টি তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন, যা ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে এবং পরবর্তী সময় ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার পানি ভাগাভাগির চুক্তি করে।
‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ সমাবেশ করে বিএনপি সেই নতুন কিছুই করল। একদিকে অহেতুক ভারতের সমালোচনা না করে ইস্যু ধরে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে সমালোচনা করেছে, অপর দিকে বিএনপির এই সমাবেশ প্রচলিত রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসারও বার্তা দেয়।এই ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপির আগামী দিনের পররাষ্ট্রনীতির কিছুটা আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। গত ৫ আগস্টের পর বিএনপির সতর্ক অবস্থান নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদের অনেকেই সমালোচনা করছিলেন। বিশেষ করে তাদের অভিযোগ ছিল যে বিএনপি ভারতের বিষয়ে নমনীয় আচরণ করছে। কিন্তু তিস্তার কর্মসূচিতে সরাসরি ভারতের নাম উল্লেখ করে কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির নেতারা। পরিষ্কার করেই তাঁরা বলেছেন, তিস্তার পানি দিতে হবে, সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হবে। বড় দাদার মতো আচরণ করা থামাতে হবে। তবেই বন্ধুত্ব হবে বলে বিএনপি জানিয়েছে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়—প্রয়োজন হলে বিএনপি তার এই পররাষ্ট্রনীতি পর্যালোচনা করবে বলেও সমাবেশে নেতাদের বক্তব্য থেকে আভাস পাওয়া যায়।
সমাবেশে বিএনপি তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। তবে নির্বাচিত সরকার ছাড়া এই মহাপ্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে বিএনপি উল্লেখ করেছে। বিএনপি সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও সবাই জানে যে তিস্তা নিয়ে চীনের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। ভারত বরাবরই এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। বিএনপি মহাপরিকল্পনার পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। ফলে বিএনপির দীর্ঘদিনের পুরোনো বন্ধু চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে, বিএনপি আবারও তার পুরোনো পররাষ্ট্রনীতিতে ফিরে যাচ্ছে।
তিস্তাপাড়ের ধু ধু চরগুলোতে লাখো মানুষের সমাবেশ হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বলা যায়, তিস্তা রক্ষার পাশাপাশি বিএনপি ওই অঞ্চলে বেশ বড়সড় একটি সমাবেশ করে ফেলল। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যখন ঢাকায় বসে জাতীয় নির্বাচন আগে না স্থানীয় নির্বাচন আগে বলে রাজনৈতিক বিতর্ক করছে, তখন বিএনপি সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। বিএনপি আরও এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে জনসাধারণের কাছে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।
একই সমাবেশে বিএনপি অনেক কিছু বলে ফেলল। নির্বাচন চাইল দ্রুততম সময়ে। ভারতের কঠোর সমালোচনা করল। চীনকে আস্থায় নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিল তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের। আবার তিস্তাপারের মানুষের জীবন ও সংস্কৃতি নিয়ে আয়োজন করল বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু তিস্তাপাড়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে বিএনপি জানিয়ে দিল, দেশের বৃহত্তম দল হিসেবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি তাদের অবদান ও সমর্থন থাকবে।
গত ছয় মাসে বিএনপিকে প্রতিপক্ষ ধরে যারাই দলটির সমালোচনায় নেমেছে, বিএনপি স্বভাবতই সেসবের উত্তর দিয়েছে, দিয়ে যাচ্ছে। কথার এই লড়াইয়ের চেয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় ইস্যু নিয়ে বেশি কথা বলা দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর। এখন রাজনীতি বদলে গেছে। মানুষ এখন নতুন কিছু দেখতে চায়। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ সমাবেশ করে বিএনপি সেই নতুন কিছুই করল। একদিকে অহেতুক ভারতের সমালোচনা না করে ইস্যু ধরে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে সমালোচনা করেছে, অপর দিকে বিএনপির এই সমাবেশ প্রচলিত রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসারও বার্তা দেয়।
● মারুফ মল্লিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব এনপ র অবস থ ন পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি যেভাবে বদলে যাচ্ছে
ভিন্নমাত্রার এক কর্মসূচি পালন করল বিএনপি। তিস্তা নদী রক্ষার জন্য উত্তরের ৫টি জেলার ১১টি স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এখন শুষ্ক মৌসুম। তিস্তা মৃতপ্রায়। সেই তিস্তা নদীর পাড়ের বালুকাময় চরে প্যান্ডেল, তাঁবু খাটিয়ে দুই দিন ধরে বিএনপির নেতা–কর্মীরা অবস্থান করেছেন। নদী রক্ষার জন্য জনসভা হয়েছে। দিনভর মানুষজন নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন। নেতাদের ভাষণ শুনেছেন। অভিনব এ ধরনের কর্মসূচি এর আগে তেমন দেখা যায়নি।
অবশ্যই দেশের নদ-নদী, পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ বিএনপি আগেও নিয়েছে। দলটি প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এমনটা আমরা দেখি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সারা দেশে ঘুরে ২৬ হাজার কিলোমিটার খাল খনন বা পুনরুদ্ধার করেছিলেন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেশে পলিথিন ও থ্রি–হুইলার বেবিট্যাক্সি নিষিদ্ধ করেছিলেন।
এবারের ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচি বিএনপির পরিবেশবান্ধব অবস্থানের কথাই মনে করিয়ে দেয়। বিশ্বের উদারপন্থী সামাজিক গণতন্ত্রী বা মধ্যপন্থী বামেরা সব সময় পরিবেশ, প্রকৃতিকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেয়। বিএনপিও তাদের মতোই সব সময় পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়েছে।
তবে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ নেহাতই পরিবেশ বা নদী রক্ষার কর্মসূচি ছিল না। এখানে রাজনীতিও আছে। এই সমাবেশ থেকে সরকারের প্রতি বার্তা দেওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে প্রতিবেশী ভারত ও চীনকেও বার্তা পাঠিয়েছে বিএনপি। বিএনপি ভালোভাবেই তিস্তা রক্ষার সঙ্গে নিজেদের কৌশলগত অবস্থানও পরিষ্কার করেছে। প্রথমত, উত্তরবঙ্গে জনসাধারণের সামনে জনস্বার্থ–সম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। তিস্তা উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এই তিস্তা নিয়ে ভারত সব সময় বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেছে। শুষ্ক মৌসুমে তারা পানি আটকে রেখে গোটা উত্তরবঙ্গে তিস্তা অববাহিকায় এক মরুময় পরিবেশের সৃষ্টি করে। আবার বর্ষায় পানি ছেড়ে দিয়ে সমগ্র অঞ্চল প্লাবিত করে সৃষ্টি করে দুর্ভোগ–দুর্দশা। এ নিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রত্যেক মানুষের মনে ক্ষোভ আছে।
বিএনপি মানুষের এই ক্ষোভকে ধারণ করে উত্তরবঙ্গে বসে কথা বলেছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে তিস্তা রক্ষার দাবি করেছে। বিএনপি বলেছে, লড়াই করেই তারা তিস্তার পানি নিয়ে আসবে। প্রয়োজনে তিস্তার পানির বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপনের কথা বলেছে বিএনপি। এর আগে, ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে গঙ্গার পানি ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে প্রত্যাহারের বিষয়টি তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন, যা ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে এবং পরবর্তী সময় ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার পানি ভাগাভাগির চুক্তি করে।
‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ সমাবেশ করে বিএনপি সেই নতুন কিছুই করল। একদিকে অহেতুক ভারতের সমালোচনা না করে ইস্যু ধরে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে সমালোচনা করেছে, অপর দিকে বিএনপির এই সমাবেশ প্রচলিত রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসারও বার্তা দেয়।এই ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপির আগামী দিনের পররাষ্ট্রনীতির কিছুটা আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। গত ৫ আগস্টের পর বিএনপির সতর্ক অবস্থান নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদের অনেকেই সমালোচনা করছিলেন। বিশেষ করে তাদের অভিযোগ ছিল যে বিএনপি ভারতের বিষয়ে নমনীয় আচরণ করছে। কিন্তু তিস্তার কর্মসূচিতে সরাসরি ভারতের নাম উল্লেখ করে কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির নেতারা। পরিষ্কার করেই তাঁরা বলেছেন, তিস্তার পানি দিতে হবে, সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হবে। বড় দাদার মতো আচরণ করা থামাতে হবে। তবেই বন্ধুত্ব হবে বলে বিএনপি জানিয়েছে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়—প্রয়োজন হলে বিএনপি তার এই পররাষ্ট্রনীতি পর্যালোচনা করবে বলেও সমাবেশে নেতাদের বক্তব্য থেকে আভাস পাওয়া যায়।
সমাবেশে বিএনপি তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। তবে নির্বাচিত সরকার ছাড়া এই মহাপ্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে বিএনপি উল্লেখ করেছে। বিএনপি সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও সবাই জানে যে তিস্তা নিয়ে চীনের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। ভারত বরাবরই এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। বিএনপি মহাপরিকল্পনার পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। ফলে বিএনপির দীর্ঘদিনের পুরোনো বন্ধু চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে, বিএনপি আবারও তার পুরোনো পররাষ্ট্রনীতিতে ফিরে যাচ্ছে।
তিস্তাপাড়ের ধু ধু চরগুলোতে লাখো মানুষের সমাবেশ হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বলা যায়, তিস্তা রক্ষার পাশাপাশি বিএনপি ওই অঞ্চলে বেশ বড়সড় একটি সমাবেশ করে ফেলল। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যখন ঢাকায় বসে জাতীয় নির্বাচন আগে না স্থানীয় নির্বাচন আগে বলে রাজনৈতিক বিতর্ক করছে, তখন বিএনপি সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। বিএনপি আরও এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে জনসাধারণের কাছে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।
একই সমাবেশে বিএনপি অনেক কিছু বলে ফেলল। নির্বাচন চাইল দ্রুততম সময়ে। ভারতের কঠোর সমালোচনা করল। চীনকে আস্থায় নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিল তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের। আবার তিস্তাপারের মানুষের জীবন ও সংস্কৃতি নিয়ে আয়োজন করল বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু তিস্তাপাড়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে বিএনপি জানিয়ে দিল, দেশের বৃহত্তম দল হিসেবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি তাদের অবদান ও সমর্থন থাকবে।
গত ছয় মাসে বিএনপিকে প্রতিপক্ষ ধরে যারাই দলটির সমালোচনায় নেমেছে, বিএনপি স্বভাবতই সেসবের উত্তর দিয়েছে, দিয়ে যাচ্ছে। কথার এই লড়াইয়ের চেয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় ইস্যু নিয়ে বেশি কথা বলা দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর। এখন রাজনীতি বদলে গেছে। মানুষ এখন নতুন কিছু দেখতে চায়। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ সমাবেশ করে বিএনপি সেই নতুন কিছুই করল। একদিকে অহেতুক ভারতের সমালোচনা না করে ইস্যু ধরে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে সমালোচনা করেছে, অপর দিকে বিএনপির এই সমাবেশ প্রচলিত রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসারও বার্তা দেয়।
● মারুফ মল্লিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক